শিক্ষক অবমাননায় ক্ষুব্ধ শিক্ষক সমাজ
১৮ মে ২০১৬শিক্ষকদের বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে বিবৃতির মাধ্যমে তাদের অবস্থান জানিয়েছে৷ শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার শিক্ষক অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে তারা বড় কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যাবেন৷
নারায়ণগঞ্জ শিক্ষক সমিতির সভাপতি ব্রজেন্দ্র নাথ সরকার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শিক্ষকের এই অপমান পুরো জাতির অপমান৷ এটা একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়৷ আমরা এই অপমান বসে বসে দেখব না৷ আমরা, এখানকার শিক্ষকরা এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছি৷ বুধবার আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারক লিপি দেবো৷ এরপর আমরা বৈঠক করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘একজন শিক্ষককে যেভাবে অপমান করা হয়েছে তার প্রতিকার করতেই হবে৷ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে৷''
নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তের বিরুদ্ধে ধর্ম নিয়ে কটূক্তির গুজব ছড়িয়ে তাঁকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করার শাস্তি দেয়ার পরও অবশ্য ঘটনা সেখানেই থেমে থাকেনি৷ নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক সমিতির নেতা সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এরইমধ্যে সেই শিক্ষককে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার খবরও আমারা পেয়েছি, যা আরো দুঃখজনক৷ আমরা চাই এ নিয়ে আর যেন কোনো বাড়াবাড়ি না করা হয়৷ সরকার তদন্ত করে শিক্ষক অবমাননার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে৷ আমরা আশ্বস্ত হতে চাই৷''
বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট-এর প্রেসিডেন্ট ড. কাজী ফারুক আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা মঙ্গলবার বৈঠক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি৷ আমরা নিজেদের বিষয় নিজেরাই অনুসন্ধান করে দেখতে চাই৷ আমাদের তদন্ত শেষে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷''
শিক্ষক অবমাননার ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ‘‘একজন শিক্ষক যদি কোনো অপরাধ বা আইনবিরুদ্ধ কাজ করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিভাগীয় এবং আইনগত প্রক্রিয়া আছে৷ কিন্তু একজন শিক্ষককে অন্যায় অপবাদ দিয়ে যেভাবে অপমান করা হয়েছে তা ক্ষমাহীন অপরাধ৷ এই অপরাধ শাস্তির বাইরে থাকতে পারে না৷ আমরা শিক্ষক সমাজ এই অপরাধের শাস্তি চাই৷ তাঁকে অবমাননার মধ্য দিয়ে পুরো শিক্ষক সমাজেরই অবমাননা হয়েছে৷''
আলাদাভাবে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে ড. কাজী ফারুক আহমেদ বলেন, ‘‘সরকারি তদন্ত কমিটি তাদের মতো কাজ করবে৷ আর আমাদের তদন্ত কমিটিও স্বাধীনভাবে কাজ করবে৷ এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷ আমরা আমাদের দিক থেকে প্রকৃত ঘটনা খতিয়ে দেখতে চাই৷''
শ্যামল কান্তি ভক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘বরখাস্ত কোন প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে, তার ভিত্তি কী আমরা তা জানতে চাই৷ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে কিছু করা হলে তা মানা হবে না৷''
পাবলিক বিশ্ববিদ্যায়গুলোর শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনও নারায়ণগঞ্জে শিক্ষকের মর্যাদাহানির ঘটনায় ক্ষুব্ধ৷ সংগঠনটির মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নারায়ণগঞ্জে এক শিক্ষককে চরম অবমাননার ঘটনাপ্রবাহ লক্ষ্য করছি৷ এরই মধ্যে এর প্রতিবাদে বিবৃতি দিয়ে আমরা আমাদের অবস্থান জানিয়েছি৷ আমরা বলেছি, ওই শিক্ষকের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা বর্বরতা এবং অসভ্যতা৷ আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষক অবমাননার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি৷''
ড. এ কে এম মাকসুদ কামাল আরো বলেন, ‘‘আমরা দু-একদিনের মধ্যেই জরুরি বৈঠক ডেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব৷ একজন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে শিক্ষক অবমাননার ঘটনাটি ঘটেছে৷ এটা অনেক বড় লজ্জার ঘটনা৷ ওই সংসদ সদস্য যত প্রভাবশালীই হোক না কেন তাকেও আইনের আওতায় আনতে হবে৷''
শিক্ষক নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা এখনো সরকার, তথা শিক্ষামন্ত্রণায় শিক্ষক অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় তা দেখার অপেক্ষায় আছেন৷ যদি অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে শিক্ষকরা বড় কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি দেবেন৷ আর এই কর্মসূচির ব্যাপারে সব ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা এক হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন৷
প্রসঙ্গত, গত ১৩ মে ধর্ম নিয়ে কটুক্তির গুজব ছড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানার পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠ-বস করানো হয়৷ স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের প্রত্যক্ষ তদারকিতে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন নজিরবিহীন ‘শাস্তি' কার্যকর করা হয়৷
অথচ বাস্তবে প্রধান শিক্ষক ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেননি৷ কয়েকদিন আগে তিনি দশম শ্রেণির এক ছাত্রকে থাপ্পর দিয়েছিলেন৷ সেই ঘটনার সুযোগে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটিতে তাঁর বিরোধী গ্রুপের সদস্যরা ধর্ম নিয়ে কটূক্তির গুজব ছড়ায়৷ মসজিদের মাইক ব্যবহার করে এই গুজব ছড়িয়ে স্কুলে লোক জড়ো করা হয়৷ এ সময় শিক্ষককে প্রহার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে৷ সবশেষে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান সেখানে গিয়ে শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে কান ধরে ওঠ-বস করান৷
নারায়ণগঞ্জের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্ত কি যথোপযুক্ত বিচার পাবেন? আপনার মতামত জানান, লিখুন নীচের ঘরে৷