1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচার হয় না

২০ মার্চ ২০২১

বাংলাদেশে যেকোনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার পর তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও রাজনীতি হয়, কিন্তু বিচার হয় না৷ ফলে থামছে না নির্যাতনের ঘটনাও৷ অভিযোগ, নেপথ্যে ক্ষমতাসীনরা জড়িত থাকায় তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায় না৷

https://p.dw.com/p/3quaY
সুনামগঞ্জে হিন্দু পল্লীতে হামলা হয় মাইকে ঘোষণা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে৷ছবি: Harun ur Rashid Swapan/DW

সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত পুলিশ হামলায় এখন পর্যন্ত ২৩ জনকে আটক করা হয়েছে৷ সবশেষ গ্রেপ্তার হয়েছেন ‘মূল আসামি' শহীদুল ইসলাম স্বাধীন ওরফে স্বাধীন মেম্বার৷ স্থানীয় গণমাধ্যমে তাকে যুবলীগ সভাপতি বলা হলেও মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, তিনি যুবলীগের কেউ নন৷

এদিকে হামলার ঘটনায় জড়িতদের ধরতে এখন তৎপর হলেও ঘটনার ১২ ঘণ্টা আগে খবর পেয়েও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ৷ এই ঘটনার একদিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগে ঝুমন দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ অন্যদিকে আটক স্বাধীন মেম্বার হামলার পর শাল্লা থানার ওসির সাথেই ছিলেন বলে গ্রেপ্তারের আগে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷

হিন্দু মহাজোটের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক রিপন দে বলেন, ‘‘শুধু সুনামগঞ্জ নয়, তার আগেও যে কয়টি বড় ধরনের হামলা হয়েছে পুলিশ আগে পরিকল্পনার কথা জানলেও নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷ আর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনইবা কী করেন?’’

২০১২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরে রামুতে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলার ঘটনা ঘটে৷ প্রায় নয় বছর পার হলেও কোন বিচার এখনও হয়নি৷ এই ঘটনায় মোট ১৯টি মামলা হয়েছিল৷ একটি মামলার চার্জশিট হলেও বিচার শুরু হয়নি৷ যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তারা সবাই জামিনে আছেন৷ আর যে উত্তম বড়ুয়ার নামে ফেসবুক পোস্টের অজুহাতে রামু, উখিয়া এবং টেকনাফে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল তিনি জামিন পেলেও এখন নিখোঁজ রয়েছেন৷ যদিও তদন্তে তার ফেসবুক পোস্টের কোনো প্রমাণ মেলেনি৷

২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু বসতিতে হামলার তদন্ত প্রায় পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি৷ ওই সময় যাদের আটক করা হয়েছিল তারাও জামিনে মুক্ত৷ অন্যদিকে লেখাপড়া না জানা যে রসরাজের ফেসবুক পোস্টের ধর্মীয় অবমাননার কথা তুলে হামলা হয়েছিল তাকেই উল্টো দীর্ঘদিন জেলে থাকতে হয়েছে৷ এখন জামিন পেলেও আতঙ্কে তার দিন কাটছে৷

কাজল দেবনাথ

বংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ- খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘নাসিরনগরে হামলার নেপথ্যে ছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও তার ভাই৷ তাদের আইনের আওয়তায় আনা হয়নি৷’’

একইভাবে রংপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ভোলায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার তদন্ত শেষ হয়নি৷ কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘আমাদের জানামতে গত কয়েক বছরে কোনো হামলারই বিচার হয়নি৷ প্রত্যেকটি হামলার পেছনেই ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ব্যবহারকারী নেপথ্যের শক্তি রয়েছে৷ তাদের পরিকল্পনায়ই এইসব হামলা হয়েছে৷ কিন্তু তারা ক্ষমতাবান আবার কেউ কেউ শাসক দলের৷ ফলে তারা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে৷’’

হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গত বছরের অক্টোবরে সাতমাসে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটি জরিপ প্রকাশ করে৷ তাতে বলা হয় গত বছরের মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর এই সাত মাসে ৬০টি পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে৷ মন্দিরে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ২৩টি ঘটনা ঘটেছে৷ ওই সময়ে হত্যার শিকার হয়েছেন ১৭ জন সংখ্যালঘু৷ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে ১১ জনকে৷ ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩০ জন৷ অপহরণের শিকার হয়েছেন ২৩ জন৷

২৭টি প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে৷ বসতভিটা, জমিজমা, শ্মশান থেকে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ২৬টি৷ সাতজনকে জোর করে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে চারজনকে৷ বসত-ভিটা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে ৮৮টি৷ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন ২৪৭ জন৷

তাদের হিসাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় মামলার হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ৷ অনেক ঘটনায় মামলাও করা যায় না৷ আর বিচার পাওয়ার হার সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় শতাংশ৷ কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘এতদিন ছিলো ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে হামলা৷ আর সুনামঞ্জের ঘটনায় দেখা গেলো হেফাজত নেতা মামুনুল হকের সমালোচনা করায় হামলা৷ এর সাথে ধর্ম অবমাননার কী সম্পর্ক আছে? আর মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ছুড়ে ফেলার কথা বলেছেন৷ আমরা যদি বলতাম তাহলে এখনো কি মুক্ত বাতাসে থাকতে পারতাম?’’

এই ঘটনায় ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি গ্রেপ্তার হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি এর পেছনে আরো বড় শক্তি আছে৷ তারা এখনো আইনের আওতায় আসেননি৷’’

শ. ম. রেজাউল করিম

যারা হামলা করে তারা গ্রেপ্তার হয় না৷ বিচারও হয় না৷ কাজল দেবনাথ বলেন, ‘‘এর পিছনে আছে রাজনীতি৷ ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার৷ আরো আছে হিন্দুদের জমি ও সম্পত্তি দখল৷ আর এটা ক্ষমতা না থাকলে করা যায় না৷ এখন সব মতলববাজদের টার্গেট সংখ্যালঘুরা৷’’

হিন্দু মহাজোটের রিপন দে বলেন, ‘‘আমরা বারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি৷ তিনি বলেন আটকরা জামিন পেলে তাদের কিছু করার নাই৷ আর যখন প্রশ্ন করি অপরাধ না করেও এইসব ঘটনায় তাহলে সংখ্যালঘুরা কেন আটক আছেন? তার জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তার কারণে আটক রাখা হয়৷’’

মনবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘এই হামলায় পেশি শক্তি যেমন থাকে৷ রাজনৈতিক শক্তিও থাকে৷ রামুতে যেমন দলমত নির্বিশেষে সব দলকে একত্রিত করে হামলা চালানো হয়েছে৷ সাধারণভাবে এমন একটি ধর্মীয় জিকির তোলা হয় যে তখন অনেক ক্ষেত্রেই সব দল এক হয়ে হামলা চালায়৷ রাষ্ট্র আসলে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে৷’’

শাসক দলের নেতা-কমীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাবেক আইন সম্পাদক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ. ম. রেজাউল করিম বলেন, সুনামগঞ্জের ঘটনায় গ্রেপ্তার ওই ব্যক্তি যুবলীগের কেউ নন৷ যুবলীগের পক্ষ থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে  জানানো হয়েছে তিনি প্রাথমিক সদস্যও নয়৷ আর নাসিরনগরের ঘটনায় সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে৷ দলীয়ভাবে নয়, কেউ ব্যক্তিগতভাবে ওই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে৷ কিন্তু দলীয় পরিচয়ের কারণে তাদের সরকার ছাড় দেয়নি৷

তিনি বলেন, ‘‘সরকার সাম্প্রদায়িকতাকে কোনোভাবে উৎসাহিত করে না৷ বরং কঠোর হাতে দমন করে৷ যা ঘটছে তা দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য কেউ নেপথ্যে থেকে ঘটাতে পারে৷ সরকার এটাকে কঠোরভাবে নিয়েছে৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান