আন্তর্জাতিক শক্তিদের টানাপড়েনে মিয়ানমার
৩০ নভেম্বর ২০১১মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন বুধবার তাঁর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মিয়ানমার সফর শুরু করেছেন৷ সামরিক জান্তা পরিচালিত, আন্তর্জাতিক ভাবে বিচ্ছিন্ন দেশটির সরকারের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্বীকৃতি – হিলারি'র মিয়ানমার সফরের সূত্র ধরে এ কথা বলছেন অনেকেই৷ এই যেমন, ব্রিটেনের মিয়ানমার বিষয়ক অন্যতম মানবাধিকার সংস্থা ‘বার্মা ক্যামপেইন ইউকে'-এর মার্ক ফার্মানের৷
জানা গেছে, ক্লিন্টনের এই সফর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার আগে, দেশটির গণতন্ত্রের প্রতীক অং সান সু চি'র সঙ্গে সরাসরি টেলিফোনে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ মিয়ানমারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডকে অগ্রগতির ইঙ্গিত হিসেবেও অভিহিত করেন তিনি৷ স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে এর কারণ নিয়ে৷ হঠাৎ করে মিয়ানমার নিয়ে কেন এতো চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র?
বার্লিনের অন্যতম এশিয়া বিশেষজ্ঞ গ্যারহার্ড ভিল'এর কথায়, ‘‘আমার মনে হয়, এশিয়া প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের প্রাধান্য স্থাপন করাই এর মূল কারণ৷ বিশেষ করে চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা৷ চীনের দিকে আঙুল তুলে বলা যে, শুধু তারাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রেরও এ অঞ্চলের একটি দেশের ওপর প্রাধান্য রয়েছে৷''
মানবাধিকারকর্মী মার্ক ফার্মানের জানান, ‘‘ওবামার সাম্প্রতিক এশিয়া সফরেও এর একটা স্পষ্ট ঈঙ্গিত আমরা দেখতে পেয়েছি৷ অস্ট্রেলিয়াতে সৈন্য সংখ্যা বাড়ানো, এ অঞ্চলের ২১টি দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্যের ব্যাপারে অ্যামেরিকার উৎসাহ – এসবই চীন এবং ভারতের পাশাপাশি নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়৷''
অথচ মিয়ানমারে সংস্কার প্রক্রিয়া কিন্তু আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল৷ অব্যাহত আন্তর্জাতিক চাপের মুখে, গত বছর তাদের বেশ কিছু ক্ষমতা বেসামরিক সরকারের হাতে তুলে দেয় জান্তা সরকার৷ নতুন সেই সরকার মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সু চি'র ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি' বা এনএলডি-এর প্রতি খানিকটা নমনীয়তা প্রদর্শন করে৷ শুরু হয় রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের কাজ৷ ৩০০'রও বেশি রাজবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়৷ এমনকি, গত অগাস্ট মাসে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী নেত্রী অং সান সু চি'র সঙ্গে একান্তে কথা বলেন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন৷ সংস্কার করেন মিয়ানমারের নির্বাচনী আইনের৷
এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত হয় সু চি'র দল৷ আর দেশের পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন সু চি নিজে৷ বলেন, আসন্ন পার্লামেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে শীঘ্রই তিনি দেশের রাজনীতির সঙ্গে আবারো আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হতে যাচ্ছেন৷ এছাড়া, ২০১৮ সালে দক্ষিণ পূর্ব এশীয় দেশসমূহের জোট ‘আসিয়ান'-এর সভাপতি হতে যাচ্ছে মিয়ানমার৷ অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট পথ ধরেই গণতন্ত্রের ক্রমবিকাশ ঘটছিল সেখানে৷ এর মধ্যে, হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্রের এহেন মিয়ানমার প্রীতি তাই প্রশ্নবোধক চিহ্ন তুলেছে বিভিন্ন মহলে৷
ভুলে গেলে চলবে না, হিলারি ক্লিন্টন'এর এই সফর গত ৫০ বছরে মিয়ানমারে কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর৷ এরপরও অবশ্য, মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং সাবেক জান্তা সরকারের সদস্যদের অ্যামেরিকা ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ বহাল রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক