করোনা ভাইরাস চীনে, স্বজনদের অপেক্ষা দেশে
২৯ জানুয়ারি ২০২০করোনা ভাইরাস একেবারে নতুন আতঙ্ক৷ এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেই অর্থে সারা বিশ্বেই নেই বা খুব বেশি নেই৷ তাই দিন যত যাচ্ছে, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে যত সংক্রমণের খবর, মৃত্যুর খবর আসছে, আতঙ্কের মাত্রা ততই বাড়ছে৷ এ পর্যন্ত অন্তত ছয় হাজার জন আক্রান্ত হয়েছেন৷ মারা গেছেন কমপক্ষে ১৩২ জন৷
চীনের এক কোটি ১০ লাখ মানুষের শহর উহানে প্রথম এই রোগটি ধরা পড়লেও, এখন আতঙ্ক শুধু ওই শহরে সীমাবদ্ধ নেই৷ শুধু উহান নয়, গোটা হুবেই প্রদেশকেই কঠোর প্রহরায় প্রায় অবরুদ্ধ করে রেখেছে চীন সরকার৷ সেই অঞ্চলে বাইরে থেকে কারো যাওয়া কঠিন, সেখান থেকে কারো বের হয়ে আসা প্রায় অসম্ভব৷ এমন ব্যবস্থা জরুরিই ছিল, কেননা অবাধ যাতায়াতের সুযোগ থাকলে ভাইরাসের চলাচলও অবাধ হয়ে সংকট বাাড়াবে৷
সংকট এখন এমন পর্যায়ে যে একে একে ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, জার্মানি, মরক্কো, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ক্যানাডা, রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস,নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, এমনকি বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারও নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা, পর্যবেক্ষন, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে৷
ভারত তো এত সতর্ক যে, দুই মাস আগে চীনে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিক শওকত হোসেনকে ঢুকতেই দেয়নি৷ দৈনিক প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী, ভিসা থাকা সত্ত্বেও করোনা ভাইরাস আতঙ্কের কারণে সোমবার আগরতলা ইমিগ্রেশন থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে শওকত হোসেনকে৷
করোনার প্রভাব বাংলাদেশে কতটা?
করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক দূর হতে দেরি হলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে৷ বিশেষ করে পদ্মা সেতু, পদ্মা সেতুর রেললাইন, পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার (রামু) রেললাইন, কর্ণফুলী টানেল এবং ঢাকা বাইপাস রোড উন্নয়ন প্রকল্প যে সাময়িক সমস্যায় পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই৷ কারণ, এসব প্রকল্পে অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন৷ চীনের নববর্ষ উদযাপন করতে তাদের প্রায় সবাই ইতিমধ্যে দেশে ফিরেছেন৷ কিছু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে নববর্ষের ছুটি বাড়িয়ে দিয়েছেন৷
বাংলাদেশে অবশ্য আরো অনেক চীনা নাগরিক কাজ করেন, অনেকে বেড়াতেও আসেন৷ নববর্ষের আনন্দ উদযাপনে তারাও দেশে ফিরেছেন৷ গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশ থেকে সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি চীনা নাগরিক নববর্ষ উদযাপন করতে পরিবার-পরিজনের কাছে গেছেন৷
গত দুই সপ্তাহে চীন থেকে ফিরেছেনও অনেকে৷ গণমাধ্যমের খবর বলছে, এ সময়ে চীন থেকে দুই হাজারেরও বেশি মানুষ বাংলাদেশে এসেছেন৷ তাদের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি এসেছেন অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে৷
চীনে ফেরার হিরিকের বিপরীতে আরেকটা চিত্রও দেখা যাচ্ছে৷ বাংলাদেশ থেকে যারা ব্যবসার কাজে চীনে যেতেন, তারা আপাতত যাচ্ছেন না৷ বেড়াতে যাওয়াও কমেছে৷
বাংলাদেশের উদ্যোগ কি পর্যাপ্ত?
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চীন থেকে বাংলাদেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে৷ তবে এই খবর দু'দিন আগের৷
আজকের খবর, করোনা ভাইরাস থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে যা যা করণীয় তা সবিস্তারে জানিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শিগগিরই একটা গাইডলাইন দেওয়া হবে৷
এছাড়া চীন থেকে আসা মানুষদের হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন স্থল ও নৌবন্দরে স্ক্যানার বসিয়ে স্ক্রিনিং করা হচ্ছে৷ ভাইরাস মোকাবিলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে৷ সংক্রমণ ধরা পড়লে দ্রত ব্যবস্থা নিতে কুর্মিটোলা হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে৷
এমন উদ্যোগ বা এর চেয়েও ভালো উদ্যোগ নিশ্চয়ই জাপান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ নিয়েছে৷ পাশাপাশি দেশের নাগরিকদের আপাতত চীন থেকে বের করার উদ্যোগটাও নিয়েছে জরুরি ভিত্তিতে৷ এমনকি মিয়ানমারও উহান থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীকে ফিরিয়ে এনে, ১৪ দিন তাদের পর্যবেক্ষনে রেখে, ঝুঁকিমুক্ত হলে তাদের সবাইকে আবার চীনে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফেলেছে৷
চীন বাংলাদেশেরও বন্ধুরাষ্ট্র৷ তাই নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগটা দ্রুত কার্যকর হবে বলেই আমরা আশা করি৷ তাহলে যে পরিবারগুলো এখন স্বজনদের জন্য মহাদুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন, তারা স্বস্তি পাবেন৷