ভারতে সাধারণ নির্বাচন
২৮ মার্চ ২০১৪আগামী ৭ই এপ্রিল থেকে পাঁচ সপ্তাহ ধরে সংসদের ৫৪৩টি আসনের জন্য যে ভোট-পর্ব শুরু হচ্ছে, তার সমগ্র নির্বাচনি প্রক্রিয়ার জন্য খরচের বহর হবে ৩০ হাজার কোটি টাকার মত৷ এই বিপুল অর্থ সংগৃহীত হয় কী ভাবে, কারা দেয়, কী ভাবে দেয় সেটা বেশ ধোঁয়াটে অস্পষ্ট৷ কোনো স্বচ্ছ কাঠামো বা মাপকাঠি নেই৷ সেই সুযোগে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সব লেনদেন হয় টেবিলের নীচে কালো টাকায়, বলেছে এক দুর্নীতি-বিরোধী সংগঠন৷
এই বিপুল পরিমাণ ব্যয় নির্বাচন কমিশনের অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে বহুগুণ বেশি৷ নির্বাচন কমিশন অনুমোদিত প্রার্থী পিছু ব্যয় ধরা হয় সংসদীয় আসনের জন্য মোটামুটি এক কোটি টাকা৷ এই বাড়তি টাকার একটা মোটা অংশ আসে রিয়েল এস্টেট, নির্মাণ শিল্প, আবাসন প্রকল্প ও কনট্র্যাকটারি কোম্পানিগুলির কাছ থেকে হিসেব বহির্ভুতভাবে৷ সব রাজনৈতিক দলগুলিকেই কমবেশি দেয়া হয়ে থাকে, তবে এর সিংহভাগ যায় সেইসব বড় বড় জাতীয় দলগুলির তহবিলে, ভোটের পর যাদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা থাকে বেশি৷ কারণটা সহজবোধ্য৷ এই ধরনের কোম্পানিগুলির ব্যবসা বা কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে হাজার রকম সরকারি অনুমতি ও ছাড়পত্র৷ যেমন জমি অধিগ্রহণ, পরিবেশ ছাড়পত্র ইত্যাদি৷ নির্মাণ কনট্র্যাক্ট পেতেও লবি দরকার হয়৷
তাই তাকালেই ইদানিং চোখে পড়বে নির্মাণ শিল্পের ভারি ভারি ক্রেন, মাটি কাটার যন্ত্রপাতি, ড্রিলিং মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির আওয়াজ স্তব্ধ৷ একদিকে পার্ক করা আছে৷ কাজকর্ম সাময়িকভাবে বন্ধ৷ খরচ করার টাকা কোম্পানিগুলি যুগিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলির প্রচার অভিযানের ভাঁড়ারে৷ বলা হচ্ছে কাজ বন্ধ, কারণ আর্থিক মন্দা৷ ভোটের সময় রাজনৈতিক দলগুলিকে অবৈধভাবে টাকা দেয়াটা তাদের এক ধরনের বিনিয়োগ বলা যেতে পারে৷ অতীতের নির্বাচনি অভিজ্ঞতা থেকে বিশ্লেষকরা মনে করেন, রিয়েল এস্টেট ও নির্মাণ শিল্প রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রচার অভিযানে টাকা দেবার প্রস্তাব দেয়৷ অনেক সময় তারা সরাসরি নগদ টাকা দেবার পরিবর্তে পরিষেবা খরচ মেটাতে চায়৷ যেমন ভোটের প্রচারে গাড়ি ও বিমান ভাড়া, পোস্টার ছাপানো ইত্যাদি৷ তবে হ্যাঁ, কিছু কোম্পানি আছে, যারা ঘোষিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিয়ে থাকে নির্বাচনকালে৷
বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী প্রধান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতিকে নির্বাচনি ইস্যু করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ভোট বাক্সের দিকে তাকিয়ে৷ কিন্তু এমন বহু প্রমাণ আছে, যেখানে অন্য সব দলও প্রচার অভিযানে অবৈধ অর্থ ব্যয়ে পিছিয়ে নেই৷ নির্বাচনি অর্থ ব্যয়ে বেশি লাভবান হয় ছোটোখাটো ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীরা আর বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলি৷
নির্বাচনি ব্যয়ে কালো টাকার খেলা বন্ধ করতে নির্বাচন কমিশন চোখ বুজে নেই৷ প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে অর্থনৈতিক অপরাধ দমন শাখাকে কাজে লাগিয়েছে৷ বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলির ওপর নগদ টাকা বহনের ওপর চাপিয়েছে নিষেধাজ্ঞা৷ মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় প্রতি প্রার্থীকে স্থাবর-অস্থাবর পরিসম্পদের লিখিত ঘোষণাপত্র জমা দিতে হয় নির্বাচন কমিশনের কাছে৷ কিন্তু তাতে প্রার্থীর পুরো খরচের হিসেব ধরা পড়েনা৷ অর্থের বিনিময়ে ভোট কেনার দিকে কড়া নজর রাখা হয়েছে৷ কিন্তু তাতে কতটা কাজ হবে বলা মুশকিল৷