1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমফান ধ্বংস করে দিলো পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা

২০ মে ২০২০

পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে আছড়ে পড়ে সব তছনছ করে দিলো আমফান। এলাকার পর এলাকা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রচুর এলাকা বিচ্ছিন্ন।

https://p.dw.com/p/3cUiL
ছবি: DW/P. Giri

পশ্চিমবঙ্গ বিপর্যস্ত। রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে আমফান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।'' হাজার হাজার বাড়ি ভেঙেছে। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য ব্রিজ। ভেসে গিয়েছে রাস্তা। অসংখ্য বাঁধ ভেঙেছে। জল ঢুকে গিয়েছে বহু জায়গায়। অন্ততপক্ষে ১২ জন মারা গিয়েছেন। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানীয় জল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ''কবে দুর্গত জায়গায় পৌঁছনো যাবে সেটাই বুঝতে পারছি না। চার-পাঁচ দিন লেগে যাবে কত ক্ষতি হয়েছে তা বুঝতে। আমি এখনও সব খবর পইনি।'' এতখানি এলাকা জুড়ে এই ধরনের ধ্বংসলীলা এর আগে কবে হয়েছে তা মনে করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরাও। লাখ লাখ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ রাতারাতি সর্বহারা হয়ে পড়েছেন। একে করোনা, তার ওপর আমফানের তাণ্ডব পশ্চিমবঙ্গকে ভয়ঙ্কর বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছে।  

রীতিমতো হতাশ এবং দুঃখিত মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''আমফানযেখান দিয়ে গিয়েছে, সেখানে সব বাঁধ, ব্রিজ, রাস্তা, বাড়ি ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছে। এ দিকে করোনার ফলে রাজ্য়ের  হাতে এখন আর টাকা নেই। কী করে অবস্থা সামলাবো বুঝে উঠতে পারছি না। কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করছি, দয়া করে রাজনীতি করবেন না। সাহায্যের হাত বাড়ান। গোটা বিশ্বের কাছে সাহায্য়ের আবেদন করছি।'' 

তবে আমফানের তাণ্ডব এখনও শেষ হয়নি। কলকাতা সহ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি সহ বহু জেলায় গভীর রাত পর্যন্ত ঝড় ও বৃষ্টি চলছে। সারারাতও চলতে পারে। 

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ''দক্ষিণ ২৪ পরগনা তো ৯৯ শতাংশ শেষ হয়ে গিয়েছে। কৃষি শেষ। বাড়িঘর শেষ। বাঁধ শেষ। রাস্তা শেষ। এরকম তাণ্ডব হবে ভাবিনি। তাও তো আমরা পাঁচ লাখ লোককে একদিনের নোটিসে নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছিলাম বলে তাঁরা বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু আমফান এলাকার পর এলাকা ধ্বংস করে দিয়েছে। নদীর জলে ভেসে গিয়েছে বহু এলাকা। রাজারহাট থেকে বনগাঁ, বাগদা, হাবড়া, ও দিকে সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ সব শেষ।'' 

মুখ্যমন্ত্রী যখন নবান্নে এই সাংবাদিক সম্মেলন করছেন, তখনও বোঝা যাচ্ছে ঝড়ের তীব্রতা। নবান্নের সাউন্ডপ্রুফ ঘরের  ভিতরের মাইকেও শোনা যাচ্ছে তার শব্দ। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, নবান্নেরও প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তাঁর নিজের ঘরে তিনি ঢুকতে পারেননি। জানলা ভেঙে গোটা ঘরে কাচ ছড়িয়ে গিয়েছে। বাড়ি মাঝে মাঝেই কেঁপে  উঠেছে। কলকাতার বহুতল বাড়ি থেকে এ ভাবেই ভেঙে পড়েছে জানলার কাচ ও কপাট। কলকাতার অবস্থাও খুব খারাপ।  

ক্ষতিটা শুধু মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা ও সুন্দরবন ও কলকাতায় হয়নি, তার সঙ্গে হাওড়া, হুগলি সহ আশপাশের সব জেলায় হয়েছে। এমনকী বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মতো জেলাতেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। এককথায় এমন বিপর্যয়ের মুখে পশ্চিমবঙ্গ কমই পড়েছে। 

কলকাতাতেই ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিলো ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার। আর মেদিনীপুর ও দুই ২৪ পরগনায় ১৫০ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার। সময় সময় তা ১৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছেছে। চতুর্দিকচারপাশকে ধ্বংস করতে করতে এগিয়েছে  আমফান।  তবে এখনও পর্যন্ত যে হেতু পুরো খবর আসেনি, তাই বোঝা যাচ্ছে না, কতটা ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে গিয়েছে আমফান। মমতা বলেছেন, ''আমফান আমাদের সর্বনাশ করে দিয়ে গিয়েছে। তিন-চারদিন লাগবে শুধু ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা জানতে। জল, বিদ্যুৎ এ সব দিতে ১০-১২ দিন অন্তত লাগবে।'' 

এখন সব চেয়ে চিন্তার বিষয় হলো, যে পাঁচ লাখ লোক আশ্রয়শিবিরে আছেন, যাঁরা এর বাইরে সর্বস্ব হারিয়ে বিপন্ন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের কী হবে? কতদিন ধরে তাঁদের সরকারি আশ্রয়ে থাকতে হবে? তাঁদের বাড়ি শুধু নয়, চাষের জমিও গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অনেক জায়গায়, বিশেষ করে সুন্দরবন ও তার কাছের এলাকায় নোনা জল ঢুকে পড়েছে। তাঁদের মাথার ওপর ছাদ এবং জীবীকা দুটোই শেষ করে দিলো আমফান। তাঁদের পাশে দাঁড়াবার জন্য সরকারের কাছে সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো টাকা। করোনার ফলে রাজ্যের অর্থনীতিতে প্রবল চাপ। তার ওপর আমফানের ধ্বংসলীলা। আবার পরিযায়ী লাখ লাখ শ্রমিক ফিরছেন বাংলায়। তাঁদেরও সাহায্য করতে হবে। স্বভাবতই বিপর্যস্ত ও বিষন্ন দেখাচ্ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্য়াকে। 

তাঁর আবেদন, এখন কেউ বেরবেন না। রাতে তো নয়ই। তা হলে আরও বিপদ হতে পারে। যাঁরা আশ্রয়শিবিরে আছেন, তাঁরা যেন কোথাও না যান। গিয়ে করবেনই বা কী। সব তো শেষ। তাই সরকার যতদিন না বলছে, ততদিন তাঁরা আশ্রয়শিবিরে থাকবেন।

ভোরের আলো ফুটলে বোঝা যাবে আমফান কীভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে রাজ্য়ের এলাকাগুলিকে। তাই সেই ভোর অন্তত পশ্চিমবঙ্গের জন্য কোনওভাবেই শুভ সকাল হবে না। বরং উদ্বেগের, আতঙ্কের, আশঙ্কার সকাল হবে। 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান