জার্মানিতে ‘দারিদ্র্য অভিবাসন’
২ জানুয়ারি ২০১৪জার্মান সরকারের নবনিযুক্ত বিদেশি বিষয়ক কমিশনার আইদান ও্যজুগুজ সিএসইউ-র উদ্বেগ একেবারেই আমলে নিচ্ছেন না৷ বরং রাগত স্বরে তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতিবছর সিএসইউ-র কাছ থেকে একই কথা শুনি৷ আবার পরবর্তীতে তারা স্বীকার করে নেয় যে তাদের শঙ্কা সত্যি হয়নি৷'' যখনই ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কোনো দেশের কর্মীদের অন্য দেশে কাজ খোঁজার স্বাধীনতা দেওয়া হয়, তখনই রক্ষণশীল সিএসইউ জার্মানির সামাজিক কল্যাণ তহবিলের উপর অভিবাসীদের ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে৷ সিএসইউ হচ্ছে বাভারিয়ায় আঙ্গেলা ম্যার্কেলের খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)-এর সহযোগী৷ বলা বাহুল্য, বর্তমান জোট সরকারে তাদের শক্ত অবস্থান রয়েছে৷
সদ্য প্রকাশিত এক পেপারে সিএসইউ রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে আসা ‘দারিদ্র্য অভিবাসন' ঠেকাতে কঠোর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে৷ জানুয়ারি থেকে এই দুটি দেশের কর্মীরা ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত অন্যান্য দেশেও স্বাধীনভাবে কাজের সন্ধান করতে পারবে৷ সিএসইউ ধারণা করছে, এখন দেশ দু'টি থেকে বিপুল সংখ্যক সামাজিকভাবে অনগ্রসর মানুষ জার্মানিতে আসবে৷ এরপর তারা জার্মানির সমাজ কল্যাণ ও সন্তান লালনপালন তহবিল থেকে নিয়মিত অর্থ নিয়ে জীবনযাপন করবে৷
সিএসইউ-র আঞ্চলিক মুখপাত্র হান্স-পেটার উল একটি সংবাদপত্রকে দেয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ‘‘এ সব ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করতে হবে৷'' সামাজিক তহবিল নিয়ে কেউ প্রতারণা করলে শাস্তি হিসেবে জার্মানি থেকে বের করে দেওয়া এবং পরবর্তীতে জার্মানিতে প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারিরও পক্ষে সিএসইউ৷ পাশাপাশি অভিবাসীদের সামাজিক কল্যাণ তহবিলের আওতায় আনার আগে কমপক্ষে তিন মাস সময় নেয়ারও দাবি জানিয়েছে বাভারিয়ার রক্ষণশীল দলটি৷
পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা
বর্তমান জোট সরকারে থাকা মধ্য-বামপন্থি এসপিডি অবশ্য সিএসইউ-র এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে৷ আর বাম দলের চেয়ারম্যান ব্যার্ন্ড রেক্সিংগার সমালোচনার পাশাপাশি সিএসইউ-র বিরুদ্ধে বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ এনেছেন৷
পাশাপাশি ক্লাউস সিমারমানের মতো স্বাধীন পর্যবেক্ষকরাও এই প্রস্তাবের সমালোচনা করেছেন৷ ‘ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ লেবার'-এর পরিচালক সিমারমান বরং জানান, রোমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে আসা অধিকাংশ অভিবাসীই প্রশিক্ষিত কর্মী৷ তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীও রয়েছেন৷ ‘‘আর এ ধরনের জনশক্তি জার্মানির এখন খুব দরকার'', বলেন সিমারমান৷
পরিসংখ্যান বলছে, জার্মানিতে বসবাসরত বুলগেরীয় এবং রোমানীয় অভিবাসীদের মধ্যে অন্যান্য দেশের অভিবাসীদের তুলনায় বেকারত্বের হার কম৷ শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে সামাজিক কল্যাণ তহবিলের সুবিধাভোগীদের মধ্যে মাত্র ০ দশমিক চার শতাংশ রোমানীয় বা বুলগেরীয়৷
সর্বোচ্চ দু'লাখ
সিমারমান মনে করেন, ২০১৪ সালে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী জার্মানিতে আসার সম্ভাবনা কম৷ এ বছর বুলগেরিয়া এবং রোমানিয়া থেকে সর্বোচ্চ দু'লাখের মতো অভিবাসী জার্মানিতে আসতে পারেন বলে ধারণা করেন তিনি৷ শ্রম মন্ত্রণালয়ের হিসাবও সিমারমানের বক্তব্যকে সমর্থন করে৷
এসপিডি-র সদস্য ও্যজুগুজ অবশ্য স্বীকার করেন, জার্মানিতে অনেক দরিদ্র অভিবাসী রয়েছে৷ বিশেষ করে ডর্টমুন্ড এবং বার্লিনে রোমা সম্প্রদায়ের অনেক মানুষ রয়েছে, যারা নিজেদের দেশে নিপীড়নের শিকার হয়ে জার্মানিতে এসেছে৷
যারা দারিদ্র্য অভিবাসনের শিকার, তাদের মধ্যে উপযুক্ত শিক্ষার অভাব রয়েছে এবং তারা মূলত কম মজুরির খণ্ডকালীন কাজের উপর নির্ভরশীল৷ এই জনগোষ্ঠীকে ‘প্রতারক' হিসেবে আখ্যা না দিয়ে বরং পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্থানীয় প্রশাসনকে আরো দ্রুত এবং ঝামেলামুক্ত সহযোগীতা করার পক্ষে ও্যজুগুজ৷
প্রসঙ্গত, ইইউ নাগরিকরা জার্মানিতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক কল্যাণ তহবিল থেকে সুবিধা নিতে পারবেন কিনা তা নির্ধারণের চেষ্টা করছে আদালত৷ যদি তারা কাজ করে তাহলে শিশু কল্যাণ এবং অন্যান্য তহবিল থেকে সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে৷
তবে আইন বলছে, ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশের নাগরিকরা যদি শুধুমাত্র কাজ খোঁজার জন্য জার্মানিতে আসে, তাহলে তারা সামাজিক কল্যাণ তহবিলের সুবিধা নিতে পারবে না৷ বিষয়টি ইউরোপীয় আইনের লঙ্ঘন কিনা – সে বিষয়ে জার্মানির রাজ্য পর্যায়ের দু'টি আদালত পরস্পর বিরোধী রায় দিয়েছে৷ এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে তাই এখনো পৌঁছানো সম্ভব হয়নি৷
নিছক প্রচারণা?
তথ্য উপাত্ত ভিন্ন কথা বললেও সিএসইউ তাদের অবস্থানে অনড় থাকার পক্ষে৷ এর পেছনে সম্ভবত রাজনৈতিক কারণ কাজ করছে৷ বাভারিয়ায় আগামী ১৬ মার্চ পৌরসভা নির্বাচন, এবং ইউরোপীয় নির্বাচন আগামী ২৫ মে৷
জার্মানির ক্ষমতাসীন সিডিইউ/সিএসইউ জোট অতীতেও নির্বাচনের সময় অভিবাসী বিরোধী বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে ১৯৯৯ সালের কথা৷ তখন সিডিইউ-র রোলান্ড কখ ‘‘অঙ্গীভূতকরণকে হ্যাঁ, দ্বৈত নাগরিকত্বকে না'' স্লোগান দিয়ে হেসে রাজ্যের নির্বাচনে জয়লাভ করেন৷
বার্লিনে বসবাসরত বুলগেরীয় শিক্ষার্থী স্টানিমির দ্রাগিভ অভিবাসী সংক্রান্ত এই বিতর্ককে হাস্যকর এবং অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ তবে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের এ ধরনের কথাবার্তায় ক্ষুব্ধ তিনি৷