শহরে চাষের সুযোগ করে দিচ্ছে ভার্টিক্যাল ফার্ম
৮ জুলাই ২০২২প্রায় পাঁচ বছর ধরে সক্রিয় থাকলেও উগান্ডার পল মাতোভু কাঠের ভার্টিকাল ফার্ম তৈরি করতে ক্লান্তি বোধ করেন না৷ এই কৃষি পদ্ধতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি জানালেন, ‘‘ভার্টিক্যাল ফার্ম আসলে বাক্সের মধ্যে চাষের এক ব্যবস্থা৷ এর মধ্যে অনেক কাঠের ট্রে রয়েছে৷ আমরা সেই ট্রে তৈরি করে জায়গা বাঁচাতে লম্বালম্বিভাবে রাখতে পারি৷’’
শহুরে এলাকায় সেটাই উধাও হয়ে যাচ্ছে৷ উগান্ডার জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশেরও বেশি, অর্থাৎ এক কোটি বিশ লাখ মানুষ শহরে বাস করেন৷ রাজধানী কাম্পালার অনেক বাসিন্দা বস্তি এলাকায় থাকেন৷
ভার্টিকাল অ্যান্ড মাইক্রো গার্ডেনিং সস্থার প্রধান কর্ণধার মাতোভু এরই মধ্যে নিজের তৈরি প্রায় ২,০০০ বক্স ফার্ম সরবরাহ করেছেন৷ বিশেষ করে দরিদ্র এলাকায় তিনি সে কাজ করেন৷ নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি জায়গার মূল্য সম্পর্কে সচেতন৷ তিনি বলেন, ‘‘শহুরে এলাকায় খাদ্য উৎপাদনের অন্য পথও যে রয়েছে, মানুষের সে বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত৷ ভার্টিক্যাল ফার্ম এমন এক সমাধানসূত্র হতে পারে৷ আমরা চাই যত সম্ভব মানুষ জানুন, যে শহুরে এলাকায় সীমিত জায়গায় ভার্টিক্যাল ফার্ম ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব৷’’
কাম্পালার উপকণ্ঠে বুলেনগা এলাকায় কয়েকজন ভার্টিক্যাল ফার্মার থাকেন৷ অ্যাঞ্জেলা কোকুসিমা দুই বছর ধরে নিজের বাসার পেছনে শাকসবজি উৎপাদন করছেন৷ তিনি সেলারি চাষ করেন, কারণ সেটি সালাদে বাজে লাগানো যায় এবং স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো৷ তাঁকে সার কেনা নিয়ে ভাবতে হয় না, কারণ তিনি তাঁর প্রতিবেশীর ফেলে দেওয়া শাকসবজির অংশ দিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করেন৷ উদ্বৃত্ত শাকসবজি বিক্রিও করতে পারেন৷ অ্যাঞ্জেলা বলেন, ‘‘আমি সাবানের মতো ছোট জিনিস বিক্রি করে কিছু আয় করি৷ কিছু সঞ্চয়ও করতে পারি৷ প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করি৷ ক্রেতার খোঁজ করতে হয় না৷’’
কিন্তু কাঠের পণ্যগুলি বেশি দামী৷ পাঁচটি ট্রে-সহ প্রণালীর দাম প্রায় ১০০ ইউরোর সমান, অনেকেরই যা কেনার সামর্থ্য নেই৷ সে কারণে পল স্পনসরের খোঁজ করেছেন৷ মূলত আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলিই দরিদ্র বাসিন্দাদের জন্য ভরতুকির ব্যবস্থা করছে৷ ভার্টিক্যাল ফার্মের দৌলতে তরুণ এই উদ্যোক্তা বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন৷ নিজের উদ্ভাবনী কনসেপ্ট তুলে ধরতে তিনি কোনো সুযোগ হাতছাড়া করেন না৷ পল বলেন, ‘‘অনেক তরুণ-তরুণী যে চাষবাসে আগ্রহী, আমরা তা জানতে পেরেছি৷ তাঁরা শিখতে চান, আরও সক্রিয় হতে চান৷ তাই আমরা এখানে প্রথমত তাদের সঙ্গে আদানপ্রদান করতে চাই, দ্বিতীয়ত আমাদের পণ্য ও পরিষেবা সম্পর্কে তাদের আগ্রহ সৃষ্টি করতে চাই৷’’
কাম্পালার এক বড় হোটেল তাঁর গ্রাহক৷ পেছনের জমিতে প্রায় ১৫ বর্গ মিটার জুড়ে ভার্টিকাল ফার্ম রয়েছে৷ মালি হিসেবে চার্লস কিয়ামবাডে সেখানে শাকসবজি ও মসলা চাষ করেন৷ ধনেপাতা, রোজমেরি, টমেটো, পিয়াঁজ ইত্যাদি সেখানে গজায়৷ ফেয়ারওয়ে হোটেলের মালি চার্লস কিয়ামবাডে বলেন, ‘‘আমাদের যে অতিথিরা অরগ্যানিক শাকসবজি পছন্দ করেন, যাঁরা এই বাগান দেখেছেন, তাঁরা সঠিক জায়গায় এসেছেন বলে মনে করেন৷’’
পল মাতোভু এ প্রসঙ্গে জানালেন, ‘‘তরুণ প্রজন্মের প্রশিক্ষণ ও আর্বান ফার্মিং চালাতে তাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই তাঁদের এক কর্মসূচি রয়েছে৷ বাইরের মানুষকেও সেখানে এসে আর্বান ফার্মিং শিখতে স্বাগত জানানো হয়৷ ফলে তারা এমন দৃষ্টান্ত দেখিয়ে এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে৷ বাকি হোটেলগুলিকেও আমি ফেয়ারওয়ে হোটেলের কাছ থেকে শেখার আহ্বান জানাই৷’’
পল মাতোভু ছয় জন কর্মী রেখেছেন৷ চাহিদা বেড়ে গেলে তিনি কখনো আরও বেশি কর্মী আনেন৷ উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই সামাজিক উদ্যোগপতি ইতোমধ্যেই তাঁর পরবর্তী প্রকল্পের পরিকল্পনা করছেন৷ তিনি এক এনজিও-র সহায়তায় উগান্ডার এক শরণার্থী শিবিরে ভার্টিক্যাল ফার্ম গড়ে তুলতে চান৷
মুগামবোয়া/মিলকে/এসবি