সামুদ্রিক অ্যালজি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
৩১ অক্টোবর ২০১৭জার্মানির হামবুর্গ শহরের একটি বাড়ির মধ্যে বায়ো-রিয়্যাক্টরে অ্যালজি চাষ হচ্ছে৷ চারিদিকে বুদবুদের স্পন্দন৷ অ্যালজি এমন বায়োমাস উৎপাদন করে, যা থেকে বায়োগ্যাস পাওয়া যায়৷ সেই জ্বালানি দিয়ে বাড়ির ৩০ জন বাসিন্দার জন্য শীতে ঘর গরম রাখা যায়৷
মার্টিন ক্যার্নার বিশ্বের প্রথম ‘অ্যালজি হাউস' উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা৷ সহকর্মীদের সঙ্গে তিনি রিয়্যাক্টরের দেওয়ালটিকে আরও উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছেন৷ সেইসঙ্গে বাড়ির সিস্টেমের সঙ্গে এই জ্বালানির সমন্বয় করতে হয়৷ পুরোটাই বাস্তব পরিস্থিতিতে এক পরীক্ষার মতো৷ মার্টিন বলেন, ‘‘গবেষণাকেন্দ্র হিসেবেও আমরা জায়গাটিকে কাজে লাগাচ্ছি৷ গবেষণা ও উন্নতির স্বার্থে আমরা সেরা বিষয়গুলি পরখ করে দেখছি৷ ছোট আকারে নয়, এখানে আমরা মনের সুখে পরীক্ষা চালিয়ে দেখতে পাচ্ছি, কীভাবে ও কতটা দক্ষতার সঙ্গে সবকিছু চলছে, কোথায় আরও উন্নতির অবকাশ রয়েছে – এখানেই সব প্রশ্নের উত্তর যাচাই করতে পারছি৷''
মার্টিন ক্যার্নারঅ্যালজি হাউস নিয়ে খুবই গর্বিত৷ ২০১৩ সালে নির্মাণের সময় থেকেই তিনি এই বাড়ির তত্ত্বাবধান করছেন৷ এই প্লান্ট শুধু উত্তাপ ও বায়োগ্যাস উৎপাদন করে না৷ এক বিশেষ সিস্টেমের মাধ্যমে বর্জ্য পানি অপচয় না করে আবার কাজে লাগানো যায়৷ মার্টিন ক্যার্নার বলেন, ‘‘আমরা বাড়ির বর্জ্য পানি রিসাইকেল করি এবং সেই প্রক্রিয়ায় মিথেন গ্যাস উৎপাদন করি৷ পানি ও পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে আবার বায়ো রিয়্যাক্টরে কাজে লাগাতে পারি৷ বাড়ির মধ্যেই এক সার্কুলেশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে৷ সেখানে বর্জ্য এবং উত্তাপ ও কাঁচামাল সৃষ্টির প্রক্রিয়া পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে৷''
হামবুর্গ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণাকেন্দ্রে অ্যালজি রিয়্যাক্টরের প্রটোটাইপ রয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ প্রযুক্তি ও জ্বালানি বিভাগের ক্যার্স্টিন কুচা অ্যালজি হাউসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করেন৷ ক্যার্স্টিন বলেন, ‘‘অত্যন্ত প্রাথমিক স্তরে অ্যালজি হাউস তৈরি করা ছিল এক সাহসি সিদ্ধান্ত৷ অ্যালজি সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান ছিল, কাউকে না কাউকে বড় আকারে এই পদক্ষেপ নিতেই হতো৷ পরিস্থিতি অনুযায়ী অবশ্যই বেশ কিছু রদবদল করতে হয়েছে৷ তবে অগ্রসর হবার এটাই একমাত্র পথ ছিল৷''
জ্বালানি উৎপাদন প্রক্রিয়ার উন্নতি করতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনের কাজ চলছে৷ ক্যার্স্টিন কুচা বলেন, ‘‘আমরা যখন এখানকার মতো অ্যালজি চাষ করি, তখন সবার আগে তেল, জ্বালানি অথবা সূক্ষ্ম রাসায়নিকের দিকে নজর দেই৷ অ্যালজি থেকে সেসব বের করে নিলে কার্যত সবুজ ও অন্যান্য রংও বেরিয়ে যায়৷ তখন যে সাদা অংশ অবশিষ্ট থাকে, তা বায়োগ্যাসে রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত৷''
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বায়োগ্যাস প্লান্টে ক্যারস্টিন কুচা এই প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করতে পারেন৷ অ্যালজির সুবিধা হলো, তা দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে৷ ফলে বায়োগ্যাসের জন্য যথেষ্ট রসদ পাওয়া যায়৷ অ্যালজি থেকে জ্বালানি উৎপাদনের প্রক্রিয়া এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে৷ জার্মানির ক্যোটেন শহরে কারোলা গ্রিল পরীক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের পুকুর থেকে তাজা অ্যালজি সংগ্রহ করেন৷ তিনি এমন এক প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন, যার সাহায্যে গাছ বেড়ে ওঠার সময়ই কোনো ক্ষতি না করে তেল বের করে নেওয়া যায়৷
এর ফলে অ্যালজি থেকে জ্বালানি উৎপাদন অনেক সহজ হয়ে উঠেছে এবং ব্যয়ও কমে গেছে৷ তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও আর্জেন্টিনার মতো দেশ এই প্রযুক্তির বিকাশে বিনিয়োগ করলেও জার্মানিতে এই গবেষণার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা কঠিন৷ অ্যালজি বায়োটেকনোলজিস্ট কারোলা গ্রিল বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে এই প্রযুক্তি এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত হয়নি৷ জ্বালানি উৎপাদন হচ্ছে না, ব্যয়ভারও অত্যন্ত বেশি৷ তবে আন্তর্জাতিক স্তরে পাল্লা দিতে হলে জার্মানিকেও অনেক অর্থ বিনিয়োগ করতে হবে৷''
জার্মানি কি শেষ পর্যন্ত এ ক্ষেত্রে হার মানবে? অন্যান্য দেশগুলি অ্যালজি থেকে জ্বালানি উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা দেখছে এবং বাণিজ্যিকভাবে টেকসই পদ্ধতি সৃষ্টির লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলছে৷
আনা ফ্ল্যুগার/এসবি