রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করতে চায় ইইউ
২ মে ২০২২ইউক্রেনের উপর হামলার শাস্তি হিসেবে একদিকে রাশিয়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপানো, অন্যদিকে সেই রাশিয়া থেকেই তেল ও গ্যাসের জন্য কোটি কোটি ইউরো দাম মিটিয়ে পুটিনের সামরিক যন্ত্র চালু রাখা কতটা ন্যায্য? ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংকটের শুরু থেকেই এমন অপ্রিয় প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷ জ্বালানির ক্ষেত্রে জার্মানিসহ একাধিক ইইউ সদস্য দেশ রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল থাকায় এমন ‘অসহায়' অবস্থায় পড়েছে, এমন যুক্তিও আর গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না৷ বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশ স্বেচ্ছায় রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করে ব্রাসেলসের উপর চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে৷
ইইউ পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তা জোসেপ বোরেল বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের উপর হামলার মাত্রা বাড়িয়ে চলেছে৷ ফলে নতুন নিষেধাজ্ঞা ‘অত্যন্ত অপরিহার্য' হয়ে পড়েছে৷ তাঁর মতে, ইইউ-কে তার অর্থনৈতিক ও আর্থিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে রাশিয়ার কাছ থেকে এর মূল্য আদায় করতে হবে৷ উল্লেখ্য, ইউক্রেনও রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধ করার জন্য ইইউ-র উপর চাপ বাড়াচ্ছে৷
এমনই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি রাতারাতি বন্ধ করতে না পারলেও ধাপে ধাপে মস্কোর উপর নির্ভরতা কমানোর উদ্যোগ যথেষ্ট গতি পাচ্ছে৷ প্রথমে কয়লা, তারপর পেট্রোলিয়াম, সবশেষে গ্যাস আমদানি কমানোর পরিকল্পনা নিচ্ছে জার্মানি তথা ইইউ৷ ইতোমধ্যেই কয়লা আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ এবার রাশিয়ার উপর ষষ্ঠ দফার নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পেট্রোলিয়াম আমদানির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপাতে পারে ইইউ৷ উল্লেখ্য, রাশিয়ার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ পেট্রোলিয়াম ইইউ-তে বিক্রি হয়৷
ইইউ কমিশন আগামী বুধবারের মধ্যেই এমন নিষেধাজ্ঞার খসড়া প্রস্তুত করার তোড়জোড় করছে৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন কূটনীতিক একাধিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তাদের মতে, মূলত জার্মানির অবস্থান বদলের ফলেই এমন কড়া পদক্ষেপের উদ্যোগ নিতে পারছে ইইউ৷ জার্মানির অর্থনীতি ও জ্বালানি বিষয়ক মন্ত্রী রোব্যার্ট হাবেক রোববার বলেছেন, জার্মানি ইতোমধ্যেই রাশিয়া থেকে কয়লা, গ্যাস ও তেল আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে এনেছে৷ তার মতে, সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এমন পরিবর্তন সম্ভব হবে না৷ তবে শিল্পজগত ও সাধারণ ক্রেতারাও বাড়তি চাপ অনুভব করবেন৷ তা সত্ত্বেও আর রাশিয়ার ব্ল্যাকমেল মেনে নেওয়া যায় না বলে হাবেক মন্তব্য করেন৷
রাশিয়া থেকে পেট্রোলিয়াম আমদানি বন্ধ করতে হলে অবশ্য ইইউ-র সব সদস্য দেশকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷ জার্মানি মত বদল করলেও হাঙ্গেরি সেই প্রচেষ্টা বানচাল করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ ক্রেমলিনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সদ্য পুনর্নির্বাচিত সরকার প্রধান ভিক্টর অরবান ভেটো শক্তি প্রয়োগ করতে পারেন৷ এমন পদক্ষেপ কার্যকর করলে অন্যান্য কিছু দেশ মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে৷ ফলে পেট্রোলিয়ামের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এড়ানোর কোনো ব্যবস্থা ছাড়া এমন দেশের সম্মতি আদায় করাও কঠিন৷ সোমবার ব্রাসেলসে ইইউ জ্বালানি মন্ত্রীরা এ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা করবেন৷
এসবি/এসিবি (এএফপি, এপি)