বাংলাদেশে আঘাত হেনেছে আমফান
২০ মে ২০২০ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার দুপুরের পর বঙ্গোপসাগরের পূর্বদিকে সুন্দরবন ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে আছড়ে পড়ে৷ স্থলভাগে উঠে আসার প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় তাণ্ডব চালাতে চালাতে আমফান বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়৷
ঘূর্ণিঝড় আমফান বিকাল ৫টার দিকে উপকূলের বাংলাদেশ অংশে পৌঁছায় বলে জানান আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান৷ বলেন, এটি ভারতের সাগারদ্বীপের পাশ দিয়ে সুন্দরবন ঘেঁষে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ভূভাগে উঠে আসে৷
ওই সময় এর কেন্দ্রের কাছে বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০ থেকে ১৮০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝেড়ো হাওয়ার আকারে ২০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল৷
ঘূর্ণিঝড় আমফানের ব্যস প্রায় ৪০০ কিলোমিটার জানিয়ে মান্নান বলেন, ‘‘পুরোপুরি স্থলভাবে উঠে আসতে এটির ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে৷ এর প্রভাবে বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হতে পারে৷’’
স্থলভাগে উঠে আসার পর বৃষ্টি ঝরিয়ে আমফানের শক্তিক্ষয় শুরু হলেও এখনো গতি কমেনি৷
গত ১৬ মে নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়া আমফান এক পর্যায়ে শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হয়েছিল৷ বঙ্গোপসাগরের এ শতাব্দীর প্রথম সুপার সাইক্লোন ছিল এটি৷ কিন্তু উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে আসতে কিছুটা শক্তি হারিয়ে তা আবার অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়৷
ভারতীয় আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে আমফান পশ্চিমবঙ্গের দিঘার কাছাকাছি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করা শুরু করে৷ সে সময় এর অবস্থান ছিল ভারতের সাগরদ্বীপ থেকে ৩৫ কিলোমিটার, দিঘা থেকে ৬৫ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ২২৫ কিলোমিটার দূরে৷
এদিকে, আমফানের প্রভাবে ঝড়ো বাতাসে ভোলায় গাছ চাপায় এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
ছিদ্দিক ফকির (৭০) নামের ওই বৃদ্ধ মোটরসাইকেল ভাড়া করে বয়স্ক ভাতা তুলতে যাচ্ছিলেন৷ পথে গাছ ভেঙে তার উপর পড়ে৷ গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে তার মৃত্যু হয়৷
আমফানের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের পানির উচ্চতা বেশি হওয়ায় পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বলেশ্বর নদের মাঝের চরে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয় ও ফসলের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে৷
পাশের জেলা বরগুনার তিনটি প্রধান নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে৷ স্বাভাবিকের তুলনায় নদীর পানি অন্তত ৬/৭ ফুট বেড়ে গেছে৷ নোয়াখালীতে ‘অস্বাভাবিক জোয়ারে’ বেড়িবাঁধ ভেঙে পাঁচ শতাধিক বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে৷
আমফান বাংলাদেশে আঘাত হানার আগেই উপকূলের বিপদজনক এলাকা থেকে প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়৷ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে উপকূলীয় এলাকার স্কুল-কলেজ ভবনও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ পাঁচ লাখের বেশি গাবাদীপশুকেও নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে৷
ঘূর্ণিঝড় দুর্গতদের সাহায্যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এক হাজার ৯৩৩টি দল কাজ করছে বলে জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়৷