1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হতাশা থেকে বিক্ষোভ নেদারল্যান্ডসে

২৮ জানুয়ারি ২০২১

নেদারল্যান্ডসে করোনা-বিরোধী বিক্ষোভ আসলে হতাশা থেকে। লিখছেন ইনগ্রিড জারকামা।

https://p.dw.com/p/3oVZO
নেদারল্যান্ডসে বিক্ষোভ
ছবি: Thomas Bakker/PRO SHOTS/picture alliance

''আতসবাজি, গ্যাসোলিন সহ আর যা যা হাতের কাছে আছে সব নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন। বন্ধুদের জানান, কোথায় আপনি কারফিউ ভাঙছেন। আমাদের আজকের পরিকল্পনা হলো পুলিশকে নাজেহাল করা।'' টেলিগ্রামে রেলেন নেদারল্যান্ড নামে একটি গ্রুপে এমনই মেসেজ চালাচালি হচ্ছে। এই মেসেজটির লেখকের নাম এসকেকেআরআর মিশটু।

কারফিউ-বিরোধীরা সোশ্যাল মিডিয়ার নানা অ্যাপে গ্রুপ তৈরি করেছে। কীভাবে কোথায় কারফিউ ভাঙা হবে, দাঙ্গা বাঁধানো হবে, তা নিয়ে সেখানে নিয়মিত আলোচনা হচ্ছে। গাড়ি জ্বালানো, বাড়ি ভাঙার ভিডিও আপলোড করা হচ্ছে সেখানে। বিভিন্ন গ্রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে একাধিক ডাচ মন্ত্রীর নাম এবং তাদের ঠিকানা।

করোনার সংক্রমণ আটকানোর জন্য নেদারল্যান্ডসে সম্প্রতি কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। রাত নয়টা থেকে ভোর সাড়ে চারটে পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে। গত সপ্তাহের শনিবার নতুন এই নিয়ম বলবৎ করা হয়েছে। এর আগে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে সম্পূর্ণ লকডাউন ছিল। তাতে করোনার প্রকোপ বেশ খানিকটা কমেওছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নতুন করে কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছে একটাই কারণে। যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন দ্রুত ছড়াচ্ছে গোটা ইউরোপে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম নেদারল্যান্ডসে কারফিউ জারি করা হয়েছে। আর তা নিয়েই মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েছে।

সহিংসতা বাড়ছে

কারফিউ বিরোধী বিক্ষোভ দ্রুত সহিংস হয়ে উঠছে। নেদারল্যান্ডসের একাধিক শহরে বিক্ষোভ হচ্ছে। হেগ, টিলবুর্গ, ভেনলো, আমস্টারডাম, রোটারডম সর্বত্রই বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। পুলিশ ঘোড়া, কুকুর, জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করছে প্রতিবাদীদের সরানোর জন্য। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা আতসবাজি ছুড়ছে পুলিশের উপর। সুপারমার্কেটের কাচ ভেঙে সমস্ত কিছু লুঠ করা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে একটি হাসপাতালেও আক্রমণ চালিয়েছিল বিক্ষোভকারীরা। উর্কে একটি কাপড়ের দোকান বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবারই পুলিশ গোটা দেশে ১৩১ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে রটারডাম থেকে।

বুধবারও হাসপাতালে আক্রমণ হয়েছে, পুলিশের উপর অবৈধ আতসবাজি ছোড়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় আগুন জ্বলেছে, তা সত্ত্বেও বুধবার পুলিশ জানিয়েছে, পরিস্থিতি মোটের উপর নিয়ন্ত্রণে। সহিংসতার পরিমাণও কমেছে।

ভয়ের বাতাবরণ

নেদারল্যান্ডসে সহিংসতা বড় একটা দেখা যায় না। শান্তিপ্রিয় এই দেশে আচমকা এত উত্তাপ সাধারণ মানুষকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভও ক্রমশ ধূমায়িত হচ্ছে।

''দেশের অবস্থা দেখে আমি চিন্তিত।'' ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন ডিয়ানে গ্যামেরান। একটি জেলার পুলিশ প্রধান তিনি। মঙ্গলবার তাঁর এলাকাতেও বিক্ষোভ হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীরা এখন ছুরি এবং বন্দুক নিয়েও রাস্তায় নামছে। এমনই সশস্ত্র ৫০ জনকে গ্রেফতার করেছে তাঁর পুলিশ ফোর্স। গ্যামেরান জানিয়েছেন, বিক্ষোভকারীদের হাতে সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।

কোভিডের সঙ্গে এই বিক্ষোভের বিশেষ যোগ আছে বলে মনে করছেন না পুলিশ প্রধান। তাঁর বক্তব্য, অসামাজিক গোষ্ঠীগুলি উত্তাপ ছড়ানোর জন্যই এ ধরনের বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।

বিভিন্ন অ্যাপে যে ধরনের মেসেজ দেখা যাচ্ছে, তা থেকে স্পষ্ট যে, দেশের মধ্যে এক ধরনের প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে। বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁদেরই নাম সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ঘুরছে। 

নাগরিক সমাজের অবস্থান

নাগরিক সমাজেরঅনেকেই রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে তাঁরাও আন্দোলন তৈরি করছেন। রাডার বলে একটি সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে নেদারল্যান্ডসে সমানাধিকার নিয়ে কাজ করে। ওি গোষ্ঠীর অন্যতম টিমলিডার টিখো ওং ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এই বিক্ষোভকারী কারা, তা এখনো অস্পষ্ট। বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তি এর সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন কারণে তারা এ কাজ করছে। কেউ সামাজিক অস্থিরতা তৈরির জন্য। কেউ বা কেবলমাত্র ঘরে বসে বসে ক্লান্ত হয়ে গেছে বলে রাস্তায় নেমে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করছে।

হোয়ানে মঙ্গলবার রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁর এলাকায় কারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তা দেখতে গেছিলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, এলাকার কাজহীন লোকেরা এই বিক্ষোভে যোগ দিচ্ছে। বিক্ষোভ দেখানো ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই।

হোয়ানে ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, যুবসমাজের হতাশার কারণ বোঝা যাচ্ছে। বন্ধুদের সঙ্গে সন্ধের পর তারা ডিনারে যেতে পারছে না, ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করতে পারছে না। কিন্তু তার জন্য এ ধরনের সহিংস বিক্ষোভও দেখানো যায় না। এর ফলে তাদেরই ভবিষ্যতের ক্ষতি হচ্ছে।

পুলিশও এলাকার শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে বিক্ষোভ বন্ধ করার কাজে ব্যবহার করছে। চেষ্টা করা হচ্ছে বিক্ষোভকারীদের বোঝানোর। তাতে খানিকটা লাভ হয়েছে বলেও মনে করছে পুলিশ।

 LINK: http://www.dw.com/a-56362461