অবৈধভাবে নির্মিত হয় রানা প্লাজা
২৪ এপ্রিল ২০১৩রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটি নির্মাণ করা হয় ২০০৯ সালে৷ এর মালিক শাসক দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন সাভার পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক সোহেল রানা৷
এই ভবনটি যেমন সরকারী খাস জমির ওপর অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে৷ তেমনি ভবন নির্মাণে নেয়া হয়নি কোনো অনুমোদন৷
রাজউকের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁরা সাভারে রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবন নির্মাণের কোনো অনুমোদন দেননি৷ তাহলে কীভাবে নির্মাণ করা হল? এই প্রশ্নের জবাবে সাভার পৌর মেয়র রেফায়েত উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, সাভার পৌর এলাকায় ৬ তলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণে পৌরসভার অনুমোদন হলেই চলে৷ কিন্তু এর চেয়ে বেশি তলার ভবন করতে হলে রাজউকের অনুমোদন লাগে৷ সোহেল রানা ৬ তলার অনুমোদন নিয়ে অবৈধভাবে ১০ তলা বানিয়েছেন৷ পৌর মেয়র জানান, ভবনটিতে ফাটল দেখা দেয়ার পর তাঁরা ভবনটি খালি করার নোটিশ দেন ২ দিন আগে৷ কিন্তু ভবন মেরামত না করেই উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় ক্ষমতার জোরে সোহেল রানা মাইকিং করে বুধবার সকালেই ভবনটিতে সবাইকে ফিরে আসতে বলেন৷ আর সবাই ফিরে এলে ভবনটি ধসে পড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে৷ প্রাণ হারায় শতাধিক নারী পুরুষ৷
সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে এই ভবনে নানা ধরনের দোকানপাট, শো রুম, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বিমা এবং ৫টি তৈরি পোশাক কারখানা ছিল৷ ভবন ধসে পড়ার সময় ৬ হাজারের মত মানুষ ছিলেন ভবনটিতে৷ সাভার পৌরসভার প্রকৌশলী ইনতেমাম হোসেন জানান, তাঁদের কাছ থেকেই ভবনের নকশা পাশ করা হয়৷ কিন্তু ভবনটি তৈরির সময় সে নকশা মানা হয়নি৷ আর ব্যবহার করা হয় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী৷ সে কারণেই ভবনের ৬টি পিলারে ফাটল দেখা যায়৷ তারা ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে নোটিশ দেয়ার পরও যুবলীগ নেতা সোহেল রানা তাদেরকে পাত্তা দেননি৷
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঙ্গলবার বিকেলে ভবনটি পরিদর্শনে গিয়ে বলেন, কয়েকটি পিলারে ফাটল দেখা গেলেও ঝুঁকির কোনো কারণ নেই৷ তাঁর সঙ্গে ভবনের মালিক সোহেল রানাও ছিলেন৷ ফলে রাতেই ভবনটির সব প্রতিষ্ঠান আবার চালু হয়৷ তবে উপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কবির হোসেন সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনটি যখন আবার চালু করা হয় তখন তা বন্ধে পৌরসভা পুলিশের সহায়তা চাইলেই এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটতো না৷
রানা প্লাজা নামের বহুতল ভবনটির সংলগ্ন এলাকায় জলাভূমি এবং নিম্নভূমি আছে৷ পৌর প্রকৌশলী জানান, পুকুর ভরাট করে নরম মাটিতে ভবনটি নির্মাণের জন্য ঠিকমতো পাইলিংও করা হয়নি৷ নির্মাণের সময় তাঁরা এ বিষয়ে বার বার তাগাদা দিয়েছেন৷ নির্মাণকাজ বন্ধও রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু সোহেল রানা প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁকে আটকানো যায়নি৷ সে ভবনের আন্ডার গ্রাউন্ডে পার্কিং ছাড়াও অফিসের জন্য ভাড়া দিয়েছিল৷ ভবন ধসের পর থেকে যুবলীগ নেতা সোহেল রানা পলাতক আছেন৷ আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর বলেছেন, এই মর্মন্তুদ ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷
২০০৯ সালে এই ভবনটি নির্মাণের পর এক জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল৷ অবৈধভাবে ভবনটি নির্মাণ করা হলেও সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিসহ সংসদ সদস্য তৌহিদ জং মুরাদও উপস্থিত ছিলেন৷ তাঁরা তখন এই অবৈধ কাজকেই উৎসাহ দিয়েছেন৷ আর তখন উৎসাহ না দিলে এত মানুষের প্রাণ যেতনা৷