২১ শতাংশ জার্মান শিশু দারিদ্র্যের কবলে
২৯ অক্টোবর ২০১৭জার্মানিতে যেসব শিশু দারিদ্র্য সীমার নীচে রয়েছে এমন পরিবারে জন্মগ্রহণ করছে, তারা খুব সম্ভবত সেখানেই থাকবে, অর্থাৎ তাদের অবস্থার বিশেষ উন্নতি ঘটবে না৷ব্যার্টেল্সমান নিধির জরিপের এটাই সম্ভবত সবচেয়ে উদ্বেগজনক নির্ণয়৷ সমীক্ষায় পাঁচ বছর ধরে প্রায় ৩,০০০ শিশুর জীবনযাত্রার মান যাচাই করা হয়েছে৷
গবেষকরা দেখেন যে, দশ শতাংশ শিশুর অন্তত সাময়িকভাবে হলেও দারিদ্র্যের অভিজ্ঞতা রয়েছে৷ কিন্তু ২১ শতাংশ শিশু স্থায়ী বা পৌনঃপুনিকভাবে দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে৷ যেসব শিশুর অন্তত দু'টি ভাইবোন আছে, একক পিতা বা মাতার তত্ত্বাবধানে মানুষ হওয়া শিশু ও অল্পশিক্ষিত অভিভাবকদের সন্তানদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি বিশেষভাবে বেশি৷
‘‘জার্মানি একটি ধনি দেশ, যা বিগত কয়েক বছরে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু বহু শিশু ও তাদের পরিবার দৃশ্যত এ থেকে লাভবান হয়নি,'' ব্যার্টেল্সমানের পরিবার কল্যাণ বিশেষজ্ঞ আনেট স্টাইন ডয়চে ভেলেক বলেছেন৷
‘দারিদ্র্য যখন স্থায়ী হয়'
জরিপে সেই সব পরিবারকে দরিদ্র বলে গণ্য করা হয়েছে, যাঁদের আয় জার্মানিতে একটি পরিবারের গড় আয়ের ৬০ শতাংশেরও কম, অথবা যেসব পরিবার রাষ্ট্রের কাছ থেকে ভাতা পায়৷
পড়াশোনার ক্ষেত্রেও পারিবারিক পটভূমি ছাপ রাখে বলে বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে৷ দীর্ঘকাল দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেছে, এমন ছেলেমেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সম্ভাবনা কম৷ ফলে তাদের ভালো চাকুরি পাওয়ার সুযোগও কম৷ ক্ষেত্রবিশেষে এই পরিস্থিতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলে আসছে৷
‘‘সংশ্লিষ্ট শিশুদের জন্য এটা সত্যিই খুব দুঃখের কথা, কিন্তু সমাজের পক্ষেও তা ভালো নয়,'' বলেন স্টাইন৷ ‘‘এর অর্থ এই যে, দারিদ্র্য বংশানুক্রমিক ও এসব শিশু বড় হয়ে ঠিক তাদের বাবা-মায়ের মতো সরকারি অর্থানুকুল্যের উপর নির্ভর করবে৷''
দারিদ্র্যের মর্ম
দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের জীবনযাত্রায় যেসব সুযোগ-সুবিধার অভাব, সেগুলির একটি তালিকা ব্যার্টেল্সমান তার রিপোর্টে দিয়েছে৷ এই ২৩টি ‘জীবনযাত্রার মান' নির্ধারণকারী সূচকের মধ্যে পড়ে পর্যাপ্ত থাকার জায়গা থেকে শুরু করে কাপড় কাচার মেশিন বা বাড়ির বাইরে ছোটদের খেলার জায়গা৷ শীতের জামাকাপড়, নিয়মিত সঞ্চয়, বন্ধুবান্ধবকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ করা, মাসে একবার সিনেমা দেখতে যাওয়া বা বছরে একবার কোথাও ছুটি কাটাতে যাওয়া – এসবই ‘জীবনযাত্রার মান'-এর সূচক৷
জরিপে যেসব দরিদ্র শিশুর কথা বলা হয়েছে, গড়ে তারা এ ধরণের সাতটি সুযেগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়৷ যারা সাময়িকভাবে দরিদ্র, তারাও প্রায় তিন-চারটি সূচকের ক্ষেত্রে কিছুই পায় না৷ জার্মানিতে বর্তমানে প্রায় ২৭ লাখ শিশু ও যুবা দারিদ্র্যে মানুষ হচ্ছে৷ এক বিবৃতিতে তার গুরুতর ফলশ্রুতির কথা বলেছেন জার্মানির শিশু সুরক্ষা সংস্থা ডিকেএসবি-র প্রেসিডেন্ট হাইনৎস হিলগার্স৷ তিনি বলেন, ‘‘যে শিশু দারিদ্র্য অভিজ্ঞতা করেছে, বাস্তবিক সমাজে তার অংশগ্রহণ করার সম্ভবনা প্রায় নেই বললেই চলে৷ বিশেষ করে স্থায়ী দারিদ্র্যের ক্ষেত্রে এ কথা প্রযোজ্য৷''
কী করা যেতে পারে
ব্যার্টেল্সমান নিধি ও ডিকেএসবি-র যৌথ সুপারিশ:
(১) শিশুদের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন নিয়মিত জরিপ করে দেখা
(২) সামাজিক ভাতা পাবার সরকারি প্রক্রিয়াকে আরো সরল করা
(৩) বসবাসের স্থানের কাছাকাছি শিশুদের জন্য অবসর কাটানোর ব্যবস্থা রাখা
কার্লা ব্লাইকার/এসি