রাজাকারের তালিকা তৈরি করছে কে?
১৩ ডিসেম্বর ২০১৯গত এপ্রিলে রাজাকারের তালিকা প্রকাশের বিষয়টি সামনে আসে৷ ২৮ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতন-ভাতা নেওয়া রাজাকারদের তালিকা জেলা প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহের সুপারিশ করা হয়৷ ২১ মে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়৷
গত ২৮ আগস্ট আবারো তালিকার পঠানোর জন্য তাগিদ দিয়ে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়৷ প্রথম চিঠিতে শুধু তালিকা সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল৷
তবে এখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে কোনো তালিকা পায়নি বলে জানানো হয়েছে৷ আর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ও জেলায় জেলায় চিঠি দিয়ে তেমন সাড়া পায়নি৷ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম আরিফ-উর-রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বলা হয়েছিলো একটি তালিকা তৈরির জন্য জেলা প্রশাসকদেরও বলার কথা৷ তারা হয়তো একটা তালিকা করেছে৷ কিন্তু আমার হাতে সেই তালিকা আসেনি৷
এখানে ক্রাইটেরিয়া কি হবে, কিভাবে তালিকাভূক্ত হবে-এনিয়ে এখানো সিদ্ধান্ত হয়নি৷ মন্ত্রী মহোদয় হয়তো তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিতে পারেন দু-একটি জায়গায়৷ অনেকে হয়তো সেই রেফারেন্সে কথা বলতে চান৷ তালিকা যেহেতু আমার হাতে আসেনি তাই তালিকার ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না৷'' রাজাকারের তালিকা তৈরিতে কি নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘আমি এখনো এ ব্যাপারে খুব একটা ভালো জানি না৷ আমারা জেলা উপজেলা থেকে যে তালিকা চেয়েছিলাম ওদের লিস্টেড যেগুলো তার রেসপন্স খুব কম৷ বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে ২৭০ জনের একটা তালিকা আমরা পেয়েছি৷ কোনো কোনো জেলা উপজেলা থেকে একটা- দুইটা নাম এসেছে৷''
এই তালিকার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে দেয়া হয়েছে অতিরিক্ত সচিব আবুবকর সিদ্দিককে তিনি কাজের অগ্রগতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি৷ তবে মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হলেও কাজের অগ্রগতি নেই৷ কারণ রাজাকারের সংজ্ঞা নিয়ে জটিলতা আছে৷ কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই৷ আর দালাল আইনে যারা ক্ষমা পেয়েছে তাদের ব্যাপারে কি করা হবে তাও বলা হয়নি৷ সবচেয়ে বড় কথা হলো কাজটি কোথা থেকে শুরু হবে আর কেথায় শেষ হবে তা পরিষ্কার নয়৷ ফলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানো ছাড়া আর কোনো কাজ এগোতে পারেনি৷
এদিকে আর মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শাজাহান খান বলেন,‘‘আমরা ১৬ ডিসেম্বর থেকে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ শুরু করবো৷ কাজ চলছে৷''
কতজনের তালিকা ১৬ ডিসেম্বরে প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,‘‘এটা জামুকার (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) মহাপিরচালক বলতে পারবেন৷ তারা কাছে তালিকা জমা আছে৷''
কিন্তু জামুকার মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,‘‘এই তালিকা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথা, আলোচনা বা বৈঠক হয়নি৷ আর এটার সঙ্গে আমরা যুক্ত নই৷''
গত ১ ডিসেম্বর সংসদীয় কমিটি জানিয়েছিলো জামুকার সঙ্গে এই তালিকা চূড়ান্ত করতে ১০ ডিসেম্বর বৈঠক হবে৷ কিন্তু এধরনের কোনো বৈঠক হয়নি বলে জানান জামুকার মহাপরিচালক৷
সংসদীয় কমিটির ১ ডিসেম্বরের বৈঠকেই তালিকার কাজের অগ্রগতি প্রতিবেদন পেশ করা হয়৷ জানানো হয়, চাঁদপুর থেকে নয় জন, মেহেরপুরে ১৬৯ জন, শরীয়তপুরে ৪৪ জন, বাগেরহাটে এক জন এবং নড়াইল থেকে ৫০ জন রাজাকারের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে৷ খাগড়াছড়ি, মাগুরা, শেরপুর, গাইবান্ধা ও যশোরের শার্শা উপজেলায় কোনো বেতনভোগী রাজাকার ছিল না৷
কয়েকজন জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে জানাগেছে তারা রাজাকারের তালিকা পাঠানোর জন্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি তারা পেয়েছেন৷ তবে তারা ঠিক জানেন না কবের মধ্যে তালিকা পাঠাতে হবে বা কবে প্রকাশ করা হবে৷ সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল হক জানান, ‘‘আমরা চিঠি পাওয়ার পর তালিকার কাজ শুরু করেছি৷ তৈরি হলেই পাঠিয়ে দেব৷''
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক অবশ্য ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমাদের হাতে ২০ হাজারের একটি তালিকা আছে সেটা আমরা যাচাই বাছাই করছি৷ ১৫ ডিসেম্বরে আশা করি আমরা প্রথম দফার তালিকা প্রকাশ করব৷ আমরা চেষ্টা করছি , দেখি কি করা যায়৷''
তিনি নিশ্চিত করেন ১৬ ডিসেম্বর নয় ১৫ ডিসেম্বর প্রথম দফা তালিকা প্রকাশ করা হবে৷