হৃদয়ের জন্য চিকিৎসা
২৯ জুলাই ২০১৩সেই সময় হাজার হাজার মানুষকে সাহায্য দিতে হয়েছে৷ উভে রিসকে জার্মানির রাইনল্যান্ড অঞ্চলের একটি প্রোটেস্ট্যান্ট গির্জার যাজক৷ ‘এমার্জেন্সি কাউন্সেলিং' করেন তিনি৷ অর্থাৎ দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যে কোন সংকটে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান তিনি৷ শোনান সান্ত্বনার বাণী৷
শুধু সাহায্য চাইলেই যেতে পারেন যাজকরা
এলবে নদীর তীরে বন্যার কবলে পড়া মানুষদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন এই যাজক৷ কিন্তু সেখানে তাঁর ডাক পড়েনি৷ শুধু সাহায্য চাইলেই উভে রিসকের মতো যাজকরা ঘটনাস্থলে যেতে পারেন, বিপদে পড়া মানুষদের দিতে পারেন প্রবোধ৷ আর এই রকম দুর্ঘটনা জার্মানিতে অহরহ ঘটছে৷
বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মানুষের জীবন আমূল বদলে যায়৷ যেমনটি ঘটেছে ১২ বছরের মেয়েটির বেলায়৷ বাবাকে করিডোরে মৃত দেখতে পায় সে৷ বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কষ্টটা হৃদয় ছুঁয়ে যায় উভে রিসকের৷ তিনি নিজেও তো ছয় সন্তানের বাবা৷
ভুক্তভোগীদের কাছে যাওয়া, পাশে থাকা, তাদের মনের অবস্থা বুঝতে চাওয়া এই সবই হলো উভে রিসকে-এর জরুরি সাহায্যের রেসিপি৷ অকুস্থলে পৌঁছে প্রায়ই এক বিশৃঙ্খল অবস্থার সম্মুখীন হন তিনি৷ পুলিশ, দমকল বাহিনীর লোকজন ব্যতিব্যস্ত৷ ডাক্তাররা আহতদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করছেন৷ এই রকম অবস্থায় সম্ভব হলে সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করেন রিসকে দুর্ঘটনায় পড়া মানুষদের৷
২০১০ সালে ডুইসবুর্গের লাভ প্যারেড সংগীত উত্সবে ভিড়ের চাপে ২১ জন মারা যায়৷ আহত হয় ৫০০ জন৷ ১৬০ জন ক্যাথলিক ও প্রোটেস্ট্যান্ট যাজক বেঁচে যাওয়া মানুষ ও উদ্ধারকর্মীদের সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে গিয়েছিলেন৷
মনের অবস্থা তুলে ধরেন
‘‘ভুক্তভোগীরা প্রথমে খোলাখুলি কথা বলেন৷ তাদের মনের অবস্থা তুলে ধরেন৷'' জানান রিসকে৷ ‘‘আমি তাদের সঙ্গে মিলে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনার চেষ্টা করি৷ তাদেরকে কথা বলতে দেই৷ কোনো মন্তব্য করি না৷ কেননা এটাই হলো প্রথম পদক্ষেপ৷ যে পথে তাদের নিজেদেরই যেতে হবে৷'' তিনি শুধু এই পথে সঙ্গী হতে পারেন৷ হয়তো কিছুটা নোঙরের কাজ করতে পারেন, এর বেশি নয়৷ সুরাহা করা তাঁর কাজ নয়৷ ‘‘একথা প্রযোজ্য এমন সব মানুষের জন্যও, যারা কোনো দুর্ঘটনায় নিজেকে দোষী মনে করে, যাদের মনে একটা অপরাধবোধ কাজ করে৷'' যেমন কোনো ট্রেনচালক যদি সিগন্যাল খেয়াল না করে চরম বিপর্যয় ডেকে আনেন৷
উভে রিসকে প্রায় মধ্য বয়সে পৌঁছেছেন৷ যাজকের প্রশিক্ষণ শেষ করে বন শহরের একটি স্কুলে ধর্ম ও ইতিহাস পড়িয়েছেন তিনি৷ তিন বছর ধরে তিনি রাইনল্যান্ড-এর একটি গির্জায় এমারজেন্সি কাউন্সেলিং করছেন৷ অর্থাৎ জরুরি অবস্থায় মানুষকে সহানুভূতির স্পর্শ দেন তিনি৷ সংকটের মুহূর্তে কোথা থেকে শক্তি পান তিনি? এই প্রশ্ন করা হলে উভে রিসকে জানান, পরিবার থেকে তো অবশ্যই৷ তবে বিপর্যস্ত মানুষদের ব্যথার সাথী হওয়ার সময়ও শক্তি অর্জন করেন তিনি৷ এটা যেন একধরনের উপহার৷
‘‘যে ব্যথা বেদনার সম্মুখীন হই আমি, তা অন্য একজন মানুষের৷ এটা আমার যন্ত্রণা নয়৷ তাদের প্রতি অনুকম্পা নয়, সমবেদনা জানাই আমি৷''
প্রয়োজন প্রশিক্ষণের
এসবের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন৷ কঠিন কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে টিমের সঙ্গে আলোচনা করে নিতে হয়৷
উভে রিসকে একজন বিনয়ী মানুষ৷ শক্ত সমর্থ৷ সোজা হয়ে হাঁটেন৷ চোখে চশমা৷ সামনের মানুষটিকে গভীর দৃষ্টিতে দেখেন তিনি৷ বোঝার চেষ্টা করেন তার মনের অবস্থা, ঝড়ঝাপটা৷ উভে রিসকে বলেন, ‘‘বিশ্ব হলো ঈশ্বরের সুন্দর সৃষ্টি৷ যতই আমি লক্ষ্য করি যে, সব কিছু কত ভঙ্গুর, ততই আমার নিজের জীবন মূল্যবান মনে হয় আমার কাছে৷'' কোনো কিছুই আপনা-আপনি হয় না৷ এ ব্যাপারে সবসময় সচেতন তিনি৷
‘‘আমার সন্তানদের সুস্থ দেখতে পাওয়া প্রতিটি দিনের জন্য আমি কৃতজ্ঞ৷'' জানান উভে রিসকে৷