জার্মানির বন্যায় ফেসবুক, টুইটার
১১ জুন ২০১৩টেলিভিশনে এক মহিলা বাঁধ দেবার জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগে বালি ভরতে ভরতে বলছিলেন: আজকাল আর খবর কে শোনে৷ সবাই তো ‘নেট' থেকেই খবর পায়৷ – খবর পায়, আবার দেয়ও বটে৷ লোকের কি মালমশলার দরকার পড়লেও নেটেই খবর চায়৷ নেটটাই হয়ে দাঁড়িয়েছে সব ধরনের সামাজিক গতিবিধির কেন্দ্রবিন্দু, বিপদ-আপদের সময়ে যা আরো প্রযোজ্য৷
বন্যার সময় নেটের ব্যবহার? স্বভাবতই জার্মানির সদ্যসৃষ্ট ‘পাইরেটস' দল এখানে অগ্রণী, কেননা দলটির জন্মই বাঁধনহীন, সীমানাছাড়া নেট-স্বাধীনতা, নেট-সংস্কৃতির ডাক থেকে৷ তাদের ওয়েবসাইটেই বন্যাত্রাণ সংক্রান্ত একটি নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা হয়েছে৷ সেই সাইটে কে একজন বার্তা দিয়েছেন: ‘‘শহরের কেন্দ্রের কাছাকাছি স্নান করার একটা সুযোগ চাই৷ গোটা দিনটা কাদা ঘাঁটার পর খুব ভালো লাগবে৷''
‘হ্যাশট্যাগ হোখভাসার' (হ্যাশট্যাগ বন্যা) হয়ে দাঁড়ায় টুইটারের টপ ট্রেন্ডগুলির মধ্যে অন্যতম৷ ফেসবুকে নিজের থেকেই বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হয়েছে৷ বন্যাপীড়িত এলাকার মানুষরা সেখানে একত্রিত হচ্ছেন, সংগঠিত হচ্ছেন, পারস্পরিক সাহায্যের ব্যবস্থা করছেন৷ কারোর পরিবহণের প্রয়োজন; খাবার বিতরণ; ওষুধপত্র; বন্যার জল বাড়া-কমা; দান হিসেবে যে সব জিনিসপত্র আসছে; কারা নিজেদের বাড়িতে বন্যার্তদের থাকার ব্যবস্থা করছেন; কারোর যদি জল নেমে যাওয়ার পর বাড়িঘর পরিষ্কার করতে সাহায্য লাগে, তবে তারও আয়োজন করা যাবে৷ এ সবই চলেছে ওয়েবসাইটে, ফেসবুকে৷
বন্যা তো জার্মানিতে হরহামেশা হয়ে থাকে: ২০০২ সালে, ২০০৬, ২০১০৷ কিন্তু এবার তার খবর ছড়াচ্ছে বিদ্যুৎ নয়, বৈদ্যুতিক গতিতে৷ টেলিভিশন কেন্দ্রগুলি ক্যামেরা টিম পাঠিয়ে ওঠার আগেই বেসরকারি, বেফরমাশি ‘আই-রিপোর্টারদের' তোলা ভিডিও নেটে ছড়িয়ে যাচ্ছে; পরে প্রতিষ্ঠিত, অভিজাত মিডিয়াও তা নির্দ্বিধায় ব্যবহার করছে৷
সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠছে ভবিষ্যতের সিভিল ডিফেন্স, বেসামরিক প্রতিরক্ষা, বন্যাত্রাণ৷ তরুণ প্রজন্মের কাছে তথ্যের, খবরাখবরের মূল উৎসই হলো এই সোশ্যাল মিডিয়া৷ কাজেই সরকার কি প্রশাসন, সকলকেই সোশ্যাল মিডিয়ার খোঁজ রাখতে হচ্ছে, এমনকি প্রয়োজনে দ্বারস্থ হতে হচ্ছে৷ শিখতে হচ্ছে, নাগরিকদের সঙ্গে কিভাবে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়৷ অন্যদিকে নেটে কিভাবে ‘চলাফেরা' করতে হয়, কোন পোস্টিংটা খাঁটি আর কোনটা মেকি, এ সব বুঝতে আমলাদের অনেক সময় লেগে যাবে, আরো লোক রাখতে হবে৷ কাজেই নেট যতদূর এগিয়েছে, সমাজ যতদূর এগিয়েছে, সরকার-প্রশাসনের ততদূর অবধি এগোতে এখনো কিছুটা বাকি৷ কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয়ই হোক কিংবা অন্য কোনো ঘটনাই হোক, নাগরিকরাই এখন তার সিসমোগ্রাফ এবং সেন্সর, এই বন্যা সেটাই আবার প্রমাণ করল৷