করোনা ভাইরাস: সারা বিশ্বে জরুরি অবস্থা
৩১ জানুয়ারি ২০২০করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করল ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বা হু। বৃহস্পতিবার সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল বিবৃতি দিয়ে জানান, করোনা যাতে পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্যই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিকে বৃহস্পতিবার জার্মানিতে আরও একজনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু মিলেছে। ফলে জার্মানিতে এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ। ভারতেও ঢুকে পড়েছে এই মারাত্মক ভাইরাস৷ কেরালায় এক ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গিয়েছে। এই প্রথম ভারতে করোনা ভাইরাসের খোঁজ মিলল।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে হু যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারে, কয়েক দিন ধরেই তা নিয়ে জল্পনা চলছিল। বৃহস্পতিবার সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসাস বলেন, ''বিশ্ব স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে, বিশেষত, যে সমস্ত দেশ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় দুর্বল তাদের কথা চিন্তা করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হল। তবে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই।'' শুধু তাই নয়, তিনি জানিয়েছেন, জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হলেও আন্তর্জাতিক সফর কিংবা ব্যবসা বাণিজ্যে হু কোনও বিধি নিষেধের প্রস্তাব দেয়নি।
হু প্রস্তাব না দিলেও, বিভিন্ন দেশ চীনে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। অ্যামেরিকা অ্যাডভাইসরি দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে আপাতত সে দেশের নাগরিকদের চীনে না যাওয়াই ভাল। জার্মানিও নিজের দেশের নাগরিকদের চীন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে। যদিও তা সত্ত্বেও জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকানো যায়নি।
বুধবার পর্যন্ত জার্মানির বাভারিয়াতে ৪ জনের শরীরে এই ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গিয়েছিল। তাঁরা প্রত্যেকে একই সংস্থায় কর্মরত। বৃহস্পতিবার রাতে ওই একই অঞ্চলে আরও একজনের শরীরে করোনার জীবাণু মিলেছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হল ৫। জার্মান স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ওই ব্যক্তিও একই সংস্থায় কাজ করেন। বস্তুত, কিছু দিন আগে ওই সংস্থার বেশ কিছু কর্মী কোম্পানির সদর দফতরে একটি কর্মশালায় যোগ দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে চীন থেকে একজন এসেছিলেন। তাঁর মাধ্যমেই সকলের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ওই সংস্থার ১১০ জন কর্মীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, আক্রান্ত ৫ জনের অবস্থাই স্থিতিশীল।
ভারতেও এই প্রথম এক ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু পাওয়া গেল। কেরালার একটি হাসপাতালে আক্রান্তকে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তি চীনে পড়াশোনা করেন। কিছু দিন আগেই বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এর আগে কলকাতা, দিল্লি, হায়দরাবাদ এবং গোয়ায় বেশ কিছু ব্যক্তিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছিল। তবে কারও শরীরেই জীবাণু মেলেনি। চীনে এখনও বহু ভারতীয় আটক। শুক্রবার তাঁদের উদ্ধার করতে এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি বিশেষ বিমান চীনে পৌঁছনোর কথা। তবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সকলে বিমানবন্দরে পৌঁছতে পারবেন কি না, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাস ঘিরে চূড়ান্ত সতর্কতা জারি হয়েছে। গত আট দিনে চীন থেকে বাংলাদেশে ফিরেছেন প্রায় চার হাজার মানুষ।
চীনের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এখনও পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। আক্রান্ত কয়েক হাজার। চীনের সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, বেজিং, উহান-সহ অধিকাংশ শহর কার্যত বনধের চেহারা নিয়েছে। দোকানপাট বন্ধ। বাড়ি থেকে কাউকে বেরতে দেওয়া হচ্ছে না। সম্প্রতি চীন থেকে ফিরেছেন ভারতীয় ব্যবসায়ী আরিফ। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, সেখানে তাঁর বন্ধুরা জানিয়েছেন, সামান্য সর্দি কাশি হলেও চিকিৎসকেরা আইসোলেশন ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। গোটা দেশে চূড়ান্ত আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এ দিকে করোনা ভাইরাসের জেরে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। চীনের সঙ্গে অ্যামেরিকার বাণিজ্যিক যুদ্ধ থাকলেও, বহু মার্কিন কোম্পানি চীনের সঙ্গে ব্যবসা করে। বহু ইলেকট্রনিক এবং গাড়ি কোম্পানি চীন থেকে সস্তায় যন্ত্রাংশ কেনে। করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরে বহু সংস্থাই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, তিন সপ্তাহেই বাণিজ্য মহলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি যদি এমনই থাকে, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। এমনিতেই আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। তার উপরে এই ঘটনা চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে শিল্পপতিদের কপালে।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, ডিপিএ, এনডিটিভি)