জাতীয় গণহত্যা দিবস
২৫ মার্চ ২০১৭২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস আর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস৷ ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে অপারেশন সার্চলাইট'-এর নামে গণহত্যা শুরুর পর থেকেই বীর বাঙালি প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে তোলে৷ ঐ রাতে একযোগে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানায় তখনকার ইপিআর সদর দপ্তর এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনে হামলা করে৷ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে তারা৷ ন'মাসে তারা ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা করে৷
মুক্তিযুদ্ধের গবেষক এবং ওয়ার ক্রাইম ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটির প্রধান ডা. এম এ হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এ পর্যন্ত বাংলাদেশে পাঁচ হাজার বধ্যভূমির সন্ধান পেয়েছি৷ এর মধ্যে এক হাজার বধ্যভূমি চিহ্নিত৷ আমরা গণহত্যা প্রমাণের জন্য ফরেনসিক এভিডেন্সও জোগাড় করেছি৷ আর আমরা বধ্যভূমি থেকে মাথার খুলি, শরীরের হাড়গোড়ও পেয়েছি৷ এখানে ১৯৭১ সালে যা হয়েছে তা তো গণহত্যা অবশ্যই৷ তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ৷''
তিনি বলেন, ‘‘গণহত্যা হলো একটি জাতি, একটি জাতি গোষ্ঠী বা একটি সম্প্রদায়কে নির্মূল করণ প্রক্রিয়া৷ ২৫শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে হিন্দু শিক্ষক এবং ছাত্রদের হত্যা করা হয় ধর্মীয় কারণে৷ আর পুরো বাঙালি জাতিকে নির্মূলের কাজ করে পাকিস্তানি সেনবাহিনী৷''
তিনি জানান, ‘‘নানা করণে বিশেষ করে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা এবং স্বাধীনতা বিরোধীদের আন্তর্জাতিক অপতৎপরতার কারণে বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পায়নি৷ তবে এবার বাংলাদেশ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন করায় এটা একটি বিশেষ প্রভাব সৃষ্টি করবে৷''
গত ১৫ই মার্চ মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৫শে মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷ এর আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বিষয়টি তুলে ধরেন৷ আর ১১ই মার্চ জাতীয় সংসদে সরকারের শরীক দল জাসদের শিরীন আখতারের উত্থাপিত এক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘সংসদের অভিমত এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাত্রিতে বর্বর পাকিস্থানি সেনাবহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫শে মার্চকে গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক৷ আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হোক৷' তাই এই প্রস্তাব সংসদে গ্রহণ করা হয়৷
২০১৫ সাল থেকে জাতিসংঘ ৯ই ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে৷ বাংলাদেশ ২৫শে মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে চাইলেও তার সম্ভাবনা ক্ষীণ৷ তাই বাংলাদেশ চাইছে ২৫শে মার্চের কালরাত্রির গণহত্যাকে যেন আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়া হয়৷
এ জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতে যতটা সম্ভব তথ্য-উপাত্ত পাঠানো হচ্ছে৷ এর উদ্দেশ্য হলো মুক্তিযুদ্ধে যে সব দেশ বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছিল, সে দেশগুলোর পার্লামেন্ট বা আইনসভায় ২৫শে মার্চের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়৷ তাদের সমর্থন পেলে অন্য দেশগুলোকে বিষয়টি বোঝানো সহজ হবে৷ একই সঙ্গে গণহত্যার সংজ্ঞা মেনে জাতিসংঘে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত এবং দলিল পাঠাচ্ছে বাংলাদেশ৷
পরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিষয়টি আমাদের কাছে নতুন৷ আমরা ‘রিলেটেড এরিয়ায়' কাজ শুরু করেছি৷ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল এবং জাতিসংঘের সঙ্গে ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং' নিয়ে কাজ করছি৷''
তিনি আরো জানান, ‘‘বিদেশে বাংলাদেশের সব দূতাবাসগুলোকে এনিয়ে নির্দেশনা পঠানো হয়েছে৷ যখনই তারা কোনো দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বসবেন বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন, আমরা আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সহায়তা নিচ্ছি৷'' এবার বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতেও ২৫শে মার্চ গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে৷
ডা. এম এ হাসান বলেন, ‘‘এবার থেকে বাংলাদেশ ২৫শে মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন শুরু করায় এটা আন্তর্জাতিক গুরুত্ব পাবে৷ বিশ্বের আরো নির্যাতিত জনগোষ্ঠী আমাদের সঙ্গে একাত্ম হবে আর তাতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়ার পথ সুগম হবে৷''
এ বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷