২৫শে মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবি
২৫ মার্চ ২০১৫২৫শে মার্চ মধ্যরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ‘অপারেশন সার্চলাইট'-এর নামে ভারী অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে একযোগে হামলা চালায় ঢাকায় তখনকার বিডিআর (ইপিআর) সদর দপ্তর, রাজারবাগ পুলিশ লাইন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে৷ গোলা নিক্ষেপ করে মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসে, হামলা চালায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বস্তি এলাকায়৷ ইতিহাসের এই নির্মম নিধনযজ্ঞ সেই রাতেই ছড়িয়ে পড়ে পুরো শহরে, বাংলাদেশে৷ ঘুমন্ত মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়নারা৷
‘অপারেশন সার্চলাইট' নামের ঐ নিধনযজ্ঞের পরিকল্পনা হয়েছিল একাত্তরের মার্চের শুরুতেই৷ এই গণহত্যার ষড়যন্ত্রে যারা অংশ নিয়েছিলেন তাদের মধ্যে জুলফিকার আলী ভুট্টো, জেনারেল ইয়াহিয়া এবং জেনারেল হামিদ অন্যতম৷ তাঁরা মনে করেছিলেন, ২০ হাজার মানুষ হত্যা করলেই ভয় পাবে বাঙালিরা৷ ফলে স্বাধীনতা আর স্বাধিকারের কথা তারা আর বলবে না৷
কিন্তু ২৫শে মার্চ মধ্যরাতেই রাজারবাগ থেকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ, শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ৷ ৯ মাসের মুক্তি সংগ্রামে ৩০ লাখ শহিদ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর৷
২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার শুরুর দিনকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস' হিসেবে ঘোষণার জন্য দাবি তুলেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ এই দাবিতে সরব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং সব শ্রেণির মানুষ৷
দিনটিকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ও অনলাইন এক্টিভিস্ট ফোরাম৷ এই দাবির পক্ষে দেশে এবং দেশের বাইরে আলোর মিছিল আয়োজন করছে৷ ২৫শে মার্চ রাত ৮টায় মোমবাতি হাতে শহিদ মিনারের উদ্দেশ্য পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে৷ দেশের ৬৪টি জেলায়ও আলোর মিছিল হবে৷ শহিদ মিনারে এই আলোর মিছিলের আয়োজন করেছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি৷ গণজারণমঞ্চও শাহবাগে অবস্থান করার পর আলোর মিছিল নিয়ে যাবে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে৷
শুধু বাংলাদেশে নয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশের অধিবাসীরাও এই আলোর মিছিল করছেন৷ নিউইয়র্ক, প্যারিস, লন্ডন ও রোমে এই কর্মসূচি পালনের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘আলোর মিছিল - Candle Light Procession' নামে একটি ইভেন্ট পেজ খুলে চলছে প্রচারণা৷
এই প্রসঙ্গে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ২৫শে মার্চের গণহত্যা বিশ্বে নজিরবিহীন৷ একরাতে ঢাকাসহ সারাদেশে প্রায় এক লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়৷'' তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বের শতাধিক দেশে গণহত্যা হলেও ৯০টি দেশে এখনো বিচার হয়নি৷ তাই সারাবিশ্বে যেখানে যেখানে গণহত্যা হয়েছে সবাইকে আমরা এক করতে চাই৷ একটি জায়গায় এনে গণহত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে চাই৷''
নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি বলেন, ‘‘আমরা জাতিসংঘের আছে আবেদন করছি তারা যেন ২৫শে মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে৷ এ কাজটি এগিয়ে নিতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে৷''
শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আমরা শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে প্রচার চালাচ্ছি৷ যেখানে গণহত্যা হয়েছে বা হচ্ছে সেখানেই আমরা যোগাযোগ করছি৷ সবাইকে এক করা না গেলে বিশ্বে গণহত্যা বন্ধ হবে না, বিচার হবে না৷''