‘রথযাত্রা’র ভয়ে বাংলা
২৬ নভেম্বর ২০১৮৭ ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রচার অভিযান শুরু করছে বিজেপি৷ পৌরাণিক রথের সাজে সাজানো তিনটি ভলভো বাস ঘুরবেপশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে৷ হতমান কংগ্রেস এবং হৃতবল বামপন্থিদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গের ওই ৪২ আসনের অন্তত ২২টি জেতার আশা করছে৷ এবং অসম, ত্রিপুরা হাতে আসার পর বিজেপি নেতৃত্ব যে এবার পশ্চিমবঙ্গ দখলে নেওয়ার জন্য তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে, সেটা ওই রথযাত্রার কর্মসূচিতেই স্পষ্ট৷ একটি রথ যাত্রা শুরু করবে সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসপ্রবণ জেলা বীরভূম থেকে৷ এই যাত্রা শুরু করাবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এবং এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীর পরেই দলের সবথেকে হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ৷ দ্বিতীয় রথযাত্রা শুরু করাবেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তের সাগরদ্বীপ থেকে৷ আর তৃতীয় একটি রথযাত্রা শুরু হবে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল৷ আর তিনটি রথযাত্রা যেখানে মিলিত হবে, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৩ জানুয়ারির সেই সমাপ্তি সমাবেশে হাজির থাকবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷
তিনটি রথেরই আলাদা বক্তব্য থাকবে৷ বীরভূমের রথ পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল র রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে, সাগরদ্বীপের রথ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংখ্যালঘু তোষণ নীতির প্রতিবাদে এবং কোচবিহারের রথযাত্রা উত্তর-পূর্ব ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের প্রতিবাদে৷ তিনটি রথেরই যাত্রাপথে ছোট ছোট সমাবেশের পরিকল্পনা আছে, যেখানে এই বিরোধিতার বক্তব্যই আরো নির্দিষ্টভাবে পেশ করবেন স্থানীয় বিজেপি নেতা থেকে শুরু করে অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা৷ সম্ভবত সেই বক্তব্যের কারণেই এটাকে ‘রথযাত্রা' বলে চিহ্নিত করায় আপত্তি জানালেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, এটার রথযাত্রা নাম দিয়েছে সংবাদমাধ্যম৷ কিন্তু ওঁরা এটাকে বলছেন ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা'৷ শমীকবাবুর কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত বিরোধী কণ্ঠস্বর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত৷ পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত অর্থে আইনের শাসন প্রশ্নচিহ্নের মুখে৷ সরকার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে, অসাংবিধানিক বিলও পাস করাচ্ছে৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৭% আসনে তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে৷ জয়ী প্রার্থীদের বোর্ড গঠন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে৷ সমস্ত স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে বর্তমান এই সরকার৷ স্বাভাবিকভাবেই, যেখানে গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত, বিরোধিতার অধিকার যেখানে লঙ্ঘিত হয়েছে, সেখানে আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই মুহূর্তে প্রতিবাদ করতে চাইছেন৷''
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সঙ্গত কারণেই বিজেপির এই কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ তার একটা বড় কারণ, ২০১৪ সালে সংসদীয় নির্বাচনের পর থেকেই এই রাজ্যে বিজেপির সমর্থন ক্রমশ বাড়ছে৷ পরবর্তীতে অসম এবং ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে বিজেপির জয়ও পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব ফেলেছে৷ কাজেই রাজ্যের তিন দিক থেকে তিনটি রথযাত্রার পিছনে সাধারণ মানুষের একাংশের যে সমর্থন থাকবে, সেটা সরকার আঁচ করছে৷ এ কারণে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, মন্ত্রীরা পথে নেমে এই রথযাত্রার বিরোধিতা করার কথা বললেও, সরকারের মনোভাব আপাতত এটাকে নির্বিবাদে হতে দেওয়া৷ কিন্তু রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট যে রথের রাস্তা আটকাবার কথা বলছে, তাতে হাঙ্গামা হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে৷বিজেপি সেই সমস্যা সম্পর্কে কতটা সচেতন?দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বললেন, তাঁর ধারণা কোনো সমস্যাই হবে না৷ কারণ, এটা একটা রাজনৈতিক তৎপরতা৷ নির্বাচনের আগে জনসংযোগের জন্য এরকম আন্দোলন হয়৷ এবং দিলীপ ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘‘সরকারের সঙ্গে রীতিমতো কথা বলে, অনুমতি নিয়ে (এটা) করছি৷ সরকারের দায়িত্ব শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সুরক্ষা দেওয়া৷ সরকার যদি না পারে, তখন আমাদের ভাবতে হবে৷''
ফলে, আপাতত ৭ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ২৩ পর্যন্ত বিজেপির এই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে একদিকে যেমন উত্তেজনা আছে, তেমনি আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে৷ তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ তিনি বলেছেন, কেউ এই যাত্রায় বাধা দেবে না, কারণ দিলে ওদেরই ক্ষতি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিওসম্ভবত একই কথা ভাবছেন যে, বাধা দিয়ে খামোকা বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচির গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়ার মানে হয় না!