ডয়চে ভেলের ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যাওয়ার্ড-২০২০
৩ মে ২০২০বার্লিনে লিমবুর্গ বলেন, ‘‘আমরা আমাদের সব সহকর্মীকে সম্মান জানাচ্ছি, যাদের কঠিন এ সময়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নানা বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে৷
‘‘কোভিড-১৯ সংকট নিয়ে খবর প্রকাশের কারণে বিশ্বজুড়ে যেসব সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ডয়চে ভেলে তাদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছে৷’’
মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এবং সংবাদমাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় যে বা যারা আপোসহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সম্মান জানাতে ২০১৫ সাল থেকে ডয়চে ভেলে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে৷
এ নিয়ে এক ভিডিও বার্তায় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার এবং চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল বাচলেট বলেন, ‘‘অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন আমাদের জন্য তথ্যপ্রবাহ অনেক বেশি জরুরি এবং অবশ্যই জনগণকে সে তথ্য জানার সুযোগ দিতে হবে৷
‘‘পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণের যথাযথ সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের সঠিক তথ্য জানা খুবই প্রয়োজন৷ এছাড়া, আমাদের মতো যারা সাধারণ মানুষ, তাদেরও অতিমারির বিষয়ে পূর্ণ এবং সঠিক তথ্য জানা প্রয়োজন৷ এর ফলে আমাদের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে আমরা নিজেরাও সম্পৃক্ত হতে পারি৷ জনগণের জন্য নেওয়া সিদ্ধান্তে জনগণের সরাসরি অংশগ্রহণ থাকলে তারা সরকারের নেওয়া ব্যবস্থার গুরুত্ব বুঝবে এবং তা অনুসরণ করবে৷’’
সাংবাদিকদের নিয়ে বাচলেট বলেন, ‘‘বর্তমান অতিমারি নিয়ে শুধুমাত্র রিপোর্ট করার কারণে সাংবাদিকদের উপর হামলা, হুমকি, গ্রেপ্তার, গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ উঠছে, এমনকি তারা নিখোঁজ পর্যন্ত হয়ে যাচ্ছেন৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে এটা খুব হতাশজনক৷ এটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হামলা৷ এটা জনগণের সঠিক তথ্য জানার অধিকারের উপর হামলা৷’’
কোভিড-১৯ মহামারি নিয়ে কয়েকটি দেশের সরকার যেসব ব্যবস্থা নিয়েছেন তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন৷ বিশেষ করে তারা যেভাবে মতপ্রকাশের এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেছেন৷ রাজনীতিকরা মহামারি নিয়ে সঠিক তথ্য গোপন করেছেন, তথ্য প্রবাহ আটকে দিয়েছেন এবং সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমণ করেছেন৷ এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার পরও সাংবাদিকদের এর খবর প্রকাশের কারণে আটকে রাখা হয়েছে৷
আরএসএফ, আইপিআই এবং সিপিজে-র মতো নানা আন্তর্জাতিক সংস্থার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, গত কয়েকমাসে করোনা ভাইরাস নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে সাংবাদিকদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা নানা হুমকি দেওয়া হয়েছে৷ চীন, ইরান এবং আফ্রিকা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার কয়েকটি দেশ থেকে এ ধরনের খবর এসেছে৷
ডয়চে ভেলে ওই সাংবাদিকদের সম্মান জানাচ্ছে, যারা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখতে কাজ করে গেছেন এবং এ কাজের জন্য সরকার বা নিরাপত্তাবাহিনীর হুমকির মুখে পড়েছেন৷
বাচলেট বলেন, ‘‘আমি সাহসী ওই সাংবাদিকদের সম্মান জানাতে চাই, যারা এ ধরনের হামলার পরও আওয়াজ তুলেছেন এবং ভয়হীনভাবে অনুসন্ধান জারি রেখে গুরুত্বপূর্ণ খবর প্রকাশ করেছেন৷ ওইসব সাংবাদিক, যারা তাদের কাজের কারণে নিখোঁজ হয়েছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন বা হুমকি পেয়েছেন, তাদের সাহসের প্রতি আমি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি৷ আমার কার্যালয় এবং জাতিসংঘ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সব সময় পাশে থাকবে৷
‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্যের এই সংকটময় মুহূর্তে সাংবাদিকরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন এবং প্রত্যেক সাংবাদিক নিজ নিজ দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন৷ যেকোনো দেশের নাগরিকদেরই বাস্তবসম্মত তথ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানের খবর পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷’’
সঠিক সংবাদ প্রকাশে নানা দেশের সরকারের হস্তক্ষেপ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিমবুর্গ বলেন, ‘‘মৃত্যু নিয়ে কোনো ধরনের লুকোচুরি এবং বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশকে আইনের ফাঁদে ফেলে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার উদ্যোগ স্পষ্টতোই মত প্রকাশের স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন৷’’
এখন পর্যন্ত যারা ‘ডিডাব্লিউ ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন
সৌদি আরবের ব্লগার, লেখক ও সমাজকর্মী রাইফ বাদাউই (২০১৫)৷ তিনি এখনো দেশটির অজ্ঞাত কোনো কারাগারে বন্দি আছেন৷ তুরস্কের দৈনিক পত্রিকা হুরিয়াতের সাবেক প্রধান সম্পাদক সেদাত আরগিন (২০১৬)৷ যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (২০১৭)৷ ইরানের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সাদেগ জিবাকালাম (২০১৮) এবং মেক্সিকোর অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও লেখক আনাবেল হার্নান্দেজ (২০১৯)৷
জার্মানির বন শহরে ডয়চে ভেলে গ্লোবাল মিডিয়া ফোরাম সাধারণত জাঁকজমকপূর্ণভাবে ফ্রিডম অব স্পিচ অ্যাওয়ার্ড-র পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান প্রচার করে৷ কিন্তু এ বছর কোভিড-১৯-এর কারণে অনুষ্ঠান আয়োজন বাতিল করা হয়েছে৷ তবে ডিডাব্লিউর ৩০টি ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল, নিউজ ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হবে৷
এসএনএল/এসিবি