দেশের তরুণরা ঝুঁকছে খামারে
ঢাকা শহরের ভেতরেই একটি খামার৷ সেখানে টার্কি, তিতির ও কোয়েল পাখির ‘চাষ’ বা ‘উৎপাদন’ করা হচ্ছে৷ নিজেদের প্রচেষ্টায় বাড্ডায় চালু হয়েছে এই খামার৷ দেশের ৬৪টি জেলায় তা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে৷ ছবি পাঠিয়েছেন মিরাজ হোসেন৷
যেভাবে শুরু
একজন শৌখিন, কৃষিমনস্ক প্রকৌশলী শাহীন হাওলাদার ও একজন তরুণ উদ্যোক্তা মিরাজ হোসেনের যৌথ প্রয়াসে ঢাকার বাড্ডায় গড়ে উঠেছে একটি টার্কি খামার৷ খামারে সার্বক্ষনিক চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে থাকেন ফার্মাসিস্ট এনামুল হক৷
দুবাই থেকে ফিরে খামার
মিরাজ হোসেন জানান, দুবাই থেকে আসার পর কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না৷ পরবর্তীতে অনলাইনে টার্কি সম্পর্কে জানতে পারেন৷ তারপর টার্কি পালনের উপর কিছু প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মাত্র ৬ টি টার্কি নিয়ে খামারটি শুরু করেন৷
‘টার্কি মিরাজ’
বর্তমানে টার্কি ‘উৎপাদন’ বাংলাদেশেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ এক্ষেত্রে বিশেষভাবে অবদান রেখেছে ‘মিরাজের টার্কি ফার্ম’৷ এই ফার্মের কারণে মিরাজ আজ সবার কাছে ‘টার্কি মিরাজ’ নামে পরিচিত৷ ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে মাত্র ৬টি টার্কি দিয়ে এই ফার্মটি শুরু করলেও বর্তমানে খামারে ২-৩ মাস বয়সী ১৫০ টি এবং ৭-৮ মাস বয়সি ৪৬ টি টার্কি রয়েছে৷
টার্কির আকার
পুরুষ টার্কি স্ত্রী টার্কির তুলনায় বড় এবং অনেক বেশি আকর্ষণীয় হয়৷ একটি পুরুষ টার্কির ওজন হয় ১০-১২ কেজি৷ পুরুষ টার্কির তুলনায় স্ত্রী টার্কি আকৃতিতে ছোট এবং ওজনে কম হয়৷ একটি স্ত্রী টার্কি বছরে ৮০-১০০ টি ডিম দেয়৷ (এই ছবিটি ডয়চে ভেলের)
রোগ প্রতিরোধ
অনুকুল পারিপার্শ্বিক অবস্থা, পরিবেশ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ঘর ও নিয়মিত খাবার দিলে টার্কি মুরগি রোগাক্রান্ত হয় না৷ ৪ থেকে ৫ বর্গফুট জায়গা রাখতে হবে একটি টার্কির জন্য৷ নিয়মিত বিশেষজ্ঞ পরামর্শ নেয়া জরুরি৷ এতে রোগ সংক্রমণ কম হয়৷ চারটি ভ্যাকসিনেশন সিডিউল আছে৷ রানীক্ষেতসহ চারটি রোগের জন্য ভ্যাকসিন দিতে হয়৷
বাচ্চা উৎপাদন
ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ২৮ দিনে টার্কির বাচ্চা উৎপাদন হয় এবং প্রতিমাসে আমার এখানে ২০০ থেকে ২৫০ টি বাচ্চা উৎপাদন হচ্ছে৷ এছাড়া দেশি মুরগির সাহায্যে সনাতন পদ্ধতিতেও ২৮ দিনে বাচ্চা উৎপাদন করা সম্ভব৷
প্রাণিজ প্রোটিনের উৎস
দেশের মানুষের প্রাণিজ প্রোটিনের চাহিদা পূরনের ক্ষেত্রে পোল্ট্রির পাশাপাশি টার্কি মুরগি বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে বলে খামারিরা আশা করছেন৷
টার্কি ও তিতিরের দাম
টার্কির একমাস বয়সের একটি বাচ্চার দাম তিন হাজার টাকা, তিতিরের বাচ্চার দাম দুই হাজার টাকা৷ বড় একজোড়া টার্কির দাম ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা৷ এছাড়া প্রতিটি ডিম বিক্রি হয় ১৫০ টাকায়৷
উট পাখি
মিরাজ হোসেন উট পাখিও পোষা শুরু করেছেন৷ এ থেকে লাভজনকভাবে উটপাখি উৎপাদন সম্ভব কিনা তা দেখছেন৷ ছবিতে উট পাখির একটি বাচ্চা হাতে নিয়ে আছেন মিরাজ হোসেন৷
কোয়েলের খামার
সাধারণত একটি ভালো জাতের কোয়েল পাখি বছরে ২৫০ থেকে ৩০০ টি ডিম দিয়ে থাকে৷ প্রায় প্রতিটি ডিম থেকেই বাচ্চা হয়৷ এই বাচ্চা পরবর্তী ৬ থেকে ৭ সপ্তাহের মধ্যেই ডিম দেওয়া আরম্ভ করে৷ এই বয়সের কোয়েল পাখির বাজারে প্রচুর চাহিদা৷ অত্যন্ত স্বল্প পুঁজি নিয়ে কোয়েল পাখির খামার করা যায় এবং খুব দ্রুতই লাভ পাওয়া সম্ভব৷
কোয়েলের যত্ন
ঘরের যেখানে পর্যাপ্ত আলো -বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে সেখানেই কোয়েলের খাঁচা রাখা উত্তম৷ তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, বৃষ্টির পানিতে কোয়েলের খাঁচা যেন ভিজে না যায়৷ ভিজে এবং স্যাঁতস্যাতে জায়গায় রাখলে কোয়েলের রোগ ব্যাধি বেশি হয়৷
আরও কয়েকজন
নুরুল হুদা, পার্থ মজুমদার বাপ্পি এবং শরীফ আব্দুল কাইয়ুমও এ ধরণের খামার করছেন৷ কেবল টার্কি নয় তিতির, কোয়েল পাখির খামার গড়েও সফলতা পেয়েছেন৷ শৌখিন পাখি যেমন ঘুঘু,কবুতর,টিয়া ইত্যাদি পাখিও যোগ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের৷
অন্যদের উৎসাহিত করা
মিরাজের ইচ্ছা বাণিজ্যিকভাবে সারা বাংলাদেশে এই খামারের পরিকল্পনা ছড়িয়ে দেওয়া৷ বর্তমানে তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার মানুষ টার্কি ফার্ম গড়ে তুলছেন৷ মিরাজ হোসেন টার্কি বিপ্লব ঘটানোর স্বপ্ন দেখেন৷ বেকারত্ব দূর করার জন্য এটা একটা ভালো উদ্যোগ বলে মনে করেন তিনি৷ প্রতি শুক্রবার তাঁর খামারটি পরিদর্শনে আসেন অনেক উদ্যোক্তা৷