ভবিষ্যতের চাষ ‘স্মার্ট' চাষ
১৮ জুলাই ২০২২পৃথিবীর প্রায় ৩৮ ভাগ ভূমি ব্যবহৃত হয় খাদ্য উৎপাদন ও পশুপালনে৷ কৃষি প্রায় চার ভাগের এক ভাগ বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী৷ এই খাত একাই ৭০ ভাগ সুপেয় পানি ব্যবহার করে৷
তারপরও পৃথিবীর সবার জন্য পর্যাপ্ত খাবার নেই৷ জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ সালে ৭০ কোটি মানুষ অভুক্ত ছিলেন, যা পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ৯ ভাগ৷ এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন ‘স্মার্ট' চাষপদ্ধতি৷
‘স্মার্ট ফার্মিং' বিশেষজ্ঞ রনভীর চন্দ্র বলেন, ‘‘আমাদের আরো বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে হবে৷ তবে আমাদের এমন ভালো ও পুষ্টিকর খাবার উৎপাদন করতে হবে, যা পৃথিবীর ক্ষতি করে না৷ আমাদের পানিস্তর নেমে যাচ্ছে, জমির গুণাগুণ বাড়ছে না৷ তাহলে আমরা আরো ভালো খাবার কেমন করে উৎপাদন করব? সবচেয়ে ভালো উপায় হতে পারে, উপাত্ত নির্ভর কৃষি৷ এর অর্থ, উপাত্ত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কৃষকের জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো৷''
মালয়েশিয়ার এই জলখামার ‘স্মার্ট টানি' নামের পদ্ধতি ব্যবহার করে৷ পানিতে রাখা সেন্সরগুলো কাঁকড়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠার জন্য পিএইচ মান, অক্সিজেনের মাত্রা ও পানির তাপমাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে৷
জলখামারি ফারহানা আবদ আজিজ বলেন, ‘‘আমরা তাপমাত্রা ও অন্যান্য সূচকগুলোর মাত্রা দেখতে পাই৷ আগে আমরা সবকিছু হাতে কলমে করতাম৷ বারবার টেস্ট কিট কিনে এসব পরীক্ষা করতাম, যার কারণে খরচ অনেক বেড়ে যেত৷ কিন্তু এই প্রযুক্তিতে একবার বিনিয়োগ করে আমরা এখন নিয়মিত সব উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারি৷ খামারের যে কোন পরিস্থিতির মূল্যায়ণ এখন আমরা করতে পারি৷''
ফারহানা আবদ আজিজ একটি অ্যাপের ড্যাশবোর্ডে চোখ রাখলেই উপাত্ত দেখতে পান৷ বিগ ডেটা অ্যানালাইটিক সিস্টেমের মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ করা হয়৷ অ্যাপের তাৎক্ষণিক নোটিফিকেশন জলদি সমস্যা সমাধান করতে সাহায্য করে৷ এভাবে বাড়তি কিছু না করেই সার্বক্ষণিক পানির মান পর্যবেক্ষণ করতে পারেন ফারহানা৷
ফারহানা বলেন, ‘‘আমি মনে করি এটা সহজ৷ কারণ আমাকে খামারে আসতে হয় না৷ বাড়ি থেকে, যাওয়া আসার পথে বা যে কোন জায়গা থেকে পর্যবেক্ষণ করতে পারি৷''
মালয়শিয়ান কোম্পানি স্যাট এশিয়ার পণ্য স্মার্ট টানি৷ হাফিজ হাসান একজন স্থানীয় উদ্যোক্তা হওয়ায় তিনি জানেন মালয়শিয়ান খামারিদের কী দরকার৷
স্যাট এশিয়ার সিইও হাফিজ হাসান বলেন, ‘‘স্মার্ট টানি তিনটি ভিন্ন উপাদানে তৈরি৷ এক, কম দামী সেন্সর; দুই, বিস্তৃত সংযোগ সুবিধা এবং তিন, আমাদের বিগ ডেটা অ্যানালাইটিক সিস্টেম৷''
স্মার্ট টানি সেন্সরগুলো মাটির পুষ্টিগুণও পরিমাপ করে, যেমনটি হচ্ছে এই আনারস খামারে৷ সেন্সরের সংখ্যা ও যন্ত্রপাতির পরিমাণ অনুযায়ী এটির দাম কয়েকশত ইউরো পর্যন্ত৷ স্বল্প বিনিয়োগ, দূর্বল ফোন নেটওয়ার্ক থাকার পরও মানসম্পন্ন সংযোগ এবং উপাত্তের পরিষ্কার উপস্থাপনের কারণে এটি চাষিদের জন্য খুব উপযোগী৷
হাফিজ হাসান আরো বলেন, ‘‘আমাদের ভোক্তাদের বেশিরভাগই তরুণ প্রজন্মের৷ তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চায়৷ এটি ইতিবাচক৷ আমরা নতুন প্রজন্মের চাষিদের এ পেশায় আগ্রহী করার চেষ্টা করছি৷''
উদ্যোক্তাদের দাবি, খাদ্য সংকট সমাধান ও টেকসই কৃষিব্যবস্থা তৈরিতে স্মার্ট চাষ ভূমিকা রাখতে পারে৷ তবে সেজন্য একে এমনকি ছোট খামারিদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে হবে৷
রনভীর চন্দ্র বলেন, ‘‘সুতরাং উপাত্তনির্ভর কৃষি এখন অবশ্যম্ভাবী৷ খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে উপাত্ত ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷''
স্মার্ট চাষ কৃষিকে আরো দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব করে গড়ে তুলতে পারে৷ জলবায়ু পরিবর্তনের এ সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে এর ভূমিকা এখন অনস্বীকার্য৷
ফিলিপ ক্র্যাচমার/জেডএ