1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ব্যালট বনাম বুলেটের লড়াই

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
১৩ নভেম্বর ২০১৮

ছত্তিশগড় বিধানসভার ৯০টি আসনের মধ্যে প্রথম দফার ভোট হয় সোমবার৷ সবক'টিই মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায়৷ অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা সত্ত্বেও বিস্ফোরণ ও মাওবাদীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলির লড়াই এড়ানো যায়নি৷

https://p.dw.com/p/389qp
Indien Bihan Wahlen
ছবি: picture-alliance/dpa

ছত্তিশগঢ় বিধানসভা ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল মাওবাদীরা৷ তারপরও সোমবার রাজ্য বিধানসভার মোট ৯০টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসনের ভোট হয় মাওবাদী উপদ্রুত এলাকাগুলিতে৷ উপজাতি প্রধান ঐ সব জঙ্গল এলাকা মাওবাদীদের শক্ত ঘাঁটি বলে চিহ্নিত৷ ভোটের কয়েকদিন আগে কম করে আধ ডজন আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা৷ তাতে মারা যায় সীমান্ত নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সাব-ইন্সপেক্টর, আহত হন আরেকজন নিরাপত্তা কর্মী৷মাওবাদীরা জায়গায় জায়গায় পোস্টার সেঁটেহুঁশিয়ারি দেয় – যাঁরা ভোট দিতে যাবে তাঁদের যে আঙুলে ভোট দেবার কালি চিহ্ন থাকবে, সেই আঙুল কেটে ফেলা হবে৷ ভোটের দিনও একটি ভোটকেন্দ্রের অদূরে বোমা বিস্ফোরণ হয়৷ অন্য একটি ভোটকেন্দ্রের পাশ থেকে তিনটি আইইডি বিস্ফোরক উদ্ধার করে কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ৷ সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে বম্ব স্কোয়াড৷ ভোট চলাকালীন অন্য একটি কেন্দ্রে মাওবাদীদের সঙ্গে দীর্ঘ গুলির লড়াই চলে নিরাপত্তা বাহিনীর৷ নিকেশ হয় পাঁচ মাওবাদী৷ আর পালটা হামলায় গুরুতর জখম হয় কোবরা কমান্ডো বাহিনীর দুই জওয়ান৷

আতঙ্ক ও উত্তেজনার আবহেও জীবন বাজি রেখে ভোট দেন ৭০ শতাংশের মতো ভোটার৷ এর আপাত কারণ ৩১ লাখ ভোটারের জন্য অভূতপূর্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা৷ প্রায় সোয়া লাখ নিরাপত্তা জওয়ান মোতায়েন করা হয় এলাকায়৷ আকাশপথে মাওবাদীদের গতিবিধির দিকে নজর রাখতে ব্যবহার করা হয় ২০টি দ্রোন এবং সেনা হেলিকপ্টার৷ অনেকে ভোট দেবার বিপদ অগ্রাহ্য করতে পারেনি৷ তাঁরা মনে করেন, ভোট শেষ হলে চলে যাবে এইসব নিরাপত্তা জওয়ান৷ তখন মাওবাদীদের হাত থেকে বাঁচাবে কে? গণতন্ত্র? ওটা মাথায় থাক৷ ওটা খায় না মাখে, সে সম্পর্কেও স্পষ্ট ধারণা নেই এই আদিবাসী জনজাতি ভোটদাতাদের৷

‘কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়’

সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাওবাদীদের এই দাপটের কারণ কী? উগ্র বামপন্থিরা আধা সামরিক বাহিনীর চাপে আশ্রয় নেয় জঙ্গল এলাকার উপজাতি অঞ্চলে৷ উপজতিদের মগজ ধোলাই করে জনজাতিদের দলে ভেড়ায়৷ ট্রেনিং দেয় গেরিলা যুদ্ধে৷ পরিবর্তন আসে মাওবাদী নেতৃত্বেও৷ মাওবাদীদের বিভিন্ন শাখা এক হয়ে ২০০৪ সালে নাম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী)৷ শুরু করে তথাকথিত বিপ্লবী রাজনৈতিক আন্দোলন৷ এই অবৈধ আন্দোলন ধীরে ধীরে জায়গা করে নেয় ভারতের মধ্য ও উত্তর-মধ্য অঞ্চলে, যা ‘লাল করিডোর' নামে পরিচিত৷

অন্যদিকে, পাঁচটি রাজ্য বিধানসভা ভোটের জয়-পরাজয় নিয়ে আগাম জল্পনা শুরু হয়েছে পর্যবেক্ষক মহলে৷ তাঁদের মতে, এটা নাকি আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনের সেমিফাইনাল৷ পাঁচটি রাজ্য ছত্তিশগঢ়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা এবং মিজোরামের মোট সংসদীয় আসন সংখ্যা ৮৩টি৷ তেলেঙ্গানায় শাসকদল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি এবং মিজোরামে কংগ্রেস৷ বাকি তিনটি রাজ্যে শাসকদল বিজেপি৷ ছত্তিশগঢ়ে মায়াবতীর বিএসপি এবং জনজাতি নেতা অজিত যোগীর নব গঠিত জনতা কংগ্রেস বিজেপিকে হারাতে জোট বেধেঁছে৷ এই জোট উপজাতি ভোট টানবে বলে মনে করা হচ্ছে৷

পাঁচটি রাজ্যের চলতি বিধানসভার ফলাফলকে ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের সেমিফানাল বলা যায় কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় ডয়চে ভেলে বললেন যে তিনি তা মনে করেন না৷ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়৷ আলাদা৷ বিভিন্ন বিরোধী দলগুলির মহাজোটের কোনো ছাপ এখানে দেখা যাচ্ছে না৷ চলতি ভোটের ফলাফল বিজেপির পক্ষে বা বিপক্ষে থাকতে পারে৷ কিন্তু আগামী বছরের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট কতটা জোরদার হবে, তার ওপরে নির্ভর করছে সব কিছু৷ বিরোধী দলগুলি যদি এককভাবে লড়ে, তাহলে বিজেপির অসুবিধা হবার কথা নয়৷

ভারতীয় রাজনীতিতে অতি সরলীকরণ বা বিশ্লেষণ হলো, এই ভোটে বিজেপি এখানে হেরে গেল, তাতে বিজেপি পরেরবারেও হেরে যাবে সেটা আমার মনে হয় না৷ বড়জোর একটা ইঙ্গিত হলেও হতে পারে৷ ভারতের রাজনীতি অনেক বদলে গেছে৷ অ্যান্টি-বিজেপি জোট কতটা জোরদার হবে সেটাই আসল কথা৷ সেটার ওপরই নির্ভর করছে আগামী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল৷ রাজ্য বিধানসভার ফলাফল যদি বিজেপির পক্ষে নেতিবাচক হয়, তাহলে কোথায় তারা কমজোর সেটা শুধরে নেবার একটা সুযোগ পাবে বিজেপি, ডয়চে ভেলেকে বললেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানি প্রতীপ চট্টোপাধ্যায়৷ পাশাপাশি এটাও সত্যি যে কংগ্রেস বা অন্য বিরোধী দল নিজের জোরে বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না৷ যদি ইউনাইটেড ফ্রন্ট গঠন করে, তাহলে ছবিটা হয়ত বদলে যেতে পারে৷ কাজেই চলতি বিধানসভা নির্বাচনি ফলাফল জাতীয় নির্বাচনের সেমিফাইনাল নয়৷ বরং জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলির কর্ম-কৌশলের সেমিফাইনাল৷ ছত্তিশগঢ়ে বাকি ৭২টি আসনের ভোট ২০শে নভেম্বর৷ অন্য চারটি রাজ্য বিধানসভার ভোট ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে৷ ফলাফল ১১ই ডিসেম্বর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য