শরণার্থীদের নিয়ে কটূ মন্তব্য, এএফডির মুখপাত্র বহিষ্কার
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০জার্মানির গণমাধ্যম সাইট-এর অনলাইন ভার্সনে বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারিতে এক নারী ইউটিউবারের সঙ্গে কথা বলার সময় ল্যুঠ এমন মন্তব্য করেন৷ জার্মানির মিডিয়া জায়ান্ট প্রোসিবেন এক টিভি ডকুমেন্টারিতে এই মন্তব্য প্রচার করেছে৷
এএফডির পার্লামেন্টারি দলের সহনেতা আলেক্সান্ডার গাউলান্ড বলেছেন, ‘‘ল্যুঠ যা বলেছেন বলে বলা হচ্ছে, তা এএফডির লক্ষ্য ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং অগ্রহণযোগ্য৷’’
এক বিবৃতিতে গাউলান্ড জানান, ল্যুঠের এমন মন্তব্য তিনিও ‘সমর্থন করেন’, এমন অভিযোগও একেবারেই ‘কল্পনাপ্রসুত এবং ভ্রান্ত’৷
কী বলেছিলেন ল্যুঠ?
২৩ ফেব্রুয়ারি ইউটিউব ইনফ্লুয়েন্সার লিসা লিসেন্তিয়ার সঙ্গে বার্লিনের নিউটন বারে সাক্ষাৎ করেন ল্যুঠ৷ সেই সাক্ষাতে ল্যুঠ নানা উসকানিমূলক কথা বলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সেই সাক্ষাতে ল্যুঠ বলেন, ‘‘জার্মানির জন্য পরিস্থিতি যত খারাপ হবে, এএফডির জন্য তা ততটাই ভালো৷’’ পরিস্থিতি খারাপ না হলে এএফডি কেবল ৩ শতাংশ ভোট পেত বলেও মন্তব্য করেন তিনি৷
লিসেন্তিয়া এ সময় জিজ্ঞেস করেন, জার্মানি আরো শরণার্থী নিক এটা এএফডি চায় কিনা৷ উত্তরে ল্যুঠ বলেন, ‘‘অবশ্যই, কারণ, এএফডি তাদের ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে৷’’
পরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা পরে তাদের সবাইকে গুলি করতে পারবো৷ এটা কোনো ব্যাপারই না৷ অথবা তাদের ওপর গ্যাসপ্রয়োগ বা অন্য যা ইচ্ছা করা যেতে পারে৷ আমার কাছে সবই এক৷’’
প্রোসিবেন অবশ্য কোনো ব্যক্তির নাম প্রকাশ না করে তাদের ‘ফার রাইট, জার্মান, র্যাডিক্যাল’ নামের ডকুমেন্টারিতে অডিওর ব্যক্তিকে ‘এএফডির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে৷
তবে সাইট পত্রিকা জানিয়েছে আরো অনুসন্ধানের পর তারা অডিওতে কথা বলা ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছে৷ ‘বিশেষ জনস্বার্থের’ কথা বিবেচনায় সেই ব্যক্তির নাম ও পরিচয় প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে পত্রিকাটি৷
উগ্র ডানপন্থিদের বিষয়ে ১৮ মাসের গবেষণা শেষে সাংবাদিক থিলো মিশকে এ ডকুমেন্টারিতে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘জার্মানির উদার গণতন্ত্র কি হুমকির মুখে?’
বিতর্কিত ইতিহাস
২০১৩ সালে গঠনের পর থেকেই ল্যুঠ এএফডির সঙ্গে আছেন৷ এপ্রিলেই তাকে মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷ তখন তার বিরুদ্ধে নিজেকে ‘ফ্যাসিবাদী’ বলে পরিচয় দেয়ার অভিযোগ ওঠে৷
বর্তমানে জার্মান পার্লামেন্ট বুন্ডেসটাগে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় আছে এএফডি৷ দলটির সাবেক নেতা ফ্রাউকে পেট্রি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ২০১৬ সালে দলটির নির্বাহীরা ল্যুঠের ‘নাৎসি স্যালুট দেয়াসহ’ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানতেন৷
উগ্রপন্থার উত্থান
ঠিলো মিশকে তার ডকুমেন্টারিতে বর্ণনা করেছেন, কিভাবে উগ্রপন্থার উত্থান ঘটছে৷ তিনি দেখিয়েছেন কিভাবে উগ্র ডানপন্থি বিভিন্ন গ্রুপ সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে৷
মিশকে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বিভিন্নভাবে তারা নেটওয়ার্ক তৈরি করে, যেমন করোনা ভাইরাসের সময় সরকারের নানা পদক্ষেপবিরোধী বিক্ষোভ৷ এভাবে তারা নতুন নতুন পন্থা অবলম্বন করে আমাদের সমাজের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করতে চায়৷’’
মিশকেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এএফডির শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত ঠুরিঙ্গিয়া রাজ্যের গোয়েন্দা প্রধান স্টেফেন ক্রামার কয়েক বছরের মধ্যে এমন পরিবর্তন দেখে নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ছেন৷
এডিকে/এসিবি (ডিপিএ, এএফপি)
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারির ছবিঘরটি দেখুন...