1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মাওবাদী সন্দেহে বিদ্বজ্জন আটক, দেশজুড়ে প্রতিক্রিয়া

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৯ আগস্ট ২০১৮

বিদ্বজ্জনদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে ভারত জুড়ে৷ কবি, সাহিত্যিক, লেখক থেকে আইনজীবী কেউ বাদ যায়নি৷ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে বুদ্ধিজীবী মহল এবং মানবতাবাদী সংস্থা৷

https://p.dw.com/p/33zNg
ছবি: AFP/Getty Images

পুলিশের ধরপাকড়ের পর এক যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে বিজেপি সরকারের নিন্দা করা হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিকে অঘোষিত জরুরি অবস্থা বলে অভিহিত করেছেন লেখিকা অরুন্ধতী রায়৷

মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার অভিযোগ তুলে যাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে ইউপিএর (আনলফুল অ্যাকটিভিটিজ প্রিভেনশন অ্যাক্ট) ধারা প্রয়োগ করা হয়েছে৷ আইনের এই ধারায় মামলা দায়ের করার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে সমাজকর্মী ও মানবতাবাদী সংস্থাগুলি৷ কারণ, এই ধারা সাধারণত প্রয়োগ করা হয় সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে৷ কোনো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রবিরোধী মনে করলে সেইসব সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের যে-কোনো সদস্যকে গ্রেপ্তার করতে পারে পুলিশ৷ এদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকার প্রমাণ আছে বলে পুনে পুলিশের দাবি৷

সমাজ কর্মী ও মানবতাবাদীকে গ্রেপ্তার করাকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আর্জি জানান রোমিলা থাপারসহ চারজন৷ কিন্তু শী্র্ষ আদালত এই গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করে৷ পাশাপাশি, সুপ্রিম কোর্ট এটাও বলে যে, গণতন্ত্রে বিরুদ্ধমত হলো প্রেশার কুকারের সেফটি ভালভের মতো, যেটা না থাকলে প্রেশার কুকার ফেটে যাবে৷ বামপন্থি দলগুলি দিল্লিতে এক প্রতিবাদ সভা ডেকেছে৷ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই ধরনের গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে মহারাষ্ট্র পুলিশকে চিঠিও দিয়েছে৷

ধীরাজ সেনগুপ্ত

এই প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সংগঠনের জেনারেল সেক্রেটারি ধীরাজ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘এই ধরনের অভিযান যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, বলা মুশকিল৷ তবে ভীমা-কোরেগাঁও ঘটনা যে সরকারের ওপর যথেষ্ট আঘাত হেনেছে, সেটা প্রমাণিত৷ উপজাতিদের মাওবাদী তকমা দিয়ে সরকার যে তাদের কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, আপাতত সেটাই মনে হচ্ছে৷ আগামী নির্বাচনের আগে এইসব দলিত আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন যদি একজোট হয়, তাহলে সরকার বিপদে পড়বে ভেবেই এই কৌশল নিয়েছে৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘তাঁদের মাওবাদী প্রতিপন্ন করতে পারলে তাঁদের মুখবন্ধ করা সহজ হবে৷ এটা পরিষ্কার৷ ১৯৭৫ সালে যেভাবে পর পর হামলা হতো, পর পর গ্রেপ্তার করা হতো, এটাকে সম্ভবত তারই একটা সূচনা-পর্ব মনে করা যেতে পারে৷ এরপর বিরোধী নেতারাও যে আক্রান্ত হবেন না, তার নিশ্চয়তা নেই৷ বলা যায়, জরুরিকালীন অবস্থা৷ মোদী সরকার চাইছেন হিন্দু ভোটের মেরুকরণ৷ সেটা হচ্ছে না৷ সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত মানুষ মেনে নিতে পারছে না৷ সরকার জোর করে চাপানোর চেষ্টা করলে আমজনতা থেকে সরকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে৷''

বিদ্বজ্জনদের গ্রেপ্তারের উপর সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ না দেওয়া প্রসঙ্গে গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির জেনারেল সেক্রেটারি ধীরাজ সেনগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘ভারতে ক্রিমিনাল জাস্টিস সিস্টেমের মান নিম্নমুখী হচ্ছে৷ এজন্য ভারতকে বিশ্বের কাছে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়৷ নিবর্তন আটক আইন দেশে আছে৷ কিন্তু সরকার বিরোধীদের ভোগাতে সেই আইনের সুযোগ নিচ্ছে৷ বিরোধীদের আটক করা যাবে৷ কয়েক বছর জেল খাটার পর দেখা গেল পুলিশ তাঁর অপরাধ প্রমাণ করতে পারল না৷ সে ছাড়া পেয়ে গেল৷ কিন্তু সরকারের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলো৷ তাঁকে আটক রাখা গেল৷ ভীমা-কোরেগাঁও ঘটনার কি উপযুক্ত তদন্ত হয়েছিল ? মনে হয় না৷''

কিন্তু বিদ্বজ্জনদের বিরুদ্ধে কেন এই ধারা? এই বছরের জানুয়ারি মাসে মহারাষ্ট্রের পুনের কাছে ভীমা কোরেগাঁও-এ দলিত ও উচ্চবর্ণের মারাঠি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বড় রকম সংঘর্ষ হয় দলিতদের বিজয় দিবস অনুষ্ঠানে৷ সেই ঘটনার পেছনে মাওবাদীদের হাত ছিল বলে মহারাষ্ট্র পুলিশের অভিযোগ৷ তদন্তে নেমে পুলিশ দেশের বিভিন্ন শহরে ধরপাকড় শুরু করে৷ গ্রেপ্তার করে অরুণ ফেরেরা, তারাভারা রাও, গৌতম নওলাখা, বার্মন গনঞ্জালভেস, সুধা ভরদ্বাজের মতো কবি, লেখক এবং আইনজীবীকে৷ তাঁরা নাকি মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলিত ও উচ্চবর্ণ মারাঠি হিন্দুদের গন্ডগোলে উসকানি দিয়েছিলেন৷ রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে দমননীতির অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই৷

বুকার পুরস্কার পাওয়া বিশিষ্ট লেখিকা অরুন্ধতী রায় ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটা যেন অঘোষিত জরুরিকালীন অবস্থা৷ বিদ্বজ্জনদের বাড়িতে বাড়িতে হানা দেওয়া হচ্ছে৷ জেলে পোরা হচ্ছে৷ এটা দেশের গণতন্ত্র এবং সংবিধানের মূলে কুঠারাঘাত করা৷ এই ধরনের পরিকল্পিক অভিযান এবং জনগণের দৃষ্টি অন্য পথে চালিত করার নাটক চলবে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত৷ ওদের উচিত গো-হত্যার নামে যাঁরা গণপিটুনি দিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, হত্যায় উসকানি দিচ্ছে, তাঁদের জেলে পোরা৷'' বিশিষ্ট আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ মনে করেন, ‘‘ফ্যাসিবাদ ফণা তুলছে৷ সরকারের বিরদ্ধে মানবাধিকার নিয়ে কথা বললেই তাঁকে ধরা হবে৷ বিরুদ্ধ মতবাদ বর্তমান মোদী সরকারের কাছে অসহ্য৷ এটা জরুরি অবস্থা ছাড়া আর কী?''

তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভয়-ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি না করে সরকারের উচিত হবে স্বাধীন মত প্রকাশের, সভাসমিতি আয়োজনের এবং গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার সুযোগ দেয়া৷

সরব হয়েছেন রাজনৈতিক নেতারাও৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটারে তোপ দেগেছেন৷ তাঁর মতে, দেশে একটাই এনজিও চলছে, সেটা হল রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ৷ বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী বলেছেন, ‘‘ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ দলিতদের হয়ে সরকরের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷ এটা চলতে দেওয়া যায় না কোনোমতেই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য