1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে

১৯ মে ২০২০

আমফানের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে পশ্চিমবঙ্গ। ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে কমলা সংকেত জারি করা হয়েছে। কলকাতাতেও ঝড়ের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

https://p.dw.com/p/3cRkV
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto

আমফানের প্রভাব টের পেতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ। দিঘা এবং সুন্দরবন-সহ পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী অঞ্চলে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সমুদ্র উত্তাল। সঙ্গে বৃষ্টিপাত। কলকাতাতেও মঙ্গলবার সকাল থেকে আকাশে ঘন মেঘ ছিল। বেলা যত বেড়েছে দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, বুধবার সারা রাত তিনি নিজের কার্যালয় নবান্নে থাকবেন এবং ঝড়ের প্রতি মুহূর্তের খবর নেবেন।আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, আমফান যত কাছে আসবে, ততই বৃষ্টির তীব্রতা বাড়বে এবং ঝোড়ো হাওয়ার দাপট বাড়বে। এ দিন বিকেলের পর থেকে ওড়িশা উপকূলে ব্যাপক বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বস্তুত, ভারতের একেবারে দক্ষিণে কণ্যাকুমারী থেকে শুরু করে পূর্ব উপকূলের প্রতিটি রাজ্যেই সোমবার বিকেল থেকে লাগাতার বৃষ্টি হচ্ছে। আবহবিজ্ঞান কেন্দ্র জানিয়েছে, বুধবার শেষ দুপুরে অথবা বিকেলে দিঘা উপকূলে সর্বশক্তি নিয়ে পৌঁছবে এই ঘূর্ণিঝড়। যার জেরে পূর্ব মেদিনীপুর, দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা এবং কলকাতায় প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কলকাতায় ঝড়ের তীব্রতা ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। ফলে সকলকে বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ভারতের বিশাখাপত্তনমে ডপলার রাডারের সাহায্যে সুপার সাইক্লোন আমফানের প্রত্যেক মুহূর্তের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিশাখাপত্তনম যে সর্বশেষ আপডেট দিয়েছে, তাতে বলা হয়েছে এই মুহূর্তে ওড়িশা উপকূলের পারাদ্বীপ থেকে ৪২০ কিলোমিটার, পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের দিঘা থেকে ৫৭০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশ উপকূলে খেপুপাড়া থেকে ৭০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে এই ঘূর্ণিঝড়। ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে এগিয়ে আসছে এই ঘূর্ণিঝড়। বুধবার শেষ দুপুরে অথবা বিকেলে দিঘা এবং হাতিয়ার মাঝখানে আছড়ে পড়বে আমফান।

হাওয়া অফিসের বক্তব্য, স্থলভূমিতে প্রবেশের আগে সামান্য হলেও শক্তি কমেছে এই ঘূর্ণিঝড়ের। সুপার সাইক্লোন থেকে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের পরিণত হয়েছে আমফান। দিঘা উপকূলে ঝড়টির গতিবেগ ১৫৫ থেকে ১৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সর্বোচ্চ গতি বা গাস্টিং গতি ১৮৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। এর ফলে উপকূল অঞ্চলে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছে প্রশাসন।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর মধ্যেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে উপকূল অঞ্চলে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। সকলকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সাইক্লোন সেন্টারগুলিকে তৈরি রাখা হচ্ছে। সুন্দরবনে সাইক্লোন সেন্টারগুলি এখন আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তা আবার সাইক্লোন সেন্টারে বদলে ফেলা হবে। মঙ্গলবার সকালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে টেলিফোনে আলোচনা হয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শাহ পশ্চিমবঙ্গকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গেও কথা বলেছেন। ক্যাবিনেট সচিব আমফান নিয়ে বিশেষ বৈঠকও করেছেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অফিসারদের সঙ্গে। বিকেলে মমতা জানিয়েছেন, উপকূল এলাকা থেকে বহু মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে করোনার কারণে বহু জায়গাতেই কাজে সমস্যা হচ্ছে। তবে বিভিন্ন এলাকায় ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট টিম পৌঁছে গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ওড়িশা উপকূল থেকেও গরিব পরিবারগুলিকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা সরকারের আশঙ্কা, ঝড়ে কাঁচা বাড়ি কার্যত মাটিতে মিশে যাবে। ফলে আগেই সেই সব বাড়ি থেকে লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া দফতর ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গ দুই রাজ্যেই কমলা সংকেত জারি করেছে। কলকাতা পোর্ট সমস্ত জাহাজকে নোঙর করার নির্দেশ দিয়েছে। সমুদ্রে থাকা জাহাজগুলির কাছেও বিপদ সংকেত পাঠানো হয়েছে।

১৯৯৯ সালে সুপার সাইক্লোনে কার্যত ধুলোয় মিশে গিয়েছিল ওড়িশা উপকূল। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই আমফানের সঙ্গে '৯৯ এর সেই ঝড়ের তুলনা করছেন। এবং সে কারণেই বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা প্রশাসন বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই, আবহ বিজ্ঞান কেন্দ্র)