‘শ্রেষ্ঠ সন্তান’ জন্ম দেওয়ার অঙ্গীকার
২০ মে ২০১৭ভারতের হিন্দু মৌলবাদী দল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আরএসএস-এর আরোগ্য ভারতী হাসপাতাল সম্প্রতি এ দাবি তুলে খবরের শিরোনাম হয়েছে৷ তারা এই প্রচারণার নাম দিয়েছে ‘গর্ভ বিজ্ঞান সংস্কার প্রকল্প'৷ এই প্রকল্পের আওতায় কাজ করছে গুজরাটের পাঁচটি চিকিৎসা কেন্দ্র৷ এই প্রকল্পে এ পর্যন্ত সাড়ে চারশ' প্রতিভাধর শিশুর জন্ম হয়েছে বলে দাবি করেছে আরএসএস৷ ২০২০ সালের মধ্যে ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্যে এমন প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তারা৷
আরোগ্য ভারতীর গর্ভ বিজ্ঞান সংস্কার প্রকল্পের প্রধান সমন্বয়ক কারিশমা মোহনদাস নারওয়ানি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, ‘‘আমরা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করেই কাজটি করছি৷ একটি সুষম খাদ্যাভ্যাস, আয়ুর্বেদ এবং জ্যোতির্বিদ্যার সাহায্যে নারীরা এখানে ‘উত্তম সন্তান' প্রসব করে৷ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে কয়েক হাজার এমন শিশু জন্মদানের প্রকল্প হাতে নিয়েছি আমরা৷''
শুদ্ধি পদ্ধতি
আরোগ্য ভারতীর চিকিৎসকরা বলছেন, তাদের এই কাজে অনেকেরই উৎসাহ পাচ্ছেন৷ এই শিশুদের জন্মের আগে তিন মাসের শুদ্ধি সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ তিথি দেখে তারা স্বামী-স্ত্রীকে সহাবাসের সময় ঠিক করে দেন৷ স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর আর স্বামীর সঙ্গে মিলিত হতে পারবে না৷ এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে৷ সন্তান প্রসবের আগ পর্যন্ত আরোগ্য ভারতীর চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলতে হবে অক্ষরে অক্ষরে৷ শুদ্ধি সময়কালে বাবা-মায়ের জীনগত যত সমস্যা আছে সেগুলো থেকে মুক্তি পায় শিশু অর্থাৎ পরিশুদ্ধ হয় বলে দাবি ঐ চিকিৎসকদের৷
অবৈজ্ঞানিক ও ধান্দাবাজি
মূল ধারার চিকিৎসকরা এই পদ্ধতিকে ভাওতাবাজি এবং ধান্দাবাজি উল্লেখ করে বলেছেন এর কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই৷ তারা বলছেন এই চিকিৎসকরা আয়ুর্বেদ এর নীতিও অনুসরণ করেন না৷ গাইনোকলোজিস্ট ডক্টর পুনিত বেদী বললেন, এটা মানুষের চোখে ধুলো দেয়া৷
হিন্দু ধর্মে বর্ণভেদ আছে বিধায় অনেকেই নিজেদের উচ্চ বংশ হিসেবে বিশ্বাস করে৷ হিন্দু মৌলবাদীরাও তাদের সেই চিন্তাকে আরো উসকে দিয়ে এই প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে৷ আর এখনও পর্যন্ত এমন কোনো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি যে এই উত্তম সন্তানরা সাধারণ শিশুদের থেকে আসলেই ভিন্ন কিনা৷ তবে আরএসএস-এর কারিশমা মোহন দাস নারওয়ানি বললেন, এটা প্রমাণ করতে হলে কয়েকটা বছর সময় লাগবে৷ আমাদের মূল লক্ষ্য হলো ভারতকে শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করা৷
তবে ভারতীয় গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা যেন নাৎসী নাটকের কোনো অধ্যায়ের বাস্তব রূপ৷
মুরালী কৃষ্ণণ/এপিবি
বন্ধু, প্রতিবেদনটি কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷