ধান কাটতে শ্রমিক আনার উদ্যোগ, বিতরণ হচ্ছে যন্ত্র
১৬ এপ্রিল ২০২০দেশে বোরো ধান কাটার ভরা মৌসুমে শ্রমিক সংকট নিরসণে অন্যান্য পেশার শ্রমিকদের ব্যবহারের পাশাপাশি কৃষি অধিদপ্তর ও প্রশাসন থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ করোনা সংকটে দেশের অর্থনীতিতে যে বিরূপ প্রভাব পড়তে যাচ্ছে তা মোকাবেলায় কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখার উপর জোর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷
হাওরে ধান কাটতে অন্য জেলার শ্রমিক আনার উদ্যোগ
করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে বাংলাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি গণপরিবহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷ ফলে সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে৷
এবছর হাওরে ফসল ভালো হওয়ায় কৃষকদের বুকে আশার সঞ্চার হয়েছিল৷ কিন্তু শ্রমিকের অভাবে তাদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ৷ ধরমপাশা উপজেলার সোনামরল হাওর এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘‘ফলন তো ভালো হইছিল৷ এখন ধান কাটতে গিয়া বিপদে আছি৷ বেপারি (শ্রমিক) পাইতেছি না৷ গত দুই দিন ধইরা মেঘও দিতাছে৷ ভয়ে আছি যদি বেশি মেঘ দেয় তাইলে হাওরের বাঁধ ভাইঙ্গা যাইবো৷''
এ অবস্থা অন্যান্য পেশার বেকার হয়ে পড়া শ্রমিকদের কাজে লাগানোর পাশাপাশি প্রশাসন থেকে শ্রমিক আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানায় বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, শ্রমিক আনতে তারা পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ভোলা, ময়মনসিংহ, সিলেট, নেত্রকোণাসহ আরো কয়েকটি জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন৷ এর মধ্যে শ্রমিকরা আসতেও শুরু করেছেন৷
‘‘বিভিন্ন জেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক এসেছেন৷ আরও ১২ হাজারের বেশি শ্রমিক কয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবেন৷ স্থানীয়ভাবে অন্য পেশার লোকজনও ধান কাটা শুরু করেছেন৷ কয়েক দিনের মধ্যে শ্রমিক সংকট কমে যাবে বলে আশা করছি৷''
প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক সুনামগঞ্জে ধান কাটতে আসেন৷ এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে শ্রমিক আসা কমে গেছে৷
শ্রমিক সংকট মোকাবেলায় উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসনও৷ স্থানীয় বালু শ্রমিক, পাথর শ্রমিকসহ অন্যান্য পেশার যেসব শ্রমিক অবরুদ্ধ দশায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন; জেলা প্রশাসন থেকে তাদের ধান কাটতে আসতে বলা হয়েছে৷
জেলা প্রশাসন থেকে ধান কাটতে যাওয়া শ্রমিকদের জন্য সরকারি ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷ যারা দূর থেকে আসবেন স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় তাদের রাতে থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷
বৃষ্টি শুরু হলে হাওরে বন্যা দেখা দিতে পারে আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন থেকে দ্রুত ধান কেটে নেয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷
ফরিদপুরে ধান কাটতে ভর্তুকিতে যন্ত্র
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলে এখনো বোরো ধান কাটা শুরু হয়নি৷ মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে মাসের মাঝামাঝিতে ফসল কাটা শুরু হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন কৃষক৷ তখন শ্রমিক সংকট দেখা দেওয়া নিয়ে তাঁরা কিছুটা চিন্তিত৷
এ বিষয়ে টেলিফোনে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী৷
তিনি জানান, এ বছর জেলার ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে৷ শ্রমিক সংকটের কথা মাথায় রেখে ৯টি উপজেলার জন্য ১০টি ‘কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার' মেশিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে৷ কৃষকরা ৫০ শতাংশ ভর্তুকিতে উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের অফিস থেকে সেই মেশিনগুলো ব্যবহার করতে পারবেন৷
‘‘এছাড়া ৯টি উপজেলায় ২১টি ধান কাটার মেশিন দেওয়া হয়েছে৷ জেলায় একটি রাইস ট্রন্সপ্ল্যানেটরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷''
ফরিদপুর অঞ্চলে এখন মূলত ক্ষেত থেকে পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহের কাজ চলছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা৷ বলেন, করোনা সংকটে দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান বা অটো রিকশা চালকরা বেকার হয়ে পড়েছেন৷ তাদের কৃষি শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা হবে৷ কৃষি অফিস থকে তাদের মধ্যে মাস্ক বিতরণ শুরু হয়েছে৷ যাতে তারা সুরক্ষার সঙ্গে মাঠে কাজ করতে পারেন৷ এছাড়া, ফসলের ক্ষেত বড় হওয়া শ্রমিকরা সহজেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে পারবেন৷
‘‘করোন সংকটে সারা বিশ্ব খাদ্যাভাবে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে৷ এ অবস্থায় আমরা কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছি৷ আউশ ধানের মৌসুম শুরু হবে৷ ধান উৎপাদন নির্বিঘ্ন করতে জেলার সাত হাজার কৃষককে এক বিঘা জমি চাষ করার মত উন্নত মানের আউশ ধানের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে৷''
দুশ্চিন্তায় শরীয়তপুরের কৃষক
চলতি বছর শরীয়তপুরে ২৬ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে৷ ১৫/২০ দিন পর থেকে ফসল কাটা শুরু হবে৷ করোনা পরিস্থিতির কারণে তখন শ্রমিক সংকট প্রকট হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর৷
কৃষকরাও ফসল ঘরে তোলা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন৷ শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া এলাকার কৃষক রফিক মিয়া ও হালিম বেপারি জানান, এই এলাকায় এমনিতেই শ্রমিক সংকট থাকায় বাইরের জেলা থেকে শ্রমিকরা এসে ফসল কেটে দেয়৷ কৃষকরা ফসল কাটার আগে উত্তরবঙ্গ থেকে (কুড়িগ্রাম, রংপুর, জামালপুর) শ্রমিক নিয়ে আসেন৷ কিন্তু এবার যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাইরের শ্রমিকরা আসতে পারবে না৷ ফলে ফসল ঘরে তুলতে গিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে তাদের৷