ড্রোনের সাহায্যে উদ্ভিদভিত্তিক জ্বালানি
৩০ নভেম্বর ২০১৩বিকল্প উদ্ভিদের সন্ধান
জার্মানির ইয়ুলিশ গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ড্রোন-এর সাহায্যে উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন৷ উদ্দেশ্য, নতুন ধরনের গাছপালা থেকে জ্বালানি উৎপাদন৷ বায়ো জ্বালানি উৎপাদনের জন্য কোন উদ্ভিদ সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে, গবেষকরা উপর থেকে তোলা ছবি দেখে তা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারেন৷ অবশ্যই আবহাওয়া ভালো থাকতে হবে৷
উদ্ভিদ গবেষক উলরিশ শ্নুয়র বলেন, ‘‘প্রথমে সরাসরি, তারপর ড্রোনের তোলা ছবি দেখতে বেশ মজা লাগে৷ সেই ছবি মূল্যায়ন করে তথ্য সংগ্রহ করা আমাদের জন্য অবশ্যই আরও রোমাঞ্চকর৷''
ইয়ুলিশ-এর হেলমহলৎস কেন্দ্রে গবেষণার অন্যতম প্রধান বিষয় হলো জ্বালানি সরবরাহের ভবিষ্যৎ৷ যেমন উদ্ভিদ থেকে জ্বালানি আদায় করা৷ প্রশ্ন হলো, কোন ধরনের উদ্ভিদ সবচেয়ে দ্রুত ও সমান হারে বেড়ে ওঠে৷ উলরিশ শ্নুয়র বলেন, ‘‘উপর থেকে তোলা এমন সব ছবি সাধারণত দেখতে পাওয়া যায় না৷ সামনে দাঁড়িয়ে দেখলে শুধু খেতের সাধারণ অবস্থা বোঝা যায়৷ উপর থেকে দেখলে বোঝা যায় ফসল কতটা সমান৷''
সার্বিক প্রচেষ্টা
বিভিন্ন ওয়েভলেন্থ বা তরঙ্গদৈর্ঘ্যে তোলা ছবি থেকে গবেষকরা বুঝতে পারেন, উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া কত ভালোভাবে কাজ করছে, তাদের কতটা পুষ্টির প্রয়োজন বা কত তাড়াতাড়ি তারা বেড়ে ওঠে৷
আসল চ্যালেঞ্জ হলো, জ্বালানির কাজে উদ্ভিদ ব্যবহার করলে তা যেন খাদ্যশস্যের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা বেদখল না করে৷ উত্তর আমেরিকার ‘কাপ প্লান্ট'-এর মতো উদ্ভিদ এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে৷ উলরিশ শ্নুয়র বলেন, ‘‘এমন সব উদ্ভিদের সাহায্যেই আমরা এই সংঘাত এড়ানোর চেষ্টা করছি৷ যে জমি খাদ্যশস্য উৎপাদনের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, সেখানেও এমন উদ্ভিদের চাষ করা যেতে পারে৷''
এক গ্রিনহাউসের মধ্যে গবেষকরা পরীক্ষামূলকভাবে উদ্ভিদের বিকাশ পর্যবেক্ষণ করছেন৷ দিনে ৫০০টি গাছ, একেবারে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায়৷ সবচেয়ে কঠিন পরিবেশে সবচেয়ে বেশি ফসল ফলাতে পারে – এমন উদ্ভিদ শনাক্ত করাই তাঁদের মূল উদ্দেশ্য৷
শিকড়ের বৃদ্ধিই এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ৷ এক কম্পিউটার টোমোগ্রাফিতেই তা দেখা যাচ্ছে৷ জ্বালানি উৎপাদনকারী উদ্ভিদের শক্তিশালী শিকড় থাকা চাই, যাতে ফসল তোলার পর গাছ আবার তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠতে পারে৷
নেটওয়ার্ক গঠন
উলরিশ শ্নুয়র ৪টি গবেষণা কেন্দ্র ও বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে এক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন৷ সবাই মিলে তাঁরা তাঁদের মৌলিক জ্ঞান কাজে লাগাতে চান৷
বিজ্ঞানীদের মতে, আধুনিক উদ্ভিদ গবেষণা ক্ষেত্রে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷ খাদ্যের চাহিদা মিটিয়েও উদ্ভিদ পেট্রোলিয়ামের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন৷ উলরিশ শ্নুয়র বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে আমরা বিভিন্ন উদ্ভিদ কাজে লাগাবো৷ জ্বালানি ও খাদ্য উৎপাদনের কাজে যে সব উদ্ভিদ কাজে লাগানো যেতে পারে, সেগুলি খতিয়ে দেখবো৷ এমন বৈচিত্র্য এসে গেলে তখন আর কোনো একটি উদ্ভিদ বেছে নিতে হবে না, যা একাই সব পারে৷ বিভিন্ন কাজে আলাদা উদ্ভিদ কাজে লাগানো হবে৷''
প্রচলিত শস্যগুলি ভবিষ্যতে আর জ্বালানি উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হবে না৷ খাদ্য উৎপাদনের সময়ে উদ্বৃত্ত উপকরণগুলিকে কাজে লাগাতে চান গবেষকরা৷ যেমন খড় থেকেও জ্বালানি বের করা সম্ভব, যা পেট্রোলে মেশানো যায় বা বায়ো এথানল হিসেবেও কাজে লাগানো যায়৷
ইয়ুলিশ কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা এমন উদ্ভিদ থেকে জ্বালানি উৎপাদনের কাজে মন দিচ্ছেন, যা অনুর্বর জমিতেও বেড়ে উঠতে পারে৷ ফলে খাদ্য উৎপাদনের উপযুক্ত উর্বর জমির প্রয়োজন হবে না৷ ভবিষ্যতে খেত থেকে জ্বালানি উৎপাদনে উৎসাহ দিচ্ছে জার্মান সরকারও৷ গবেষণার কাজে ২৪০ কোটি ইউরো অনুদান দেয়া হচ্ছে৷
প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশেও কি ড্রোনের এমন ব্যবহার প্রয়োজন? ফেসবুকে মতামত জানান #অন্বেষণ অথবা #Onneshon হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে৷
বিশেষ ঘোষণা: এই সপ্তাহের অন্বেষণ কুইজে অংশ নিতে ক্লিক করুন এখানে