বিজেপির উত্থানে ‘বাংলাদেশিদের’ ভূমিকা!
১৭ মে ২০১৮পশ্চিমবঙ্গে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ভোটের ব্যালট গণনা শুরু হয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে, চলবে সম্ভবত সারা রাত৷ কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ, তিন স্তরেই যে তৃণমূল কংগ্রেস এখনও প্রধান এবং কার্যত অপ্রতিরোধ্য রাজনৈতিক শক্তি, তা নিয়ে এখন কোনও সংশয় নেই৷ কিন্তু গ্রাম পঞ্চায়েত পর্যায়ে দ্বিতীয় প্রধান শক্তি হিসেবে উত্থান ঘটলো বিজেপির৷ জাতীয় কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি মালদা এবং মুর্শিদাবাদ বাদ দিলে রাজ্যের সব জেলাতেই বিজেপির জোর বেড়েছে৷ এবং এতদিন ধরে তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি যে অভিযোগ জানিয়ে আসছিলেন যে, হিন্দুত্ববাদী বিজেপির সঙ্গে গোপন বোঝাপড়া হয়েছে বামপন্থিদের, ভোটের হিসেবে যেন তারই লক্ষণ৷ বামেদের ভোট বদলে গেছে বিজেপি ভোটে৷ পুরুলিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগণা, পূর্ব মেদিনীপুরে গেরুয়া উত্থান রীতিমতো স্পষ্ট৷
এ কারণে এদিন সন্ধেয় রাজ্য সচিবালয় নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ তুললেন, বিশেষত রাজ্যের সীমান্ত জেলাগুলিতে বাইরে থেকে লোক এনে ভোট করিয়েছে বিজেপি, সফল না হতে পারলে বাগড়া দিয়েছে৷ এবং ভোটের দিন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যে অভিযোগ এনেছিলেন, যে বনগাঁ সীমান্তের কিছু এলাকায় বাংলাদেশ থেকে দুষ্কৃতিদের এনে অশান্তি বাধিয়েছে বিজেপি, মুখ্যমন্ত্রীও ঠিক একই কথা বললেন৷
সেই সঙ্গে সরাসরি এমন অভিযোগও করলেন যে, সীমান্ত পেরিয়ে ওই দুষ্কৃতিদের দেশে আনার কাজে বিজেপিকে সাহায্য করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়-দায়িত্ব রাজ্য প্রশাসনের৷ সেখানে শৃঙ্খলা রক্ষার অজুহাত দিয়ে, রাজ্য সরকারের অনুমতি না নিয়েই কেন সীমান্তরক্ষী বাহিনী তৎপর হলো৷ বলা বাহুল্য, মমতার অভিযোগের আঙুল কেন্দ্র সরকারের দিকে৷
এদিকে কেন্দ্র সরকারও পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আদৌ খুশি নয়৷ দু' দফায় তারা রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের থেকে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রক রীতিমতো ক্ষুব্ধ৷ তার ওপর বৃহস্পতিবার গণনার দিনও একাধিক কেন্দ্রে দুষ্কৃতি হামলা হয়েছে৷ ব্যালট ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে, এমনকি ছাপ মারা ব্যালট টেনে নিয়ে ফের ছাপ মারতে গেছে দুষ্কৃতিরা৷ যদিও কোনও ঘটনাই খুব বড় আকার নেয়নি৷ রাজ্যজুড়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জয়জয়কারের মধ্যে আরও একটি উল্লেখযোগ্য খবর, উত্তর ২৪ পরগণার ভাঙড় এলাকায় জমি ও জীবিকা রক্ষা কমিটির সমর্থনে ৫ জন নির্দল প্রার্থীর জয়৷ তাঁরা যাতে মনোনয়ন জমা না দিতে পারেন, তার জন্য ব্যাপক সন্ত্রাস ছড়ানো হয়েছিল ভাঙড়ের বিস্তীর্ন এলাকায়৷ শেষ পর্যন্ত তাঁরা হোয়াটস অ্যাপ–এর মাধ্যমে মনোনয়ন জমা দেন, যা জেলাশাসক গ্রহণ করেন৷ এই জয় নিশ্চিতভাবেই গণতন্ত্রের৷