সরকারের কাছে কৈফিয়ত চান হাসানুল হক ইনু
৫ মার্চ ২০২১বাংলাদেশের সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই আইনেই আছে ৬০ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে হবে৷ না পারলে আরো ১৫ দিন৷ অর্থাৎ, মোট ৭৫ দিন৷ তাহলে কেন কাজলকে ২১০ দিন কারাগারে রাখলেন আমি কৈফিয়ত তলব করছি সরকারের কাছে৷ কীজন্যে কিশোরকে ২১০ দিন কারাগারে রাখলেন? কেন মুশতাককে ৭৫ দিনের বেশি রাখলেন? এবং আদালত কেন এখানে চোখ বন্ধ করে থাকলেন? আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি৷ আদালত এখানে ৪০ ধারা দেখে বলবে যে, ৭৫ দিন হয়ে গেছে- জামিন৷ আরেকটা ব্যাপার হলো, লেখক, সাংবাদিক ও গবেষকদের বিরুদ্ধে আইন করা হচ্ছে, তখন তারা তো দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে না৷ সুতরাং, তাদের জামিন দিন, বিচার করুন, কোনো অসুবিধা তো নেই৷ তাদেরকে হয়রানি করার জন্য প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়ত তলব করা উচিত৷’’ ডয়চে ভেলের ইউটিউব টকশো ‘খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়’-এ যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন৷
সম্প্রতি বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দশমাস বন্দি থাকার পর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন লেখক মুশতাক আহমেদ৷ তার সঙ্গে আটক হওয়া কার্টুনিস্ট কিশোর বৃহস্পতিবার জামিনে মুক্ত হয়েছেন৷ আটকের পর তার উপর চালানো নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন তিনি বাংলাদেশের দুইটি সংবাদ মাধ্যমে৷ বিষয়টি নিয়ে সংসদে আলোচনা করবেন কিনা জানতে চাইলে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘‘এটা নিয়ে কথা হবে৷ এটা নিয়ে আমরা সংসদে (কথা) তুলবো, কেন টর্চার করা হলো৷ সেটা নিষিদ্ধ৷ এজন্য অনেক পুলিশ বরখাস্ত হয়েছেন৷ সুতরাং শারীরিক নির্যাতন যদি কিশোরকে করে থাকে, তাহলে এর জন্য ঐ কর্মকর্তাকে কৈফিয়ত দিতেই হবে৷ এটা সংসদে তোলার মতো কথা৷’’
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুলও ছিলেন৷ তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও এর প্রয়োগে সরকারের সমালোচনা করেন৷ বলেন, ‘‘(ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে) সরকারবিরোধী যে কোনো বক্তব্যকে রাষ্ট্রবিরোধী বলে তাকে জেলে দিনের পর দিন রাখতে পারেন এবং এভাবে নির্যাতন করতে পারেন৷ যে দেশে সেনাবাহিনীর ভাইরা দণ্ডিত খুনি ও পলাতক অবস্থায় ক্ষমা করে দেয়া হয়, আর অসুস্থ মানুষ যিনি (মুশতাক আহমেদ) সামান্য কোভিড পরবর্তী দুর্নীতি নিয়ে লিখেছেন, তাকে ছয় ছয়বার আদালত জামিন নামঞ্জুর করেছেন৷’’
আসিফ নজরুলের মতে, বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কোনো প্রয়োজন বাংলাদেশে নেই, তথ্য প্রযুক্তি আইনের পরিবর্তন ও সংযোজন করেই কাজ চালানো সম্ভব৷ এই আইনটি বাতিলের তিনটি কারণ তুলে ধরেন তিনি৷ ‘‘প্রথমত, এখানে সংজ্ঞার অস্পষ্টতা রয়েছে৷ রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, উসকানি, এগুলো বলে যে কোনো ব্যক্তিকে ভিক্টিমাইজ করা সম্ভব৷ দ্বিতীয়ত, এখানে পুলিশকে অবারিত ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ তৃতীয়ত, এই আইনের চরম অপপ্রয়োগ হয়েছে৷ আমি বিশ্বাস করি, এই আইন করা হয়েছে ভিন্নমতাবলম্বীদের মুখ বন্ধ করার জন্য৷ সরকার এই আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে অন্যদের সাবধান করে দেয়ার চেষ্টা করছে, এটা আমার বিশ্বাস,’’ বলেন ড. নজরুল৷
তবে এই বিষযে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷ তার মতে, দোষ আইনের নয়, বরং প্রয়োগের৷ প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই বাছাই করছেন কাকে ধরবেন, কাকে ধরবেন না৷ সেজন্যই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে৷ তিনি মনে করেন, আসিফ নজরুল যে তিনটি বিষয় উত্থাপন করেছেন তার প্রতিটিই সংশোধনযোগ্য৷ বলেন, ‘‘যে আইন আছে, সেটি সংশোধন করা সম্ভব বলে আমি মনে করি৷ কাজেই আইন বাতিল হতে পারে না৷ ডিজিটাল জগত মোকাবিলায় এই আইন দরকার৷’’
এফএস/এসিবি