আফ্রিকায় টেকসই ও পরিবেশবান্ধব কৃষি পদ্ধতির সাফল্য
২৬ অক্টোবর ২০২২জেরোম কাস্যাঁ কাস্যাঁ তার পিতামহের কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে এই জমি পেয়েছেন৷ প্রায় এক দশমিক সাত হেক্টর এলাকা জুড়ে নানা ধরনের গাছ বেড়ে উঠছে৷ ‘অ্যাগ্রোফরেস্ট্রি' নামের কৌশল ব্যবহার করে এমনটা করা হচ্ছে৷ নিজের জমি ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে জেরোম বলেন, ‘‘ওখানে এমিয়ান গাছ রয়েছে৷ জানি সেটির কাঠ খুব ভালো, যা দিয়ে অনেক কাজ করা যায়৷ আমি আকপি গাছও ভালো করে চিনি৷ বাকি গাছগুলির বৈজ্ঞানিক নাম জানি না বটে, তবে জানি সেগুলি ছায়া দিয়ে আমার কোকো গাছগুলি রক্ষা করবে৷''
চাষি হিসেবে তাঁর এই মনোভাব সত্যি এক ব্যতিক্রম৷ বিচ্ছিন্নভাবে কোকো, রাবার ও অয়েল পাম চাষের কারণে আইভরি কোস্টের প্রকৃতি সম্পূর্ণ বদলে গেছে৷
গত ৬০ বছর ধরে দেশটির প্রায় ৮০ শতাংশ অরণ্য ধ্বংস হয়ে গেছে৷ কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার মাটিরও মারাত্মক ক্ষতি করেছে৷ সেই সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিঘ্নও সমস্যা বাড়িয়ে তুলছে৷ প্রবল উত্তাপ ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে৷
আবিদজানের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোফেসরএবানিয়েব়্যাঁ জেরোম টন্ডোর মতে, দেশটি আসলে এক জরুরি অবস্থার মধ্যে রয়েছে এবং চাষিদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা উপরের ২০ সেন্টিমিটার অংশে মাটির ক্ষয়ের শতকরা হার বিশ্লেষণ করি৷ সেই মাত্রা সত্যি ভয়াবহ৷ অত্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে একাধিক মাপকাঠি অনুযায়ী আমাদের এর কারণ নির্ণয় করতে হবে৷ বায়োফিজিকাল ও আর্থ-সামাজিক দিকগুলি বিবেচনা করে টেকসই পদ্ধতিতে মাটি পুররুদ্ধারের পরিকল্পনা করতে হবে৷''
বাসাদজিন গ্রামের নারী কাসাভা চাষিরা এক স্থানীয় এনজিও-র সহায়তায় জমির উপর অরণ্য গড়ে তুলে পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ কাসাভা খেতের গাছ প্রতি বছর নতুন করে লাগাতে হয়৷ কিন্তু মাটির ক্ষয় ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে রোগের প্রকোপ বেড়েই চলেছে৷ সে কারণে এই নারীরা হাতে গোনা কিছু অবশিষ্ট অরণ্যে নতুন ও উর্বর জমির সন্ধান করছেন৷ এখন ছোট জঙ্গলে রোগব্যাধি ছাড়াই কাসাভা গাছ প্রতি বছর বেড়ে উঠতে পারে৷
নারীরা ফসল নিয়ে সন্তুষ্ট৷ আজ মাত্র এক হেক্টর জমিতে ২০ থেকে ৪০ টন কাসাভা উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে৷ অতীতে ১৫ টনের বেশি কখনোই সম্ভব হতো না৷
আরও উত্তরে ইয়ামুসসুক্রো এলাকায় ইউরোপীয় সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থা টেকসই কৃষির কৌশল ছড়িয়ে দেবার চেষ্টা করছে৷ এই সংস্থা সেই লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে৷ মাটির মধ্যে পুষ্টি বাড়াতে খনিজ সার, বায়োকম্পোস্ট বা বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে৷ কৃষি বিষয়ক উপদেষ্টা ফ্রাংক ইয়াও কুয়াদি বলেন, ‘‘উৎপাদকরা সাধারণত আমাদের বিক্রি করা খনিজ সার ব্যবহার করেন৷ অ্যাগ্রো-ইকোলজিকাল ট্রানজিশন প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা তাদের প্রচলিত পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করতে চাই, যাতে তারা অরগ্যানিক সারের দিকে এগোতে পারে৷''
প্রশিক্ষণের সুফল এখনই হাতেনাতে পাওয়া যাচ্ছে৷ ফ্রাংক এলভিস কুয়াসি ননম্যানও চাষি হিসেবে এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন৷ বিগত দুই বছর ধরে তিনি নিজস্ব প্রণালী কাজে লাগিয়ে অরগ্যানিক কম্পোস্ট তৈরি করছেন৷ তিনি নিজের মুরগির বর্জ্যের সঙ্গে জংলি ঘাস ও ছাই মিশিয়ে শাকসবজির খেতে সেই সার প্রয়োগ করেন৷ এই কৌশলের দৌলতে তাঁর উৎপাদন ব্যয় প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে৷ ফ্রাংক বলেন, ‘‘মাটির কালো রং দেখলে বোঝা যায় সেটি চাষের জন্য ভালো৷ জমিতে আবার কেঁচোর আবির্ভাবও দেখতে পাচ্ছি৷ এটা ভালো লক্ষণ এবং এর ফলে আমারও তেমন খরচ হচ্ছে না৷''
গত তিন বছরে প্রায় ২৫০ চাষি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ তাঁরা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে আইভরি কোস্টের কৃষিকাজ আরও টেকসই করে তুলতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷
ক্লেলিয়া বেনার/এসবি