দুর্নীতি তালিকার শীর্ষে কর্ণাটক
৩০ এপ্রিল ২০১৭রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, কংগ্রেস শাসনাধীন রাজ্যে দুর্নীতির হার অপেক্ষাকৃত বেশি৷ সরকারি পরিষেবা পেতে ঘুস দিতে হয়েছে কিনা বা ঐ জাতীয় দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়েছে কিনা এ বিষয়ে সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা কী ? এর ভিত্তিতে ভারতের ২০টি রাজ্যে এক জনসমীক্ষা চালায় সেন্টার ফর মিডিয়া স্টাডিজ নামে এক এনজিও৷ সংস্থার প্রকাশিত রিপোর্টে দক্ষিণী রাজ্য কর্ণাটক উঠে এসেছে দুর্নীতি তালিকার শীর্ষে৷
এক-তৃতীয়াংশ পরিবার স্বীকার করেছে, গত এক বছরে সরকারি পরিষেবা পেতে তাঁদের ঘুষ দিতে হয়েছে কিংবা অনুরূপ দুর্নীতির আশ্রয় নিতে হয়েছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, কর্ণাটকে এই হার ৭৭ শতাংশ৷ তারপর অন্ধ্রপ্রদেশে ৭৪ শতাংশ, তামিলনাড়ুতে ৬৮শতাংশ, মহারাষ্ট্রে ৫৭ শতাংশ, জম্মু-কাশ্মীরে ৪৪ শতাংশ এবং পাঞ্জাবে ৪২ শতাংশ৷
তবে এদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি মনে করেন যে, গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে নোট বাতিলের সময়ে ঘুস বা দুর্নীতির প্রবণতা অনেকটা কম৷ একটা আনুমানিক হিসেবে দেখা গেছে, ২০১৭ সালে ঘুস লেনদেনের পরিমাণ যেখানে ৬৩৫০ কোটি টাকা, ২০০৫ সালে সেটা ছিল ২০৫০০ কোটি টাকার মতো৷ গরিবী রেখার নীচে বসবাসকারী পাঁচ কোটি পরিবারকে সরকারি সাহায্য অনুদান পেতে ঘুস দিতে হয় মোট ৯০০ কোটি টাকা৷ ২০০৫ সালের রিপোর্টে বিহার ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্যগুলির প্রথমে৷
যেসব সরকারি পরিষেবায় ঘুষ না দিলে কাজ হয় না, তার মধ্যে প্রথমেই পড়ে সরকারি বণ্টনব্যবস্থা পিডিএস, বিদ্যুৎ এবং বিচার বিভাগীয়কাজে৷ সরকারি স্কুলে ভর্তি করতে কিংবা আদালতে মামলার দ্রুত শুনানির ব্যবস্থা করতে ঘুসের পরিমাণ দাঁড়ায় গড়ে পাঁচ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা৷ স্বাধীনতার ৭০ বছর পরেও দুর্নীতির শেকড় গেঁথে রয়েছে জনজীবনের প্রতিটি স্তরে৷ উপরতলা থেকে নীচের তলা অবধি৷
তবে রাজনৈতিক স্তরে দুর্নীতির বহর আকাশছোঁয়া৷ কংগ্রেস জমানায় কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলিতে নজীরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির মধ্যে উল্লেখযোগ্য, দিল্লি কমনওয়েলথ গেমসের আর্থিক কেলেঙ্কারি৷ যেখানে খরচের হিসেবে দেখানো হয় ৭০ হাজার কোটি টাকা৷ আসলে খরচ হয় এর অর্ধেক৷ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ব্যবস্থাপক কমিটির প্রধান এবং কংগ্রেসের বড় মাপের নেতা সুরেশ কালমাডিকে৷ তবে সব আর্থিক কেলেঙ্কারিকে ছাপিয়ে যায় সম্ভবত টু-জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি৷ ধরা পড়ে কংগ্রেস জোট সরকারের তত্কালীন টেলিকম মন্ত্রী এ. রাজা জেলও খাটেন৷ আছে বেসরকারি কোম্পানিকে অবৈধভাবে কয়লা খনি বন্টনের দুর্নীতি৷ উল্লেখ্য, সেই সময়ে কয়লা দপ্তরের দায়িত্ব ছিল প্রাক্তন কংগ্রেস প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং-এর হাতে৷
দুর্নীতি অন্যান্য রাজনৈতিক দলের জমানায় কম হয়নি৷ যেমন, উত্তরপ্রদেশে বহুজন সমাজ পার্টির ‘সুপ্রিমো', দলিত নেত্রী রাজ্যের তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে বসেই নিজের এবং দলের নেতার স্ট্যাচু বসাতে খরচ করেন কোটি কোটি টাকা৷ জন্মদিনে মিডিয়ার সামনে হাসিমুখে ছবি তোলেন দলিত সর্বহারা পার্টির মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী লক্ষ লক্ষ টাকার হীরের গয়না পরে৷
আজও তাঁর বিরুদ্ধে হিসেব বহির্ভূত আয়ের মামলা ঝুলছে আদালতে৷ বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী আরজেডি দলের লালু প্রসাদ যাদব৷ দুর্নীতির অভিযোগে ৬৩টি মামলা দায়ের করা হয় তাঁর বিরুদ্ধে৷ যার শীর্ষে আছে ৯৫০ কোটি টাকার পশু খাদ্য কেলেঙ্কারি৷ সরকারি তহবিল তছরুপের অভিযোগে জেল খাটেন তিনি৷ আগামী আট বছর তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবেন না৷ আছেন উত্তর প্রদেশের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সমাজবাদী পার্টির মুলায়েম সিং যাদব৷ তাঁর বিরুদ্ধেও হিসেব বহির্ভূত আয়ের মামলা রয়েছে৷ অবৈধভাবে নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা উপার্জনের অভিযোগ৷
রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির তালিকা দীর্ঘ৷ দক্ষিণী রাজ্যগুলির দুর্নীতির তালিকায় প্রথমে আছেন তামিলনাড়ুর সদ্য প্রয়াত এআইএডিএমকে দলের মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা এবং তাঁর সহচরী শশিকলা৷ শশিকলা বর্তমানে জেলে আছেন৷ থাকতে হবে আরও দশ বছর৷ এডিএমকে দলের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেন৷
কর্ণাটকের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নাকি জমি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত৷ নিজের ছেলেকে কম দামে জমি পাইয়ে দিতে সাহায্য করেছিলেন৷ সেই জমি তাঁর ছেলে ২৫ গুণ দামে বিক্রি করেন, এমনটাই অভিযোগ ওঠে৷ আছে এককালীন কংগ্রেস নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পরে ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা শারদ পাওয়ার, যাঁর নাম কোটি কোটি টাকার স্ট্যাম্প পেপার এবং গম আমদানি কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত৷ হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওম প্রকাশ চৌথালা শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে দোষী সাব্যস্ত হয়ে এখন দিল্লির তিহার জেলে৷ ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী মধু কোডার বিরুদ্ধে চার হাজার কোটি টাকার আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ৷ রাজ্যের খনি সম্পদের অবৈধ লিজ দিয়ে কোটি কোটি টাকা কমিশন নিয়ে সেই টাকা বিদেশে পাচার করেন, এমন অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত৷
তবে সাধারণভাবে যেটা বলা হয়, তা হলো, বর্তমানে ১৭টি রাজ্য বিজেপি-শাসিত৷ সেই তুলনায় কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিতে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় দুর্নীতি বেশি৷
ওপরতলার দুর্নীতির রেশ নীচু তলাকেও প্রভাবিত করেছে৷ যেমন, কেনাকাটায় পাকা রসিদ না দিয়ে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা৷ ঘুস দিয়ে জমি মাফিয়াদের রমরমা যথারীতি চলছে৷ সেখানে রাজনৈতিক বাছবিচার নেই. কথায় কথায় উঠে আসে পুলিশের নাম৷ জাতীয় চরিত্রে দুর্নীতির সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে এর হাত থেকে নিস্তার নেই৷