সিলেটে মুখ থুবড়ে পড়ল টাইগাররা
৬ নভেম্বর ২০১৮ওয়ানডেতে জিম্বাবোয়েকে হোয়াইট ওয়াশ করার পর সফরকারী দলকে টেস্টে হালকাভাবে নেয়া হয়েছে, এ অভিযোগ অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর৷ কিন্তু পোস্ট ম্যাচ প্রেস ব্রিফিংয়ে তা উড়িয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ৷
‘‘সিলেটের কন্ডিশন বিবেচনায় টিম ম্যানেজমেন্ট যে দল তৈরি করেছে, তিনজন স্পিনার নেয়া হয়েছে, আমিও মনে করি সেটিই সঠিক,'' বলেন অধিনায়ক৷
কিন্তু তারপরও কেন এত সহজে ধরাশায়ী হলো বাংলাদেশ? প্রথম ইনিংসে এই বোলিং লাইনআপের বিপরীতে জিম্বাবোয়ে করে ২৮২, আর বাংলাদেশ করে তার প্রায় অর্ধেক (১৪৩)৷ দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের ১৮১-তে আটকে রাখতে পারলেও বাংলাদেশ এখানেও পিছিয়ে৷ ১৬৯ রানে অলআউট৷ অর্থাৎ দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল জিম্বাবোয়ে৷
১৭ বছর আগে বিদেশের মাটিতে যে টেস্টটি তারা জিতেছিল, সেটিও বাংলাদেশে৷ সে দলে অবশ্য ছিলেন ফ্লাওয়ার ভ্রাতৃদ্বয়, হিথ স্ট্রিকের মতো ক্রিকেটাররা৷ কিন্তু এই জিম্বাবোয়ের কাছেও এমন অসহায় আত্মসমর্পন, যারা গত পাঁচ বছরে কোনো টেস্ট জেতেনি?
‘‘আমরা ঘুরে দাঁড়াবো,'' পোস্ট ম্যাচ ব্রিফিংয়ে বলেন মাহমুদউল্লাহ৷‘‘বাংলাদেশ ক্রিকেট এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে৷ কিন্তু বারবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷''
মিরপুরে ১১ নভেম্বর শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবেন ক্রিকেটাররা৷ অন্তত এমনটাই আশা অধিনায়কের৷
কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স তেমন আশা জাগায় না৷ টেস্টে এই ম্যাচেই যে বাংলাদেশ খারাপ করেছে তা নয়৷ জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে রীতিমতো দুঃস্বপ্ন দেখে এসেছিল টাইগাররা৷
এমনকি তার আগের দু'টি সিরিজেও শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছে৷
সুতরাং ওয়ানডেতে যতই দুর্দান্ত হোক বাংলাদেশের পারফরম্যান্স, টেস্টে যে এখনো বহুদূর যেতে হবে, তা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে৷ বিশেষ করে মানসিকতায়৷ ম্যাচের পরে তেমনটিই ইঙ্গিত দিলেন জিম্বাবোয়ের ভারতীয় কোচ লালচাঁদ রাজপুত৷ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই ম্যাচে কোন দিক থেকে এগিয়ে ছিল জিম্বাবোয়ে?
‘‘অবশ্যই মানসিকতায়,'' জবাবে বলেন তিনি৷
অবশ্য দলের শেষ দিনের ব্যাটিং অনেকের মনেই এমন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে৷ যেমন, শেষ বলটিই দেখুন৷ শট নিতে গিয়ে এজড হয়ে চাকাবভার হাতে ক্যাচ দিলেন আরিফুল৷ অথচ তখনও দিনের দেড় সেশন বাকি৷ অবশ্য ৩৭ বলে ৩৮ রান করা আরিফুল একাই শেষ দিকে লড়েছেন৷ সতীর্থরা আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলে তাঁরই বা কী করার আছে?
কিন্তু অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ কী করলেন? সুইপ না পুল? ইমরুল কায়েস আর লিটন দাসের ওপেনিং জুটি ভালোই করছিল৷ কিন্তু এক সিকান্দার রাজা পুরো সিরিজে যা ভুগিয়েছেন, সেখানে তাঁকে একটু সমীহ করে খেললে খুব কি অসুবিধা হতো? কিন্তু ২৩ রান করা লিটন উইকেট দিয়ে এলেন৷ ৪৩ করা ইমরুল লম্বা ইনিংসের আশা দেখাচ্ছিলেন৷ কিন্তু তিনিও রাজাকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ডই হয়ে গেলেন৷ এর মাঝে এসেছিলেন মুমিনুল৷ তাঁর যেন কী হয়েছে৷ আবারো ফ্লপ৷ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন, জার্ভিসের অনেক বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে৷ শেষ দিকে আরিফুল হক ছাড়া আর কেউ উইকেটে টিকতেই পারেননি৷
আগের দিন কোনো উইকেট না হারিয়ে ১০ ওভারে ২৬ রান করেছিল বাংলাদেশ৷ আর চতুর্থ দিন আরো ৫৩ ওভার খেলে ১৪৩ রান যোগ করতেই সবক'টি উইকেট হারায় বাংলাদেশ৷
দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশ খেলেছে ১১৪ দশমিক ১ ওভার৷ আর জিম্বাবোয়ে প্রথম ইনিংসেই খেলেছে ১১৭ দশমিক ৩ ওভার৷
প্রথম ইনিংসে ৮৮ রান করা শন উইলিয়ামস হয়েছেন ম্যাচসেরা৷ বাংলাদেশের একমাত্র অর্জন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের ১১ উইকেট৷