সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে ৫ বছর!
৩০ এপ্রিল ২০১৩সাভারে রানা প্লাজা ধসে ৪ শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও শোকার্ত মানুষের একটিই দাবি৷ ভবন মালিক সোহেল রানা, তাঁর বাবা আব্দুল খালেক এবং যে সব গার্মেন্টস মালিক জোর করে শ্রমিকদের ভবনের ভিতরে ঢুকতে বাধ্য করেছিলেন, তাঁদের সর্বোচ্চ শাস্তি – মানে ফাঁসি দিতে হবে৷ এই দাবিতে মঙ্গলবারও পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিক্ষোভ এবং ভাঙচুর করেছে৷ সরকার এবং পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির প্রতিশ্রুতিও দেয়া হয়েছে৷ গ্রেফতার করা হয়েছে ভবন মালিক সোহেল রানাসহ ৪ গার্মেন্টস মালিককে৷ বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে৷
কিন্তু প্রকৃত অর্থে মানুষের এই দাবিতে পানি ঢেলে দিয়েছে পুলিশ৷ সাভার থানায় যে মামলা করেছে পুলিশ তা হত্যা মামলা নয়৷ দণ্ডবিধির ৩০৪(ক) ধারায় দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর মামলা হয়েছে৷ তাতে শাস্তির পরিমাণ খুবই কম৷ আর ইমরাত আইনে রাজউকের করা মামলায়ও মামুলি শাস্তির বিধান আছে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক হাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, ৩০৪(ক) ছাড়াও দণ্ডবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ এবং ৩৪ ধারা রয়েছে মামলায়৷ কিন্তু এর কোনো ধারায়ই শাস্তির মাত্রা ৫ বছরের বেশি নয়৷ যা গুরু পাপে লঘু দণ্ডের মত৷
তিনি আরও বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত যে সব তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে ভবন মালিক এবং গার্মেন্টস মালিকরা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও ভবনে শ্রমিকদের ঢুকতে বাধ্য করেছেন৷ শ্রমিকরা ঢুকতে না চাইলে তাদের চাকরি থেকে ছাঁটাইয়ের হুমকি দেয়া হয়৷ এটা একটি হত্যাকাণ্ড৷ কোনভাবেই দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নয়৷ জেনে শুনে শ্রমিকদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে৷ পুলিশ অপরাধীদের রক্ষায় কৌশলে দুর্বল ধারায় মামলা করেছে৷''
তিনি এই মামলাকে হাস্যকর বলে তা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন৷
ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ডয়চে ভেলের কাছে মামলার এই ত্রুটির কথা স্বীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে তাড়াহুড়ো করে মামলা দায়ের করতে গিয়ে সাভার থানা পুলিশ এই ভুল করেছে৷ তবে তিনি দাবি করেন, চার্জশিটে ৩০২ ধারায় হত্যাকাণ্ডের অপরাধ সংযুক্ত করা যাবে৷
মুখে পুলিশ প্রশাসন যাই বলুক না কেন, আইনগতভাবে রানা এবং দায়ী ব্যক্তিদের শুরুতেই সুবিধা করে দেয়া হয়েছে৷ তাই আশঙ্কা ফাঁসি তো দূরের কথা আইনের ফাঁক গলিয়ে অপরাধীদের জমি পেতেও তেমন সময় লাগবেনা৷