‘অতি প্রবল’ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিচ্ছে আমফান
১৮ মে ২০২০ভারতের আবহাওয়া অফিস বলছে, ঝড়টি আরও শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে৷ তখন ঘণ্টায় বাতাসের গতিবেগ ২৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত উঠে যেতে পারে৷
আগামী বুধবার বিকাল বা সন্ধ্যা নাগাদ আমপানপশ্চিমবঙ্গের দীঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়ার মাঝামাঝি এলাকা দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগ৷ উপকূলে উঠে আসার সময় সেটির সামান্য শক্তিক্ষয় হবে৷
ঝড়টির উপকূলে উঠে আসার সময় নিয়ে ভারতের আবহাওয়া অফিসের সঙ্গে বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদরা কিছুটা দ্বিমত পোষণ করেছেন বলে জানায় ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
আবহাওয়াবিদদের মতে, মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে উপকূল অতিক্রম করতে পারে ঘূর্ণিঝড় আমফান৷
ঘণ্টায় ১৩ কিলোমিটার বেগে উত্তর দিকে এগিয়ে এসে সোমবার বাংলাদেশ সময় বেলা ১২টার দিকে আমফান পশ্চিম মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছিল৷
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, ওই সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল৷
আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘‘অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে এবং পরে দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে খুলনা ও চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে মঙ্গলবার শেষরাত থেকে বুধবার সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে৷’’
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ থাকায় বাংলাদেশের চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে৷ সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে৷
মঙ্গলবার রাতে আমপান বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে আশঙ্কায় ওই দিন বিকাল থেকেই নিচু ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া শুরু হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল৷
খুলনার বাগেরহাট জেলার স্থানীয় প্রশাসন থেকেও ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷ ঝড় আসার আগেই মাঠের বোরো ধান কেটে ঘরে তোলার জোর চেষ্টা চলছে৷ মঙ্গলবার রাত থেকে উপকূলীয় এলাকাসহ সারা দেশে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস৷ বলেছে, ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছাকাছি এলে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়বে৷ মাঠে পেকে যাওয়া বোরো ধান যাতে বৃষ্টিতে নষ্ট না হয়, সেজন্য দুর্যোগ শুরুর আগেই তা কেটে কৃষকের ঘরে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ৷ ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহারের পাশাপাশি মাইকিং করে কৃষকদের দ্রুত ধান কেটে ঘরে তুলতে বলা হয়েছে৷
এদিকে, বাংলাদেশ প্রতিদিনই নতুন করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যায় রেকর্ড হচ্ছে৷ এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়বে৷
এ অবস্থায় সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুর্গতদের আশ্রয় দিতে জেলার ২৩৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্কুল ও কলেজগুলো খোলা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷
এসএনএল/কেএম (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)