1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২৫ মার্চের আগে ঘৃণা স্তম্ভ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ জুন ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর ও আল-শামসদের প্রতি ঘৃণা জানাতে ‘ঘৃণা স্তম্ভ' তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার৷

https://p.dw.com/p/2fH7L
ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah

আগামী ২৫ মার্চের আগেই এর নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক৷ গত ১৯ জুন সংসদকে তিনি এই স্তম্ভ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানান৷

মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা এই কাজের জন্য কয়েকজন স্থপতিকে দায়িত্ব দিয়েছি৷ নকশা চূড়ান্ত হলেই নির্মাণকাজ শুরু করব৷ প্রাথমিকভাবে এই ঘৃণা স্তম্ভ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপনের পরিকল্পনা আছে৷ আগামী ২৫ মার্চের আগেই এই কাজ শেষ হবে৷ ২৫ মার্চ এই স্তম্ভ উদ্বোধন করা হবে৷ এজন্য সংসদে আইন পাস কিংবা মন্ত্রিসভার কোনো সিদ্ধান্ত লাগবে না৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট৷''

Minister - MP3-Stereo

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘‘পাকিস্তান এর বিরোধিতা করতে পারে, স্বাধীনতা বিরোধীরা করতে পারে৷ কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যে কোনো বিরোধিতা নাই৷ আমরা মনে করি, এই ঘৃণা স্তম্ভের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগীরা যে গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটের মতো জঘন্য অপরাধ করেছে, তা জানতে পারবে৷''

তিনি বলেন, ঘৃণা স্তম্ভে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে জাতি গণহত্যায় জড়িতদের নানাভাবে ঘৃণা জানাবে৷ স্টিলের তৈরি এই স্তম্ভে গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির ওপর নির্মম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরা হবে৷

অবশ্য আলাদা করে ঘৃণা দিবস করার দরকার নেই বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী৷ ‘‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসেই ঘৃণা জানানো হবে,'' বলেন তিনি৷

Muntasir Mamun - MP3-Stereo

সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কাজও হচ্ছে বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী৷ ‘‘জেলা ও উপজেলায় ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের জন্য কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধ ছাড়া আর কোনো স্মৃতিসৌধ নেই,'' বলেন তিনি৷

‘সরকারিভাবে সম্ভব কিনা সন্দেহ আছে'

ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই ধরণের (ঘৃণা স্তম্ভ) বিষয় নিয়ে আমরা আগেও কাজ করেছি৷ কুষ্টিয়ায় আমরা নির্মূল কমিটির পক্ষ থেকে ঘৃণা স্তম্ভ নির্মাণ করেছি, সেটা এখনো আছে৷ তবে এখন এটা সরকারের পক্ষে নির্মাণ করা যাবে বলে আমরা মনে হয়না৷

Zafarullah - MP3-Stereo

বরং অন্যান্য যে কাজগুলো বাজি আছে সেদিকে নজর দেয়া প্রয়োজন৷ যেমন পাকিস্তানের কাছ থেকে পাওনা আদায়, যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপার আছে, বীরাঙ্গনা ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তার ব্যাপার আছে৷ ঘৃণা স্তম্ভ নির্মাণের চেয়ে এগুলো অনেক বেশি জরুরি৷ আর এই স্তম্ভ নির্মাণ সরকারিভাবে সম্ভব কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে৷''

কেন সন্দেহ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১-এর বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ আমরা চাইলেও এখন অনেক কিছু করতে পারবনা৷ সম্পর্কের নানা দিক আছে, গতি আছে৷ সেগুলো তো এখন আমরা উপেক্ষা করতে পারবনা৷ আমাদের সেই সময় চলে গেছে৷''

‘স্তম্ভ বানিয়ে কী হবে?'

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যখন কেউ মূল কাজ করেনা, তখন অকাজ করে৷ আজকে আমাদের যেটা করা দরকার তাহলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত করা৷ দরিদ্র মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু সুযোগ সুবিধা দিচ্ছি এটা ভাল কাজ৷ কিন্তু এতদিন পরও মুক্তিযোদ্ধারা আত্মহত্যা করে৷ এতদিন পরও একজন মুক্তিযোদ্ধা পা হারিয়ে রিকশা চালায়, তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করা দরকার৷ এইসব স্তম্ভ বানিয়ে কী হবে? এভাবেই আমরা আসল কাজ না করে অকাজ করছি৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘ঘৃণা কতদিন জাগিয়ে রাখব? যারা অপরাধ করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারতো হচ্ছে৷ এখন বিচারের দায়িত্বও যদি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী নিয়ে নেন তাহলে সেটা খারাপ কাজ হবে বলে আমি মনে করি৷''

আপনার কিছু বলার থাকলে লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য