গাছের দেশ গুয়াতেমালা
৩১ মার্চ ২০১৭‘দেফেনসোরেস দে লা নাতুরালেসা' সংগঠনের হাইডি গার্সিয়া বেশ কয়েক বছর ধরে এখানকার মানুষদের বাগান করতে শেখাচ্ছেন৷ তিনি জানালেন, ‘‘আমরা দু'টো জিনিস করার চেষ্টা করেছি: প্রথমত আগে যেসব সবজি আর ফলমূলের গাছ লাগানো হতো, কিন্তু আজ আর হয় না, সেগুলোকে ফিরিয়ে আনা৷ অন্যদিকে নতুন সব সবজি আর ফলের গাছলাগানো, যেগুলো খুবই পুষ্টিকর, কিন্তু যেগুলোকে কেউ চেনে না৷ উদ্দেশ্য হলো, প্রত্যেকটি পরিবারের জমিতে নানা ধরনের গাছ লাগানো৷''
কিন্তু সেটা কি এখানে স্বাভাবিক ব্যাপার হওয়া উচিত নয়, ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্যের এই প্রান্তে, যেখানে এক ভু্ট্টা ছাড়া বাকি সব গাছই চমৎকার বাড়ে? হাইডি গার্সিয়া বলেন, ‘‘ওরা যে কোনোদিন তা করেনি, এমন নয়৷ কিন্তু কোন সুদূর অতীতে তা হারিয়ে গেছে৷ এখানকার মানুষদের মাটির সঙ্গে সম্পর্ক খুব সহজ ও প্রত্যক্ষ – বিশেষ করে ভুট্টার সঙ্গে৷ তা সত্ত্বেও এদের নানা ধরনের গাছ লাগাতে উৎসাহ দিতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে৷''
আনারস, মালাঙ্গা আর চায়া
তবে ইতিমধ্যেই চেষ্টার ফল পাওয়া যাচ্ছে৷ হিমেনেজ পরিবারের আনারস ফসল তোলার কাজ প্রায় শেষ৷ কিন্তু মালাঙ্গা ফল আছে, আর আছে চায়া, যার পাতাগুলি খাওয়া হয়৷ চাষি গৃহিণী পেত্রোসিনিয়া রাকাল হিমেনেজ জানালেন, ‘‘আমাদের প্রিয় খাবার হলো এখন চায়া আর পুর দেওয়া কলা....সেটাই আমরা এখন খেতে ভালোবাসি৷''
একটা অপরিচিত গাছ বা পাতা যে কীভাবে সুখাদ্যে পরিণত হয়, তা জানতে হলে একবার চেখে দেখতে হবে৷ সেজন্য পেত্রোসিনিয়া হিমেনেজের রান্নাঘরে মাঝেমধ্যে পাড়ার মহিলাদের জন্য রান্নার ক্লাশের ব্যবস্থা করা হয়৷
গুয়াতেমালা মানে ‘গাছের দেশ'৷ কিন্তু এদেশের বৃষ্টিপ্রধান ক্রান্তীয় অরণ্যের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ আর বাকি – সর্বত্র বন কেটে ভুট্টার ক্ষেত বসানো হচ্ছে৷
ইসাবাল হ্রদের তীরে যতদূর চোখ যায়, পাম গাছের আবাদ৷ সান্তা রোসা বালান্দ্রায় কিন্তু নতুন করে বনায়ন করা হচ্ছে৷ হিমেনেজ পরিবারের বাগানে নতুন গাছগুলোর ছায়ায় এখন কোকোর চাষ হচ্ছে – যা খেতেও ভালো, তেমন বিক্রি করা যায়৷ হাইডি গার্সিয়া বলেন, ‘‘এই কৃষি-ও-বনায়ন পদ্ধতি শুধু পরিবেশের পক্ষেই কল্যাণজনক নয় – এর অর্থনৈতিক দিকটাও রয়েছে৷ চাষের জমির জন্য পরিবারগুলোকে জঙ্গলের উপর হাত বসাতে হচ্ছে না৷ কাজেই তা জঙ্গলকে বাঁচাতেও সাহায্য করছে৷''
মধুর চাষ
মৌমাছিরাও জঙ্গল বাঁচানোর কাজে সক্রিয়৷ তেরো বছরের দেইনার হিমেনেজ এই এলাকার সবচেয়ে কম বয়সের মধুচাষি৷ তার বাবার কাছ থেকে এই কাজ শিখেছে সে৷ এই কাজ করার পাশাপাশি স্কুলেও যায় সে৷
মৌমাছি পালক দেইনার হিমেনেজ বললেন, ‘‘আমার এই ছোট্ট জীবগুলোকে নিয়ে কাজ করতে ভালো লাগে৷ ভবিষ্যতে আমি আরো অনেক শিখতে চাই৷ মৌমাছি পুষে আমি টাকা রোজগার করি; মধু বিক্রি করি; এভাবে আমি আমার প্রশিক্ষণের ফি দিতে পারি৷''
মধু আহরণের জন্য মৌমাছিদের জঙ্গলে পর্যাপ্ত ফুলের মধু খুঁজে পাওয়া চাই৷ কিছু কিছু এলাকার বনায়ন ছাড়াও সান্তা রোসা বালান্দ্রা-র মানুষেরা ৯৫ হেক্টর সাবেক জঙ্গল ফেলে রেখেছে – এখানে যাতে কেউ গাছ না কাটে বা আগুন না ধরায়, তার দেখাশোনা করেন স্থানীয় বাসিন্দারাই৷ এভাবে এখানকার বহু গাছ আর জীবজন্তুও রক্ষা পায়৷ এছাড়া এই জঙ্গল বৃষ্টির জল ধরে রাখে – একেবারে ইসাবাল হ্রদের ধারের জলাভূমি অবধি৷
মানুষকে সাহায্য করার মানে প্রকৃতিকেও সাহায্য করা৷ হিমেনেজ পরিবার আজ প্রায় স্বনির্ভর বলা চলে৷ হেক্টর হিমেনেজ বলেন, ‘‘যেভাবে একটা বাচ্চা হাঁটতে শেখে৷ প্রথমে বার বার পড়ে যায়, কিন্তু শেষমেষ হাঁটতে পারে৷ আমরা যা কিছু শিখেছি, আমাদের পরিশ্রম আর আমাদের ইচ্ছা, এ সব ব্যর্থ হয়নি৷ ভবিষ্যতে আমরা অন্যের সাহায্য ছাড়াই আরো অনেকদূর যেতে পারি৷''
জঙ্গল যে কত মূল্যবান, তা সকলেই জানেন৷ যখন এই ২৭টি পরিবারের সদস্যরা জঙ্গলের মাঝখানে তাদের পবিত্র স্থানটিতে একত্রিত হন, তখন তারা পিতা ঈশ্বর ও মাতা পৃথিবীর প্রতি তাদের প্রার্থনা জানান৷
কাটিয়া লশ/এসি