ইইউ নির্বাচনে আলোচনায় জার্মানির কট্টর ডান এএফডি
২৯ জুলাই ২০২৩অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি- এএফডি শনিবার আগামী বছরের জুনেইইউ নির্বাচনের জন্য তাদের প্রার্থীতালিকা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য বেশ কিছু দিন হাতে রয়েছে। আগামী সপ্তাহান্ত পর্যন্ত এএফডি এর দলীয় কংগ্রেস চলবে।
এখন পরিস্থিতি কী?
পূর্ব জার্মানির মাগডেবুর্গে প্রথমবার সম্মেলন করছে দলটি৷ এই সম্মেলনকে ঘিরে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিরও আশঙ্কা রয়েছে।
ইইউ প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনার পর দলটি ব্লকের অন্যান্য অতি ডানপন্থি দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ভোট দিয়েছে।
প্রতিনিধিরা গতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্টে অতি-ডান (আইডেন্টিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি) আইডি গ্রুপে যোগদানের জন্য দলীয় নেতৃত্বের ইচ্ছার কথা মাথায় রেখে ভোট দেন। আইডি গ্রুপের মধ্যে রয়েছে ফ্রান্সের ন্যাশনাল ব়্যালি, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মারিন লে পেন এবং ইটালির লেগা।
বর্তমানে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে এএফডি এর নয়জন সংসদ সদস্য রয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে দলটির জনপ্রিয়তার হার বেড়েছে। এখন এখন ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ২০টির কাছাকাছি আসনের প্রত্যাশা করছে দলটি।
ইইউ এবং অভিবাসন বিরোধী মনোভাব
কংগ্রেসে সহপ্রধান অ্যালিস ভাইডেলের বক্তব্যেও এ কথা ফুটে উঠেছে। এএফডির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা ইইউকে একটি নিছক অর্থনৈতিক ইউনিয়নে পরিণত করতে চান। এমনকি অনেকে চান, জার্মানি ব্লক ছেড়ে বেরিয়ে আসুক।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় স্তরে এএফডির লক্ষ্য ছিল ইইউ প্রতিষ্ঠানের ক্ষমতা হ্রাস করা। তার কথায়, "আমরা ইইউ-এর সদস্য দেশগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছি।"
পার্টি নেতৃত্ব ইউরোপীয় পার্লামেন্টকে বিলুপ্ত করার পক্ষে। ভাইডেল তার দলের অভিবাসন বিরোধী এজেন্ডার কথাও বলেছেন।
তার কথায়, "আমাদের অবশ্যই ইউরোপের চারপাশে একটি দুর্গ তৈরি করতে হবে। আমাদের ইউরোপীয় অংশীদারদের নিয়ে এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি।
অন্যান্য জার্মান দলগুলো আগেই এএফডির একযোগে কাজ করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলো। তিনি এই আপত্তি প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। এএফডির অতি-ডানপন্থি অবস্থানের কারণে মূলধারার দলগুলো যেমন রক্ষণশীল সিডিইউ এবং সেন্ট্রাল-লেফট এসপিডি, এএফডি-র সঙ্গে জোট খারিজ করে দিয়েছে।
এএফডি নেত্রীর যুক্তি, "আমাদের পক্ষে ভোট দিয়েছেএমন লক্ষ লক্ষ ভোটারকে বাদ দেওয়াও তো অগণতান্ত্রিক। আমরা যে কারো সঙ্গে কথা বলতে রাজি। এএফডি একটি স্বাধীন দল ছিলো। এটি উদ্যোক্তা এবং শ্রমিকদের দল ছিলো। এই দেশে করদাতাদের দল আমরা।"
তাকে সমর্থন জানিয়েছেন ব্যোর্ন হ্যোকে। এএফডির টুরিঙ্গিয়া শাখার চেয়ারম্যান ব্যোর্নকে জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ডানপন্থি এবং চরমপন্থি হিসাবে উল্লেখ করেছে।
সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ফিনিক্সকে ব্যোর্ন হ্যোকে বলেন, "এই ইইউর মৃত্যু হলে আসল ইউরোপ প্রাণে বাঁচবে।" রাষ্ট্রগুলির একটি নতুন ইউরোপীয় জোটের আহ্বান জানান তিনি।
জার্মান অর্থনীতির ফায়দা তুলছে এএফডি
সাম্প্রতিক মতামত জরিপগুলো অনুসারে, এএফডি বর্তমানে জার্মান জনগণের প্রায় ১৮% থেকে ২২% এর ভোট পাচ্ছে। দলটি চলতি বছরের জুনে পূর্ব জার্মান শহর সোনেবার্গে প্রথমবারের মতো কোনো শাসক পদে জয়ী হয়েছে। প্রথমবারের মতো একটি মেয়র পদেও তারা জয়ী হয়েছে।
দলটির উত্থান আসলে অভিবাসী বিরোধী এবং জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে ঘিরেই। জার্মানির স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতি এবং মুদ্রাস্ফীতির ফলে অসন্তুষ্ট ভোটারদের ভোট পেয়েছে তারা। অনিয়মিত অভিবাসন ঘিরে অসন্তোষের আঁচ রয়েছে দেশের নানা প্রান্তে।
রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এএফডির বেশ কয়েকজন সদস্যের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা বলেছেন পর্যবেক্ষকেরা। ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের একটি "কারণ" হিসাবেও দলটির রাশিয়ার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাবকে দায়ী করেন অনেকে। অনেক পর্যবেক্ষক এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সেন্ট্রাল-লেফ্ট অর্থাৎ বামমনোভাবাপন্ন সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এএফডির ভোটের সংখ্যাকে গুরুত্ব দেননি। তিনি মনে করেন, ২০২১ সালের জার্মান ফেডারেল নির্বাচনে এএফডি ১০.৩% ভোট পেয়েছিল। দলটির পক্ষে এর থেকে ভাল ফল করা সম্ভব নয়।
আরকেসি/এডিকে (এএফপি, ডিপিএ)