কর্ণাটকের ক্ষমতা দখলের লড়াই
১১ মে ২০১৮নির্বাচনি প্রচার শেষ৷ এবার কর্ণাটকের মানু্ষের রায়ের অপেক্ষা৷ তবে গত কয়েকদিন ধরে ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য অত্যন্ত খারাপ খবর নিয়ে এসেছে একাধিক প্রাক নির্বাচনি জনমত সমীক্ষা৷ প্রায় সবকটি সমীক্ষা জানিয়েছে, কর্ণাটকের মানুষ বিজেপিকে সরকারে দেখতে চাইছে না৷ বরং একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে আসবে কংগ্রেস৷ তবে এককভাবে সম্ভবত ক্ষমতা দখল করতে পারবে না কংগ্রেস৷ প্রায় সবকটি সমীক্ষাই জানাচ্ছে, বিধানসভা হবে ত্রিশঙ্কু৷ সেক্ষেত্রে নির্ণায়ক শক্তি হবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার দল জেডিএস৷
এদিকে, এত সবের মধ্যে ভোটগ্রহণের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে একাধিক সংবাদমাধ্যমের জনমত সমীক্ষায় কোনো একটি দল সরকার গঠনে সক্ষম হবে না বলে দাবি করা হয়েছে৷ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে অবশ্য কংগ্রেসকেই এগিয়ে রেখেছে সবকটি সমীক্ষা৷ মোট ২২৩টি আসনের কর্ণাটকে কন্নড় চ্যানেল ‘পাবলিক টিভি'-র সমীক্ষা রিপোর্টে বলা হয়েছে, কংগ্রেস পেতে চলেছে ৮৯-৯৪, বিজেপি পাবে ৮৬-৯১ এবং জেডিএসের দখলে থাকবে ৩৮-৪৩টি আসন৷ ইন্ডিয়া টিভি-র চূড়ান্ত সমীক্ষা বলছে, বিজেপি পেতে পারে ৮৫, কংগ্রেস ৯৬, জেডিএস ৩৮ এবং অন্যান্যরা চারটি আসন পেতে পারে৷ এবিপি-লোকনীতির সমীক্ষা জানিয়েছে, বিজেপি ৮৪, কংগ্রেস ৯৭, জেডিএস ৩৭ এবং অন্যান্যরা চারটি আসন পেতে পারে৷ ইন্ডিয়া টুডে-কার্ভি ইনসাইটস-এর সমীক্ষায় উঠে এসেছে, কংগ্রেসের দখলে থাকতে পারে ৯০-১০১টি আসন৷ বিজেপি ৭৮-৮৬টি৷ জেডিএস ৩৪-৪৩টি আসন৷
টাইমস নাও-ভিএমআরের সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস পেতে চলেছে ৯১টি আসন, বিজেপি৮৯ এবং জেডিএস ৪০টি৷ কন্নড় চ্যানেলটির সমীক্ষা বলছে, রাজধানী শহর বেঙ্গালুরুতেই সবচেয়ে বেশি আসন পাবে কংগ্রেস৷ শহরের মোট ২৭টি আসনের মধ্যে কংগ্রেসের দখলে থাকবে ১৪টি৷ বিজেপি পেতে পারে ১২টি এবং জেডিএস একটি আসন৷ শনিবার ভোটগ্রহন কর্ণাটকে৷ ফল জানা যাবে মঙ্গলবার৷ ভাগ্য নির্ধারণ হবে মোট ২,৬৫৪ প্রার্থীর৷
বিভিন্ন জনমত সমীক্ষায় উঠে আসা রিপোর্টের সঙ্গে একমত রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী৷ তিনিও মনে করছেন, ত্রিশঙ্কুই হবে কর্ণাটকের ফল৷ তাঁর কথায়, ‘‘একদিকে আমরা তথ্য-প্রযুক্তিতে উন্নয়নের কথা বলছি৷ অন্যদিকে, ভোটের জন্য মন্দির-মসজিদে দৌড়চ্ছি৷ জাতপাতের রাজনীতি নিয়ে মেতে উঠেছি৷ বেঙ্গালুরুর মতো শহর, যা আইটি-র জন্য প্রসিদ্ধ সেখানে ধর্মকে আঁকড়ে ধরে ভোট বৈতরণী পার হতে চাইছে বিজেপি এবং কংগ্রেস উভয় দলই৷ দুঃখের বিষয় হলো, পাঁচের দশকে দেশের নির্বাচন যেমন জাতপাতের ওপর নির্ভরশীল ছিল, আজও আমরা তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারলাম না৷''
ভারতের দক্ষিণ অংশের এই রাজ্য জয় দিয়ে আগামী লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে থাকার প্রয়াস চালিয়েছে কংগ্রেস, বিজেপি উভয় দল৷ তাতে অন্যায় নেই, রাজনীতি মাত্র৷ জনসভা, পথসভা, রোড-শো থেকে মন্দির নেতাদের দর্শনে ভোটের হাওয়া বেশ উত্তপ্ত৷ মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রায় সমস্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী – সব বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব৷ মোদী ছাড়াও রাজ্যজুড়ে প্রচারে ছোটাছুটি করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা৷ উলটোদিকে, বিজেপি-কে সূচাগ্র জমি ছাড়তে নারাজ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ তিনিও বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে দিনে দশবার ‘বোমা' ফাটিয়েছেন৷ দলের ‘তারকা প্রচারক' হিসেবে ছিলেন সোনিয়া গান্ধী ও মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া৷
নিত্য নতুন কায়দায় বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বিদ্ধ করেছেন রাহুল৷ প্রচারের শেষদিনে বলেছেন, ‘‘দুর্নীতি ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে কর্ণাটকে কোনো প্রতিযোগিতা নেই৷ ওদেরই জয়৷ আমরা হাত নামিয়ে নিয়েছি৷'' উনন্নয়নের প্রসঙ্গে একটি গ্রাফিক্স তুলে ধরে বিজেপির সঙ্গে রাজ্যে উন্নয়নমূলক কাজের তুলনা টেনেছেন রাহুল৷ এক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর দাবি, ‘‘কোনো লড়াই নেই, এগিয়ে কংগ্রেসই৷''
নির্বাচনের আগে একাধিকবার কর্ণাটক রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে এসেছেন আম আদমি পার্টির নেতা সঞ্জয় বসু৷ কর্ণাটককে সেমিফাইনাল বলতে নারাজ তিনি৷ তাঁর যুক্তি, কর্ণাটকের পরেই আগামী নভেম্বরে ভোট হতে চলেছে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগঢ়ে৷ সেই হিসেবে কর্ণাটক নির্বাচনকে প্রি-সেমিফাইনাল বলা যেতেই পারে৷ তাঁর কথায়, ‘‘ত্রিপুরা জয়ের পর নরেন্দ্র মোদী এমন একটা ভাব দেখাচ্ছিলেন যেন দেশের আরও কোনো রাজ্যই বাদ দেবেন না৷ সেক্ষেত্রে বড় ধাক্কা খেতে হবে৷ কর্ণাটকের ভোটার অন্যান্য রাজ্যের মতো নয়৷ সেখানকার মানুষ অত্যন্ত সংবেদনশীল৷ তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কাকে ভোট দিতে চলেছেন৷ তবে অনেকের সঙ্গে কথা বলে যা জানা গেছে তা হলো, কর্ণাটকে এবার কোনো হাওয়া নেই৷ কেউই এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না৷ অবশ্য গত এক বছরে ভোটাদরের ‘ম্যানেজ' করতে সক্ষম হয়েছে কংগ্রেস৷ এক্ষেত্রে জিএসটি এবং নোট বাতিল বিজেপির বিপদ বাড়িয়েছে৷''
অন্যদিকে, জাতীয় স্তরে বিজেপির দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে তাদের সহযোগী দল শিবসেনা৷ শিবসেনার মুখপত্র সামনা-র সম্পাদকীয়তে কংগ্রেস সভাপতির ভূয়সী প্রশংসা করে বলা হয়েছে, ‘‘২০১৪-র রাহুল গান্ধী এবং বর্তমানের রাহুল এক নন৷ একর পর এক সমালোচনার মোকাবিলা করে দৃঢ় মানসিকতার লোক হয়ে উঠেছেন তিনি৷ ২০১৯ সালে তিনি বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন৷ গুজরাট ভোটের ফল থেকেই সেটা প্রমান হয়েছে৷'' তবে যাই হোক না কেন, বিজেপিই একক শক্তিতে কর্নাটকে সরকার গড়বে বলে দাবি করেছেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ৷ তাঁর কথায়, ‘‘২২৪ সদস্যের বিধানসভায় অন্তত ১৩০টি আসন পাবে বিজেপি৷ সরকার গঠনে কারও সমর্থনের প্রয়োজন হবে না৷''