1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমফানের দাপটে লন্ডভন্ড সুন্দরবন

স্যমন্তক ঘোষ নতুন দিল্লি
২০ মে ২০২০

আমফানে ভয়াবহ পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবনে। জায়গায় জায়গায় ভেঙেছে নদী বাঁধ। নোনা জলে ডুবে গিয়েছে গ্রাম, চাষের জমি।

https://p.dw.com/p/3cXQK
ছবি: DW/D. Dey

আয়লার পরে এমন ঝড় দেখেনি পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন। আমফানের তাণ্ডবে সুন্দরবনের বহু এলাকা কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। ভেঙে গিয়েছে জেটি। মাটিতে মিশে গিয়েছে বাড়ি। তবে সব চেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, বহু জায়গায় নদী বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে। একবার নোনা জল গ্রামে ঢুকে পড়লে নষ্ট হয়ে যাবে জমি। বন্ধ হয়ে যাবে চাষবাস।

বিকেল তিনটে

সাগর থেকে পি কে জানা ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইছে এলাকায়। পাটকাঠির মতো ভেঙে পড়ছে বড় বড় গাছ। বঙ্কিমনগর, কসতলা এলাকায় নদী বাঁধে ভাঙন ধরতে শুরু করেছে। স্থানীয় মানুষের ভয়, এরপর জোয়ার এলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। দুর্বল হয়ে পড়া নদী বাঁধ পুরোপুরি ভেঙে গেলে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করবে। নষ্ট হয়ে যাবে সমস্ত জমি। একই সময়ে সাগরের বটখালি থেকে জানা গিয়েছে বাঁধ ভেঙে সেখানে গ্রামে জল ঢুকতে শুরু করেছে। ঘোড়ামারার বাঁধ কোনও মতে টিকে থাকলেও বাঁধ ভাঙতে শুরু করেছে মনসাদ্বীপ, সুমতিনগরে। সাগরের অধিকাংশ মানুষকেই সরকারি সাইক্লোন সেন্টার অথবা স্কুলে তৈরি করা অস্থায়ী ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এলাকায় কত বাড়ি ভেঙেছে তার কোনও পরিসংখ্যানএখনও প্রশাসন দিতে পারেনি।

আমফানের আগে থমথমে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা

বিকেল সাড়ে তিনটে

গোসাবা থেকে পরিতোষ গিরি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, জোটিরামপুরে বাঁধ ভেঙে গ্রামে জল ঢুকে গিয়েছে। রাঙাবেলিয়া, মন্মথনগরে বাঁধ উপচে জল ঢোকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর পর জোয়ার এলে আর কিছু করার থাকবে না। বিকেল সাড়ে তিনটের সময় গোসাবায় ঝড়ের গতি ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার।

বিকেল চারটে

ভবসিন্ধু মন্ডল ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, লাক্সবাগান, সাতজেলিয়ায় ঝড়ের তাণ্ডব চলছে। গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫০ কিলোমিটার। তবে নদী বাঁধ অটুট আছে। কিন্তু জোয়ার এলে তা ভেঙে পড়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা। এলাকার সকলকেই বিভিন্ন শেল্টারে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে ভেঙে গিয়েছে কচুবেড়িয়ার জেটি। যার ফলে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাগরদ্বীপ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। কুলতলি, হিঙ্গলগঞ্জের বহু গ্রাম প্লাবিত। গোসাবা ব্লকের বেশ কিছু গ্রামেও বিকেলের পর থেকে জল ঢুকতে শুরু করেছে।

কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি এক দিনে বোঝা সম্ভব নয়। ঝড়বৃষ্টি না থামলে বহু এলাকায় ঢোকাই যাবে না। কত জায়গায় নদী বাঁধ ভেঙেছে, এখনই তার আন্দাজ পাওয়াও মুশকিল। বুধবার সকালেই সুন্দরবনের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে বলেছিলেন ঝড় এবং জোয়ার একসঙ্গে এলে সুন্দরবনের এক হাজার কিলোমিটার নদী বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে পড়বে। এ বিষয়ে বিকেলে তাঁর সঙ্গে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। সাংবাদিক মিলন দত্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আয়লার পরে আরও একবার তছনছ হয়ে গেলো সুন্দরবন। বহু জায়গা থেকে বাঁধ ভাঙার খবর পেয়েছি। নোনা জল চাষের জমিতে ঢুকে পড়লে সুন্দরবনের মানুষ অর্থনৈতিক ভাবে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বেন।'' দীর্ঘ দিন ধরে সুন্দরবন নিয়ে কাজ করছেন এনজিও কর্মী অজন্তা দে। ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''ঝড়ের দাপটে বহু জায়গায় বাড়ি ভেঙে গিয়েছে। জেটি ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি সামলে নেওয়া যাবে। কত জায়গায় বাঁধ ভাঙলো সেটাই দেখতে হবে। সকালের আগে তা বোঝা মুশকিল। নোনা জল গ্রামে ঢুকে গেলে চাষবাস সব বন্ধ হয়ে যাবে। সেটাই সব চেয়ে চিন্তার বিষয়।''

আয়লায় ঠিক এ ঘটনাই ঘটেছিল। প্রায় গোটা সুন্দরবন অঞ্চলে বাঁধ ভেঙে নোনা জল ঢুকে গিয়েছিল জমিতে। এমনিতেই সুন্দরবনে জলস্তর ওপরে। ডাঙায় মাটির বাঁধ তৈরি করে সেই নদীর জল থেকে গ্রামগুলোকে আলাদা করে রাখা হয়। যেহেতু সুন্দরবনের নদীর জল নোনা, তাই সেই জল একবার চাষের জমিতে ঢুকে গেলে বহু দিনের জন্য কৃষি বন্ধ হয়ে যায়। আয়লার পরে বাঁধ তৈরির জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা সরকার প্রণোদনা দিয়েছিল। আমফান এসে সেই সমস্ত ব্যবস্থাটাকেই আবার ভেঙে দিল বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো