বর্জ্য থেকে জ্বালানি
২৭ এপ্রিল ২০১৫প্রতি বছর লাখ লাখ টন নর্দমার জল ও কাদা ফেলে দেওয়া হয়৷ নষ্ট হয় খড় ও কৃষিজাত আবর্জনাও৷ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উৎপাদনের সময় এই সব বর্জ্য সৃষ্টি হয়৷ সেই সঙ্গে মূল্যবান জ্বালানিরও অপচয় ঘটে৷
জার্মানির ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউট-এর কর্মীরা নতুন ধরনের এক অরগ্যানিক জ্বালানি প্লান্ট তৈরি করেছেন, যার মধ্যে উদ্ভিদজাত ও প্রাণীজ বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন করা যায়৷ নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে থার্মাল-কেমিকাল রূপান্তর প্রক্রিয়ায় অরগ্যানিক বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও উত্তাপ সৃষ্টি করা যায়৷ যে কোনো কঠিন বা তরল কাঁচামাল ব্যবহার করা চলে৷ তবে ছোট দলার মতো আয়তন হলে তা পরিবহণের জন্য সুবিধাজনক হয়৷ ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের আন্দ্রেয়াস হরনুং বলেন, ‘‘আলাদা করে উৎপাদন করতে হয় – এমন কোনো বায়োজেনিক উপকরণ ব্যবহার করা চলে না৷ আমরা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে পাওয়া বর্জ্য কাজে লাগাই৷ গরুর গোবর ও শুয়রের মলও ব্যবহার করা হয়৷ তাতে খড়কুটার মতো কৃষিজাত বর্জ্য মেশানো থাকলেও কোনো সমস্যা নেই৷''
এই প্লান্ট প্রায় সব কিছুই গিলে ফেলে৷ এই সব অবশিষ্ট উপকরণ দিয়ে ই্ঞ্জিনে ব্যবহারের যোগ্য তেল, গ্যাস ও উচ্চ মানের বায়োচার তৈরি করা যায়, যা বিক্রি বা বণ্টন করা সম্ভব৷ হরনুং বলেন, ‘‘এই তেল ইঞ্জিন চালাতেও ব্যবহার করা যায়৷ গ্যাস দিয়ে পরিশোধন প্লান্ট চালানো যায়৷ হাইড্রোজেন বার করে রাসায়নিক শিল্পে কাজে লাগানো যায়৷ বায়োচারও জ্বালানো যায়, গুদামে রাখা যায়৷ কৃষিকাজেও এই সব উপকরণ কাজে লাগানো যায়৷''
অরগ্যানিক আবর্জনা পাইপের মাধ্যমে এক চুল্লিতে চলে যায়৷ অক্সিজেন-বিহীন পরিবেশে ৫০০ ডিক্রি সিলসিয়াস তাপমাত্রার বেশি উত্তাপে তা বাষ্প ও বায়োচারে রূপান্তরিত করা হয়৷ তার পরের ধাপে সেই বাষ্প ও বায়োচার আরও ‘এনরিচ' করা হয়৷ তারপর বাষ্প ঠান্ডা করা হয়৷ তখন অরগ্যানিক তেল ও গ্যাস তৈরি হয়৷
অরগ্যানিক কয়লায় কার্বন ছাড়াও উদ্ভিদজাত পুষ্টি থাকে – যেমন ফসফেট, নাইট্রোজেন ও ক্যালসিয়াম৷ ফলে তা সার হিসেবে খুবই ভালো৷ কিন্তু শুধু সে কারণেই এটি কৃষিকাজের উপযুক্ত নয়৷ হরনুং বলেন, ‘‘এগুলি জমির মানের উন্নতির জন্যও ব্যবহার করা যায়৷ ভারতে প্রথম পরীক্ষায় পেঁয়াজ ও ক্যাপসিকামের ফলন অনেক বেড়ে গেছে৷ তবে এমন সব দেশে বেশি পরিমাণ উৎপাদন বড় বিষয় নয়৷ আরও কম পরিমাণ জল ব্যবহার করে একই ফলন আরও বেশি জরুরি৷''
অরগ্যানিক জ্বালানি প্রযুক্তি এমন সব দেশের জন্য উপযুক্ত, যেখানে পরিবেশের ক্ষতি না করে বেড়ে চলা জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব৷ বিঘ্ন ঘটলেও প্লান্টের মধ্যে থার্মাল রূপান্তর প্রক্রিয়ার ক্ষতি হয় না৷ এ সব দেশে অরগ্যানিক বর্জ্যেরও অভাব নেই৷ হরনুং বলেন, ‘‘শুধু উত্তর ভারতেই দু'টি ফলনের মধ্যে যে ঘাটতি হয়, তার সমান পরিমাণ খড় জার্মানিতে পাওয়া যায়৷ ভারত, ব্রাজিল ও আফ্রিকায় আমরা এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি৷ ১০ থেকে ৩০টি বাড়ির জন্য ৩০ কিলোওয়াটের ছোট ইউনিট থেকে শুরু করে ছোটখাটো শহরের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে৷''
এই প্লান্টে তৈরি উচ্চ মানের তেল ও গ্যাস স্থানীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে এক জেনারেটারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও উত্তাপে রূপান্তরিত করা সম্ভব৷ এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করলে অত্যন্ত কম জায়গায় জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব৷
পরিবেশের ক্ষতি না করে নতুন এই প্রযুক্তি জ্বালানি উৎপাদন করে৷ বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে বা সৌর ও বায়ুশক্তির ঘাটতি পূরণ করতে এটি কাজে লাগানো যায়৷ শুধু অরগ্যানিক বর্জ্য থেকেই তা করা সম্ভব৷