শরীর যদি নিজেই রোগের চিকিৎসা করতে পারতো!
২৭ নভেম্বর ২০১৮আরএনএ-র সাহায্যে কি অত্যাধুনিক ওষুধ সৃষ্টি করা সম্ভব? গোটা বিশ্বে গবেষকরা সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন৷ জার্মানির ট্যুবিঙেন শহরের এক গবেষণাগারে বিজ্ঞানীরা এইঅণুর রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করছেন৷ বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এর নাম ‘মেসেঞ্জার আরএনএ'৷ সেটির মাধ্যমে শরীর সম্ভবত তার নিজের চিকিৎসা নিজেই করতে পারবে৷
জীববিজ্ঞানী মারিওলা ফোটিন-ম্লেচেক বলেন, ‘‘মেসেঞ্জার আরএনএ এক অসাধারণ অণু৷ বলা যায়, প্রকৃতিই চিকিৎসার এজেন্ট হিসেবে এটি সৃষ্টি করেছে৷ সেটি আমাদের কোষগুলিকে মলিকিউলার ব্লুপ্রিন্ট দেয়৷ তা অনুসরণ করে কোষ যে কোনো ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করতে পারে৷ এই প্রোটিন এমনকি মানুষের নিজস্ব নয়৷ সেগুলি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস থেকে আসে৷ সে কারণে মেসেঞ্জার আরএনএ-কে থেরাপিউটিক এজেন্ট হিসেবে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা যায়৷ ইমিউন সিস্টেম ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া থেকে আসা প্রোটিনকে হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করতে শেখে এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে৷ প্রকৃতির মধ্যেই এমন দৃষ্টান্ত রয়েছে৷ আমরা আরএনএ-কে রাসায়নিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন করি না, বরং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার উপাদান খুঁজে তা পরে আরএনএ-র মধ্যে ঢুকিয়ে দেই৷ এভাবে সেই অণুর কিছু বৈশিষ্ট্যের উন্নতি করি৷''
গবেষকদের মতে, বায়োমলিকিউলের মধ্যে বিপুল সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে৷ ক্যানসার চিকিৎসা, প্রতিষেধক, সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে স্থিতিশীল টিকা তৈরির ক্ষেত্রে তা ব্যবহার করা যাবে৷ বায়োকেমিস্ট হিসেবে ফ্লোরিয়ান ফন ডেয়ার ম্যুলবে বলেন, ‘‘আরএনএ উৎপাদনের প্রধান সুবিধা হলো, আমরা এর মাধ্যমে আসলে এক প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টির কথা বলছি৷ যে অণুকেই লক্ষ্যবস্তু করা হোক না কেন, সেটিকে ছাড়াই আমরা একই উৎপাদন কার্যপ্রণালী ব্যবহার করছি৷ ক্যানসারের টিকা হোক, বা প্রতিষেধক টিকা হোক, উৎপাদন প্রক্রিয়া সব সময়ে একই থাকে৷ সেই প্রক্রিয়াকে যে তথ্য দেওয়া হয়, শুধু সেটাই পরিবর্তন করা হয়৷''
২০১৪ সালে এই গবেষণার কনসেপ্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রথম ‘ইনোভেশন ইনডিউসমেন্ট' পুরস্কার জিতে নিয়েছিল৷ যে সব ইউরোপীয় উদ্ভাবনকারী নির্দিষ্ট কিছু সমস্যার সমাধানে যুগান্তকারী দিশা দেখাচ্ছেন, তাঁরা এই পুরস্কার পান৷
বিজ্ঞানীরা বর্তমানে এই প্ল্যাটফর্মের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনার দিকে নজর দিচ্ছেন৷ প্রস্টেট ক্যানসারের মতো রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাঁরা উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন৷ কিওর ভ্যাক কোম্পানির কর্ণধার ইংমার হ্যোর বলেন, ‘‘এই উদ্যোগ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগের পথে প্রাথমিক পদক্ষেপ৷ এর সীমাহীন সম্ভাবনা রয়েছে৷ সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, এই গবেষণাকে কীভাবে প্রয়োজনীয় পণ্যে রূপান্তরিত করা যায়? বাজারে কবে ওষুধ আনতে পারবো? বর্তমানে ক্যানসার রোগীদের উপর পরীক্ষা চলছে৷ প্রথম পদক্ষেপগুলির ফলে উপকার পাওয়া যাচ্ছে৷ এই সব গবেষণা সত্যি চূড়ান্ত হলে আমাদের এই প্রযুক্তির ভিত্তিতে প্রথম ওষুধ বাজারে আনার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো৷''
ফুসফুসের ক্যানসারের মোকাবিলা ও সাধারণ পরিবেশে প্রতিষেধক টিকা সৃষ্টির মতো চিকিৎসার ক্ষেত্রেও দ্রুত সাফল্যের আশা করা হচ্ছে৷