মেরে ফেলার সুযোগ তৈরি করেছে ডিজিটাল আইন
২ মার্চ ২০২১আর সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক মনে করেন আইনটি রাখলেও মানহানি ও ভাবমূর্তি সংক্রান্ত ধারাগুলো পুরোপুরি বাতিল করে দিতে হবে৷ তার মতে, সরকারের সমালোচনা কোনোভাবেই রাষ্ট্রের সমালোচনা বা রাষ্ট্রদ্রোহ নয়৷
১০ মাস কারাগারে আটক থাকার পর লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে মনে করেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া৷ তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এই আইনটি এমন যে এখানে ভাবমূর্তি বা মানহানির কোনো ব্যাখ্যা নাই৷ এর ব্যাখ্যা ঠিক করে পুলিশ৷ ফলে সরকার বা ক্ষমতাশালীরা যেভাবে মনে করে সেইভাবে এটাকে ব্যাখ্যা করা হয়৷
দেখতে একটি ‘নিরীহ’ কথা আছে এই আইনে৷ আর তা হলো, কেউ যদি জেনে শুনে মিথ্যা প্রকাশ করে ডিজিটাল মাধ্যমে তাহলে এই আইনে মামলা হয়৷ কিন্ত কেউ যে জেনে বা শুনে মিথ্যা বলছেন তা নির্ধারণ করবে কে? তা নির্ধারণের আগেই তো মামলা হয়ে যাচ্ছে৷ কারাগারে পাঠানো হচ্ছে৷ মারা যাচ্ছে৷
আসলে এই আইনে সাধারণ মানুষের বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷ ২০১৮ সালে এই আইনটি পাস হওয়ার পর সাধারণ মানুষ এর মাধ্যমে বিচার পেয়েছে তার একটিও উদাহরণ নেই৷ এই আইনে সাংবাদিক, লেখক এমনকি চিকিৎসকদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘‘ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতেই এখন আইনটি বাতিল করা প্রয়োজন৷ সংসদ সদস্যেরা এই আইন জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে করলেও এখানে জনমতের প্রতিফলন নাই৷ সাধারণ মানুষ কি তাদের বিনা বিচারে বেধে রাখার আইন চাইবেন?’’
সাইবার অরপাধ বলতে সাধারণভাবে যা বুঝায় তা প্রতিরোধে নিয়ে এই আইনের প্রয়োগ দেখা যায় না৷ বিশেষ করে অনলাইনে তথ্য চুরি, ব্যাংকের তথ্য চুরি, নারীদের হয়রানি- এসব ব্যাপারে এই আইনে বিধান থাকলেও তার প্রতিকার পাওয়া যায় না৷
ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের নামে কটাক্ষ করা, ব্যঙ্গ করা, সমালোচনা করে এগুলো কোনোভাবেই অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে না৷ সৌদি আরব, উত্তর কোরিয়া ছাড়া দুনিয়ার কোনো গণতান্ত্রিক দেশে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অপরাধে শাস্তির এমন আইন নাই৷’’
তিনি বলেন, কার্টুন আকার অপরাধে কিশোরকে জেলে যেতে হয়েছে৷ মুশতাক আহমেদকে লেখার কারণে কারাগারে গিয়ে মারা যেতে হয়েছে৷ এখন তো বাংলাদেশে কার্টুন আঁকা বন্ধ হয়ে গেছে৷ রম্য ম্যাগাজিনও নাই বললেই চলে৷ ডিজিটাল আইনের কারণে এটা হয়েছে৷ এই আইনটি রাখতে হলে ভাবমূর্তি সংক্রান্ত সব ধারা বাদ দিতে হবে৷ আর জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, সাইবার অপরাধের প্রতিকার আগের আইসিটি আইনেই আছে৷ আর জিজিটাল আইনে ৫৪ ধারার যত খারাপ দিক আছে তার সবই যুক্ত করা হয়েছে৷
সরকারের কোনো মন্ত্রী বা প্রভাশালী ব্যক্তির সমালোচনা করায় এখন রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হচ্ছে৷ ডিজিটাল আইনে মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে৷ কিশোর-মুশতাকদের বিরুদ্ধে মামলায়ও রাষ্ট্রদ্রোহ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা বলা হয়েছে৷ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘সরকার বা সরকারের কোনো ব্যক্তির সমালোচনা কখনোই রাষ্ট্রদ্রোহ নয়৷ সরকারে সমালোচনা করা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো অপরাধ নয়৷’’
তিনি বলেন পেনাল কোডের ১২৪(ক) ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের বিষয়টি আছে৷ সেখানে যা বলা হয়েছে তা এই আইনের প্রয়োগকারীরা বুঝতে পারছেন না৷ এখন ভাবমূর্তি ধরে যদি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করা হয় তাহলে কী বলার আছে?
পুরো বৃটিশ আমলেও ১০০টির বেশি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়নি বলে তিনি জানান৷ আর এখন কথায় কথায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ করা হচ্ছে৷