জার্মানিতে ডানপন্থী অভ্যুত্থান কি সম্ভব?
১২ ডিসেম্বর ২০২২‘অনুসন্ধানে দেখা যায় এই সংগঠনটি জার্মানির বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সহিংসতা এবং সামরিক উপায়ে নির্মূল করার পরিকল্পনা করেছিল,” গত সপ্তাহে তথাকথিত রাইশসব্যুর্গার আন্দোলনের সমর্থকদের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযান পরিচালনার পেছনে কারণগুলো এভাবেই বর্ণনা করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল পেটার ফ্রাংক৷
এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্যরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানির অস্তিত্ব অস্বীকার করে৷ তাদের বিশ্বাস বর্তমান রাষ্ট্রটি পশ্চিমা শক্তি তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের দখলে থাকা প্রশাসনিক কাঠামো ছাড়া কিছু না৷ জার্মান সাম্রাজ্যের ১৯৩৭ সালের সীমানা এখনও বিদ্যমান বলে তারা মনে করে৷
তবে মুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মূলের নামে আসলে এই গ্রুপটি কী বোঝাতে চায়? এর অর্থ হতে পারে রাজনীতিবিদদের আক্রমণ করা, সংসদ ভবনে অভিযান চালানো, ফেডারেল সরকারকে উৎখাত করা, বিচার বিভাগ ভেঙে দেওয়া এবং সামরিক বাহিনী দখল করা৷
কিন্তু আজকের জার্মানিতে এর সম্ভাবনা কতটুকু, বিশেষ করে ৭৫ বছরের বেশি সময় বিদ্যমান একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে, সেখানে রয়েছে একটি সংবিধান, দৃঢ় প্রশাসনিক কাঠামো এবং ক্ষমতা পৃথকীকরণ?
"জার্মান রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা করা সম্ভব৷ জনগণের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা কেবল গণতান্ত্রিক হিসাবেই প্রমাণ করে না, বরং গণতন্ত্রকে রক্ষার যোগ্য বলে মনে করে,” বলছিলেন বিলেফেল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বন্দ্ব এবং সহিংসতার বিষয়ক আন্তঃবিভাগীয় গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান আন্দ্রেয়াস সিক৷
আমাদেউ আন্তোনিও ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক টিমো রাইনফ্রাংক একই ধরনের মতামত ব্যক্ত করেন৷ তার মতে, একটি শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা এবং সংবিধান বিপক্ষে গিয়ে জার্মানিতে অভ্যুত্থান সফল করা খুবই দুরূহ৷
চরমপন্থীদের সুদূরপ্রসারী সংযোগ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এবং এর সাথে জড়িত আটক ব্যক্তিদের হালকাভাবে নেয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন৷
এই গ্রুপটিকে ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ বলে অভিহিত করেছেন ফৌজদারি বিচার নীতির মুখপাত্র সেবাস্টিয়ান ফিডলার৷
সন্ত্রাস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ পেটার আর. নিউমান সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘সামগ্রিকভাবে রাইশসব্যুর্গার আন্দোলন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা চালাতে সক্ষম৷’’
এই সংগঠনটি অনেক কারনে বিপদজনক৷ একটি হল এর গঠন, আরেকটি হল আদর্শ যা সবাইকে একত্রে আবদ্ধ রাখে৷
গত সপ্তাহে পুলিশ ২৫ ব্যক্তিকে আটক করে, যারা এই সংগঠনের সদস্য বা সমর্থক৷ এছাড়াও এদের মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে নেয়া সরকারের কঠোর পদক্ষেপের বিপক্ষে যারা রাস্তায় আন্দোলন করেছে৷
আইনের শাসনের উপর হুমকি
যাদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে আছে একজন বিচারক৷ উগ্র ডানপন্থী পপুলিস্ট দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) সাবেক বুন্দেস্টাগ এমপিও রয়েছেন৷ দলটিতে সাবেক সেনা কর্মকর্তা, অভিজাত ব্যক্তিবর্গ এবং পুলিশের সাবেক সদস্যরাও অন্তর্ভুক্ত৷ এছাড়াও গণতান্ত্রিক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত অনেকের সাথে এই গ্রুপের যোগাযোগ আছে৷
তাদের কেউ কেউ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্রের মালিক এবং সেগুলো তারা ব্যবহার করতে সক্ষম৷ অভিযানের সময় পুলিশ এমন বেশ কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করেছে৷
এসব কারনে যারা আটক হয়েছে এবং তাদের যারা সমর্থক সকলেই আইনের শাসনের জন্য বড় ধরনের হুমকি, যদিও তারা জার্মানির শাসন ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার সীমিত সামর্থ্য রাখে৷
‘‘এরা একটি সফল অভ্যুত্থান করতে সক্ষম নাও হতে পারে, তবে তাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অন্য চরমপন্থী গোষ্ঠী বা এমনকি সমাজের মূলধারার ব্যক্তিরাও এই মতাদর্শ গ্রহণ করতে পারে,’’ বলছিলেন জিক৷
এ ধরনের উগ্র গোষ্ঠীর উত্থান ঠেকাতে একটি প্রতিরোধ পরিকল্পনা প্রনয়ণ করা জরুরি হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বর্তমান দুনিয়ায় যখন গণতন্ত্র ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছে এবং ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বেশি করে মানুষদের আকৃষ্ট করছে৷
‘‘চরমপন্থার পরিবর্তন হচ্ছে, বিশেষ করে সঙ্কটের সময়ে," সিক সতর্ক করে বলেন, "আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর উপর নজর দেই, কিন্তু ছোট দল বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যারা একটি রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে তাদের উপর নজর রাখি না৷’’
লিসা হানেল/একেএ