ছড়িয়ে পড়ছে স্লো ফুড আন্দোলন
২০ মার্চ ২০২৪উগান্ডার এডওয়ার্ড মুচিবি পুষ্টিকর খাদ্য সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়ে পৃথিবীর পরিস্থিতির উন্নতি করার ব্রত নিয়েছেন৷ স্লো ফুড ইন্টারন্যাশানালের কর্ণধার, হিসেবে তিনি বলেন, ‘‘আমি স্লো ফুড ইন্টারন্যাশানালের প্রেসিডেন্ট৷ আমি উগান্ডার চাষি ও কৃষিবিদ৷ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ যাতে ভালো, পরিষ্কার ও ন্যায্য খাদ্যের নাগাল পায় এবং উপভোগ করে, সেটাই আমার লক্ষ্য৷''
মাত্র ৩৬ বছর বয়সে এডওয়ার্ড ‘স্লো ফুড' নামের প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে রয়েছেন৷ কয়েক বছরের মধ্যে ১৬০টি দেশে তাঁর প্রতিষ্ঠান পা রেখেছে৷ তিনি বছরে কয়েক বার ব্রা শহরে সেই আন্দোলনের সদর দফতরে যান৷ মুচিবি মনে করেন, ‘‘উগান্ডার একজন আফ্রিকান হিসেবে আমার কাছে স্লো ফুডের অর্থ তৃণমূল স্তরে এমন এক নেটওয়ার্ক, যা খাদ্য সার্বভৌমত্ব গড়ে তুলতে স্থানীয় সমাজের সঙ্গে কাজ করে, সহায়তা করে৷ আমরা চাষি, তরুণ প্রজন্ম, আদিবাসি সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করি৷''
আফ্রিকার পূর্বে উগান্ডার কিগোবা শহর এডির জন্মস্থান৷ সাধারণ পরিবারের সন্তান হিসেবে তরুণ বয়সেও তিনি খেতে কাজ করতেন৷ তখন তিনি ভাবতেও পারেননি, যে টেকসই কৃষি পদ্ধতি কোনো একদিন তাঁর জীবনের লক্ষ্য হয়ে উঠবে৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এডওয়ার্ড মুচিবি বলেন, ‘‘আমাকে স্কুলের শাস্তি হিসেবে চাষ করতে হতো৷ কিন্তু পরিবর্তন আনতে সেই শাস্তি আমার জীবনের লক্ষ্য ও চালিকাশক্তি হয়ে উঠলো৷''
২০০৬ সালে উগান্ডায় স্লো ফুডের সূচনা ঘটেছিল৷ নোয়েল নানইয়ুনজা নামের চাষির খেত কিবোগার স্লো ফুড গ্রুপের মডেল হয়ে ওঠে৷ উদ্ভাবনী চাষের পদ্ধতি ও চিরায়ত ঐতিহ্যের মধ্যে মেলবন্ধন বাকিদেরও প্রেরণা জুগিয়েছিল৷ এডওয়ার্ড মুচিবি বলেন, ‘‘অনেক গাছ লুপ্ত হতে চলেছে৷ অনেক পদ্ধতি, অনেক খাদ্য সংস্কৃতিও হারিয়ে যাচ্ছে৷ স্লো ফুড নেটওয়ার্ক প্রতিদিন সেগুলি বাঁচানো ও সংরক্ষণের কাজ করছে৷ স্লো ফুড প্রক্রিয়ার মাধ্যমে স্থানীয় সম্প্রদায় লুপ্তপ্রায় পণ্য শনাক্ত করতে পাচ্ছে৷''
স্লো ফুড উগান্ডার সদস্যসংখ্যা ৩০,০০০-এরও বেশি৷ অনেক জায়গায় সেই প্রতিষ্ঠান সক্রিয়৷ তাদের কার্যকলাপের মধ্যে স্লো ফুড গার্ডেন্স, স্লো ফুড ইয়ুথ নেটওয়ার্ক এবং স্থানীয় পণ্যের ফার্মার্স আর্থ মার্কেট এবং তথাকথিত শেফস অ্যালায়েন্সও রয়েছে৷ সেই উদ্যোগ সম্পর্কে মুচিবি বলেন, ‘‘কুক্স অ্যালায়েন্সে যোগ দিতে হলে সবার আগে রাঁধুনীদের আকাঙ্ক্ষা এবং খাদ্য প্রণালীতে পরিবর্তনের তাগিদ থাকতে হবে৷''
বেটি নাকাটো এক ক্যাটারিং পরিষেবা চালান৷ প্রায় সাত বছর ধরে তিনি স্লো ফুডের সঙ্গে যুক্ত৷ সেই সময়কালে তিনি চিরায়ত পদগুলি রান্নার শিল্পের প্রতি মনোযোগ দিয়েছেন৷ বেটি মনে করেন, ‘‘ঐতিহ্যবাহী খাদ্য আমাদের সত্যি আমাদের সংস্কৃতি আরো বড় আকারে গ্রহণ করার সুযোগ করে দিয়েছে৷ আমরা একাত্মতার অনুভূতি পাচ্ছি৷ স্লো ফুডের এই উদ্যোগের জন্য আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ৷ এই সংস্কৃতি বিলুপ্ত হবার বদলে খাদ্যের ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষমতায়ন করছে৷''
ইটালির উত্তরে পিয়েদমন্ট স্লো ফুড আন্দোলনের উৎস৷ ওয়াইন, হেজেলনাট বাদাম, ট্রাফেল ছত্রাক ও অন্যান্য আঞ্চলিক কৃষিপণ্যের জন্য জায়গাটি বিখ্যাত৷
সেই সংগঠনের দূরদর্শী প্রতিষ্ঠাতা কার্লো পেত্রিনি কয়েকজন অ্যাক্টিভিস্টের সঙ্গে ইটালির ফাস্ট ফুড চেইনগুলির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়েছেন৷ ১৯৮৬ সালে মূল আন্দোলন শুরু হয়৷ কাকতালীয়ভাবে সে বছরই এডওয়ার্ড মুচিবি জন্মগ্রহণ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘কার্লো পেত্রিনির মতো বড় মানুষের কাছ থেকে নেতৃত্ব গ্রহণ করা একটা চ্যালেঞ্জ৷ আমার কাছে সেটা শিক্ষার এক সুযোগও বটে৷ আমার মনে হয়, আমার অনেক কিছু দেওয়ার আছে৷ বিশ্বের সঙ্গে আমার দেশের, আমার সম্প্রদায়ের, আমার মহাদেশের অনেক অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে চাই৷ একমাত্র এভাবেই আমরা উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে বেড়ে চলা ব্যবধান দূর করতে পারি৷''
ইটালির ব্রা শহরে স্থানীয় কৃষিপণ্য নিয়ে চাষিদের হাট বসেছে৷ এমন জায়গায় কৃষিবিদ হিসেবে এডোয়ার্ড স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন৷ তিনি সেখানকার স্লো ফুড বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘ব্রা আমাকে অন্যান্য সংস্কৃতি, অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আদানপ্রদানে সাহায্য করেছে৷ সেইসঙ্গে স্লো ফুডের ঐতিহাসিক জন্মস্থানের চেতনা বোঝাও আমার কাছে সহজ হয়েছে৷''
স্লো ফুড বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে৷ এডি সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের অ্যাক্টিভিস্টদের সঙ্গে মিলিত হন৷ তিনি শিক্ষা ও সচেতনার ক্ষেত্রে আরো বিনিয়োগ করতে চান৷ এডওয়ার্ড মুচিবি বলেন, ‘‘রেস্তোরাঁ, পণ্যের ফার্ম, আফ্রিকায় স্লো ফুড গার্ডেন, স্লো ফুড ইয়ুথ অ্যাকাডেমির মতো উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা অনেক মানুষের কাছে পৌঁছতে চাই৷ আমাদের খাদ্য, সেই খাদ্য উৎপাদনের প্রণালী কীভাবে আমাদের গ্রহ ও আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞানের মাধ্যমে, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তুলে ধরে আমরা এত মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছি৷''
এডি মুচিবির মাথায় নানা উদ্ভাবনী আইডিয়া ঘোরাফেরা করে৷ উগান্ডায় স্লো ফুড সদর দফতরে প্রায়ই সেগুলি পরীক্ষা করে দেখা হয়৷ তবে নিজের বাবা-মার ফার্ম ও চাষিদের খেতেই তিনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন৷ আস্তিন গুটিয়ে তিনি সেখানে কাজে নেমে পড়েন৷
নামওয়েজি, গেসনার, কাডেরাইট/এসবি