মোদীকে নিয়ে মোহভঙ্গ?
২৬ মার্চ ২০১৪এর পরিণাম কী হতে পারে ?
নির্বাচনি ফলাফলে ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসবে কিনা সেটা পরের কথা, কিন্তু দলের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী এখন থেকেই যেভাবে ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছেন, তাতে দলের মধ্যে অসন্তোষ আর চাপা থাকছে না৷ তা সে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন হোক বা দলের প্রবীণ নেতাদের প্রান্তিক করে রাখা হোক কিংবা প্রচার অভিযানের স্লোগান হোক বা বিজেপিতে নতুন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি হোক – সবই হচ্ছে মোদীর অঙ্গুলি হেলনে৷
কথিত এই অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের ফলে বিজেপির নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখান বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংয়ের বাসভবনের সামনে৷ বিক্ষোভের আঁচ পড়ে নেতৃত্বের শীর্ষস্তরে৷ অসন্তোষ নিরসনে দলের নেতৃত্বকে তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত পালটাতে হয় অনেক ক্ষেত্রে৷ মোদীর আপত্তিতে রামসেনা দলের প্রধান প্রমোদ মুতালিকে দলে নেবার পর মোদীর আপত্তিতে তাঁর সদস্যপদ বাতিল করা হয়৷ উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে ম্যাঙ্গালোরে একটি পাবে ভাঙচুর চালিয়ে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন তিনি৷ এখানেই শেষ নয়, মোদীর নির্বাচনি কেন্দ্র পবিত্র শিব মন্দির শহর বারাণসীতে ‘নমো নমো শিবায়ঃ' মন্ত্রের অনুকরণে মোদী কেন্দ্রিক দলীয় প্রচারে ‘নমো নমো মোদী' স্লোগানে দলের একাংশে ঘোরতর আপত্তিতে তড়িঘড়ি সেই স্লোগান তুলে নেয়া হয়৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদীকে ঘিরে দল কার্যত দ্বিধাবিভক্ত৷
বিজেপির প্রবীণ এবং ওজনদার নেতা যশবন্ত সিং দলের মনোনয়ন না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে রাজস্থানের বাড়মেড় কেন্দ্র থেকে দাঁড়াচ্ছেন৷ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশবন্ত সিং মনোনয়ন না পাওয়ায় অসন্তোষ জানিয়েছেন সংসদের নিম্নসভায় দলীয় নেত্রী সুষমা স্বরাজ৷ বর্ষীয়ান নেতা দলের এককালীন স্তম্ভ লালকৃষ্ণ আডবানিকে যেভাবে দলের মধ্যে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৯৯১ থেকে গুজরাটের গান্ধীনগর সংসদীয় কেন্দ্র থেকে জিতে আসা আডবানি তাঁর পুরানো কেন্দ্র থেকে না দাঁড়িয়ে মধ্যপ্রদেশের ভোপাল কেন্দ্র থেকে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নেন৷ শেষপর্যন্ত অবশ্য দলের অনুনয় বিনয়ে তিনি ফের গান্ধীনগর থেকেই দাঁড়াতে রাজি হন৷ কেন তিনি বেঁকে বসেছিলেন? তাঁর মনে হয়েছে, তাঁকে প্রান্তিক করে রাখার পেছনে মোদীর হাত আছে৷ কারণ আডবানির মোদী বিরোধিতা অজানা নয়৷
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, মোদী এখন থেকেই নিজের টিম বানাতে চাইছেন, যেখানে মোদী-বিরোধীদের জায়গা সীমিত৷ এটা তাঁর একনায়ক মানসিকতার প্রতিফলন, যেটা দলের একাংশের মতে বিজেপির অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যের পরিপন্থি৷ এই ‘নমো নমো' নাটক, সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্টাইল এবং মোদীর ঔদ্ধত্যের ভাব দলের ভাঙন ত্বরান্বিত করবে বলে মন্তব্য করেন ক্ষুব্ধ যশোবন্ত সিং৷
সর্বশেষ জনমত সমীক্ষা বলছে, বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবেনা, অন্য দলের সঙ্গে জোট সরকার গঠন করতে হবে৷ কাজেই দলে এবং সরকার পরিচালনায় তাঁকে সকলকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে৷ না পারলে সংকট ঘনাতে দেরি হবে না৷ যদিও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মোদী অন্যদের তুলনায় এগিয়ে আছে অনেকটা৷
দলের অন্তর্কলহ সম্পর্কে বিজেপি সহ-সভাপতি মুখতার আব্বাস নাখভি বলেন, ভোটের আগে এমনটা হয়েই থাকে, এটা নতুন কিছু নয়৷ সব ঠিক হয়ে যাবে৷ শক্ত হাতে হাল ধরে মোদী দলের ঐক্য কতটা ধরে রাখতে পারবেন সেটা ভবিষ্যতই বলবে৷