দুই সাংবাদিক পেলেন ডয়চে ভেলে ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যাওয়ার্ড
২ মে ২০২২ফ্রিল্যান্স চিত্রসাংবাদিক এভগেনি মালোলেটকা কাজ করছেন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের ভিডিওগ্রাফার হিসেবে৷ মস্তিস্লাভ চেরনভও ইউক্রেনে চিত্রসাংবাদিক হিসেবে কর্মরত৷ এই দুইজন মিলে দক্ষিণ-পূর্ব ইউক্রেনে রুশ দখলদারিত্ব, ধ্বংসযজ্ঞ ও মানুষের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরেছেন৷ সেখানকার একটি হাসপাতালে রাশিয়ার বোমা হামলা নিয়ে তাদের তোলা ছবি দেখেছে গোটা বিশ্ব৷
ইউক্রেনের যেসব শহরে রাশিয়া শুরুতে ব্যাপকভাবে হামলা চালায় তার একটি ছিল মারিউপল৷ সেখানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গুড়িয়ে দেয়া হয় আবাসিক ভবন৷ এক পর্যায়ে ইউক্রেনের সেনাদের উপস্থিতিও বাড়ে সেখানে৷ বাড়ে যুদ্ধের তীব্রতা৷ এই পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের জন্য কাজ করা ছিল ভীষণ কঠিন৷ এক সময় সেখানে এমনকি ফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়৷ তার মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছিলেন মালোলেটকা ও চেরনভ৷ মালোলেটকা বলেন, ‘‘মানুষ ছিল ভীত সন্ত্রস্ত এবং জানতে চাচ্ছিলো কী ঘটছে৷ যেকোনো তথ্য তারা পেতে চাচ্ছিলেন৷ মানবিক করিডোর সম্পর্কে খোঁজ নিচ্ছিলেন৷’’
হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ সংগ্রহ করার সময় এই সাংবাদিকরা দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে যান৷ গোরস্থানে জায়গা খালি না হওয়ায় অনেককে বাড়ির উঠোনেই কবর দেয়া হয়৷ তারা হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটে যান মানুষের দুর্ভোগের চিত্র ধারণ করতে৷ মালোলেটকা বলেন, ‘‘আমরা হাসপাতালে যে শিশুদের ছবি তুলেছিলাম, তারা মারা গেছে৷ গোলাগুলিতে ১৫ বছর থেকে শুরু করে তিন বছরের শিশুও প্রাণ হারায়৷ সেই ছবি মাথা থেকে বের করা খুবই কঠিন৷’’
৯ মার্চ রুশ বাহিনী যখন শহরটির একটি ক্লিনিকে হামলা চালায়, তখন এই দুই সাংবাদিক কাছাকাছি ছিলেন৷ তারা ছুটে গিয়ে সেখানকার ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র ধারণ করেন৷ হামলার পরপরই তারা হাসপাতালটির ভিতরে প্রবেশ করেন৷ এর মধ্যেই রাশিয়ার ট্যাঙ্ক সেখানে চলে আসে৷ মালোলেটকা তার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘‘প্রায় একটা দিন আমরা হাসপাতালে লুকিয়ে ছিলাম৷ সাদা অ্যাপ্রন পরে আমরা ডাক্তার সেজে ছিলাম এবং শহর ঘুরে বেড়ানো রাশিয়ার ট্যাঙ্কের ছবি তুলেছিলাম৷’’ ১২ মার্চ ইউক্রেনের বাহিনী এই দুই সাংবাদিককে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হন৷ পরে পুলিশের সহায়তায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা সংবাদ মাধ্যমে ছবি পাঠান৷ ১৫ মার্চ মারিউপল শহর ছাড়েন তারা৷
ইউক্রেনের সরকারের হিসাব অনুযায়ী, এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ জন সাংবাদিক ইউক্রেন যুদ্ধে নিহত হয়েছেন৷ এছাড়া আটজন অপহৃত আর তিনজন নিখোঁজ হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন ১৩ জন সাংবাদিক৷
মানবাধিকার রক্ষা বা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা সাংবাদিকদের ২০১৫ সাল থেকে ডিডাব্লিউ ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যাওয়ার্ডের মাধ্যমে সম্মাননা জানিয়ে আসছে৷
কনস্টানটিন গনচারভ/এফএস